বেতন ও চাকরির অনিশ্চয়তা, তবুও পথচলা সংবাদকর্মীদের
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা ১৯ জুন ২০২০) : কামুর প্লেগ উপন্যাসে রেমন্ড র্যামবার্ট নামের এক সাংবাদিকের চরিত্র আছে। প্যারিস থেকে এসে মহামারি সংক্রমিত এলাকা ওড়ানে আটকা পড়েছিলেন। শহর থেকে বের হওয়ার নানা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। একপর্যায়ে চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগও করেন। ঠিক পালিয়ে যাওয়ার রাতে র্যামবার্টের মনে হলো, আসলে শেষ পর্যন্ত মহামারি তো এড়ানো যাবে না, এর মধ্যেই বেঁচে থাকতে হবে। সাংবাদিক র্যামবার্ট প্লেগ মোকাবিলায় ওড়ান শহরেই সবার সঙ্গে থেকে যাওয়ার মনস্থ করেন।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অল্প অল্প করে প্রবেশ করে এখন পুরো বাংলাদেশকেই আক্রান্ত করে ফেলেছে। আর এই মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীরা প্রথম দিন থেকেই সেই রেমন্ড র্যামবার্টের মতো কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা মোকাবিলায় বিশ্বজুড়েই সাংবাদিকেরা এখন সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের সারিতে।
করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় তাকে বলা হচ্ছে ‘প্যানডেমিক’ বা অতিমারি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া আরেক প্রাদুর্ভাবের নাম ‘ইনফোডেমিক’ বা অতিরিক্ত পরিমাণে তথ্যপ্রবাহ। নানা ধরনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ সচেতন হয়ে করোনা মোকাবিলায় প্রয়োজন সঠিক ও বিশ্বাসযোগ্য উৎসের নির্ভরযোগ্য সংবাদ। আর এই প্রয়োজন থেকেই সম্মুখ সারিতে দাঁড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং তা প্রকাশ বা প্রচার করে যাচ্ছেন দেশের গণমাধ্যমকর্মীরা।
এমনিতেই বাংলাদেশে সাংবাদিকদের নানা প্রতিবন্ধকতা ও ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি আঘাত আসে পদে পদে। এমনকি মহামারির প্রাদুর্ভাবের মধ্যে অনেক কিছু বন্ধ থাকলেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত থেমে থাকেনি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রতিমুহূর্তে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা এবং স্থবির অর্থনীতির কারণে ভবিষ্যৎ নিয়ে সীমাহীন অনিশ্চয়তা।
করোনা মোকাবিলায় মানুষকে সচেতন করা ও প্রকৃত সত্য তুলে ধরার গুরুত্বপূর্ণ কাজটিই করে যাচ্ছেন আমাদের সংবাদকর্মীরা। তাঁরা হাসপাতালের সামনে বসে থাকছেন, চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার মন ভালো করা সংবাদ প্রচার করছেন, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া মানুষগুলোর কথা তুলে আনছেন, একই সঙ্গে নানা অব্যবস্থার কথাও বলছেন। ঝুঁকি, আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও আমাদের সংবাদকর্মীরা নিরলসভাবে তাঁদের কাজটি করছেন, ভবিষ্যতেও করবেন। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা গণমাধ্যমের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবেন, এমন প্রত্যাশা দেশের সকলের।