প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলেন খালেদা

Khaleda jia খালেদা জিয়া khulna খুলনারিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, খুলনাঃ ক্ষমতাসীনদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় দাবি করে গণতন্ত্র রক্ষায় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

রোববার খুলনায় এক জনসভায় তিনি বলেন, “সরকার এমনভাবে সংবিধান সংশোধন করেছে, যাতে তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকতে পারে। তাদের অধীনে কোনোভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই প্রশাসন বলেন, পুলিশ বলেন, আনসার-বিডিপি, মিলিটারি বলেন, আমি গণতন্ত্র রক্ষায় সবার সহযোগিতা চাই।”

জেলা সার্কিট হাউজ মাঠে ১৮ দলীয় জোটের এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপি কেন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়- এর ব্যাখ্যা করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “এই সরকার প্রশাসন, বিচার বিভাগ, ডিসি-এসপি-টিএনও, পুলিশ, সেনাবাহিনী সব কিছু দলীয়করণ করে ফেলেছে। তাদের অধীনে নির্বাচন কীভাবে সম্ভব হবে।”

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলে প্রশাসন তার কথাই শুনবে বলে দাবি করেন খালেদা।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বর্তমান নির্বাচন কমিশনে দলীয় লোকজনকে বসানো হয়েছে। এই কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ ও মেরুদণ্ডহীন প্রতিষ্ঠান। তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।”

ভোটার তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম ও গরমিলের কথাও উল্লেখ করেন বিরোধী দলীয় নেতা।

তিনি বলেন, “যারা একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা  করতে পারে না, তারা কীভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করবে।”

খালেদা জিয়া বলেন, “আমরা আজ কোনো নির্বাচনী বক্তব্য দিতে আসিনি। তবে এটা ঠিক খুলনায় তারা কোনো উন্নয়ন করেনি। বিএনপি আমলে আমরা অনেক উন্নয়ন করেছি। খুলনা শিল্প নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আজ সেই নগরীতে পাটশিল্প ধ্বংস করে দিয়েছে তারা।”

ক্ষমতায় গেলে খুলনাকে আবার শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন তিনি।

সরকারের দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়ার কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, “দক্ষিণাঞ্চলে জনগণের দাবি পদ্মাসেতু আমরা নির্মাণ করবো। এটি একটি নয়, দুইটি পদ্মাসেতু হবে। একটি মাওয়া অন্যটি দৌলতদিয়া প্রান্তে।”

বিএনপি খুলনায় একটি ইপিজেড ও মংলা বন্দর আধুনিকায়ন করবে বলেও অঙ্গীকার করেন বিরোধী দলীয় নেতা।

গত ৫ জুন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জোট প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনিকে মেয়র নির্বাচিত করায় খুলনাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিরোধী দলীয় নেতা।

খালেদা জিয়া বলেন, “বর্তমান সরকার দেশে মানুষের কোনো উন্নয়ন করেনি। তারা লুটপাট করতে ক্ষমতায় বসেছে। ৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক তারা দেউলিয়া করে দিয়েছে। সোনালী ব্যাংকের অবস্থা এমন যে একে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ৩০৯ বছর সময় লাগবে।”

“আজ দেশ ডাকাতের হাতে পড়েছে। এরা সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যেতে চায়। আওয়ামী লীগে দেশটাকে ফোকলা ও দেউলিয়া করে দিয়েছে।”

বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অভিযানের মাধ্যমে আলেমদের ‘হত্যার’ জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, “সরকারের হাত রক্তে রঞ্জিত হয়ে আছে।  আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। তাদের হাতে মানুষ নিরাপদ নয়।”

সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেন, সাড়ে চার বছরে ১৮ জন সাংবাদিক হত্যা হয়েছে। কোন হত্যার বিচার হয়নি।

খালেদা জিয়া বলেন, “এই সরকার অধ্যাপক ইউনূসসহ সন্মানিত ব্যক্তিদের নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করছে। খারাপ ভাষায় তাদের অপমান করা হচ্ছে। গ্রামীণ ব্যাংককে দলীয়করণে করার চেষ্টা চলছে। সরকারকে বলব- গ্রামীণ ব্যাংককে দলীয়করণ বন্ধ করুন। নইলে আপনারা জনগণের কাছে ধিকৃত হবেন।”

পোশাক শিল্পের অস্থিরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আজ পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে। নৌমন্ত্রীর দায়িত্ব নয়, তারপরও তিনি এখন পোশাক শিল্প নিয়ে কথা বলছেন। এই শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি করে সরকার অন্য একটি দেশের হাতে পাট শিল্পের মতো এই পোশাক শিল্প তুলে দিতে চায়।”

খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে আগামীতে ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা খাতে উন্নয়ন, মাদকদ্রব্য নির্মূল, দুর্নীতি দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান এবং জঙ্গিবাদ নির্মূলে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

Facebook
ব্রেকিং নিউজ