তবুও পরাজয় এড়াতে পারেনি আ’লীগ

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  চতুর্থ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনে বিপর্যয়ের ধকল সামলাতে দ্বিতীয় পর্বে আদা-জল খেয়েই মাঠে নেমেছিলো তারা। নানা কৌশল, ব্যাপক প্রস্তুতি, ক্ষমতার উত্তাপ আর প্রশাসনিক সহায়তা- কোনো ম্যাকানিজমেই ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা। গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ভরাডুবি ঠেকালেও পরাজয় এড়ানো সম্ভব হয়নি।

এদিকে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে বেশ কিছু উপজেলায় কেন্দ্র দখল, দলীয় এজেন্টদের  বের করে দেওয়া, প্রশাসনকে ব্যবহার করে সরকারি দলের প্রভাব বিস্তারসহ নানা অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। তবে শেষ পর্যন্ত ফলাফলে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা এগিয়ে থাকায় দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা সন্তুষ্ট বলে জানা গেছে।

দ্বিতীয় ধাপে ১১৫টি উপজেলার মধ্যে ১১১টির ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫০টিতে বিএনপি ও ৪৪টি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী-সমর্থিত প্রার্থীরা আটটি উপজেলায় জয়লাভ করেছেন। বিএনপি-জামায়াত একত্রে ৫৮টি উপজেলায় বিজয়ী হয়েছে। জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মাত্র একটি উপজেলায় জয়লাভ করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের অন্য শরিক দলের কেউ জয়ের মুখ দেখেননি।

১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৯৭টি উপজেলার মধ্যে বিএনপি ৪৪ ও জামায়াত ১২টিতে জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ ৩৪ ও জাতীয় পার্টি একটিতে জয়ী হয়। দুই ধাপে বিএনপি-জামায়াত মোট ১১৪টি এবং আওয়ামী লীগ ৮০টি উপজেলায় জয়লাভ করল।

জাতীয় নির্বাচন বর্জন করলেও স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় উপজেলায় অংশ নিচ্ছেন ১৯ দলীয় জোট সমর্থক প্রার্থীরা। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ব্যাপক সাফল্যের পর জোটের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল সরকারের প্রতি জনআস্থা নেই এটি ভোটে প্রমাণিত হয়েছে। সুষ্ঠু ভোট হলে শতকরা ৫ ভাগের বেশি উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা জয়ী হতে পারতেন না। একইসঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয় বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে। বিশেষ করে ২৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর জয়ে টনক নড়ে ক্ষমতাসীন দলের। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে নামেন সরকারি দলের নেতা কর্মীরা। স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাব প্রতিপত্তির মাত্রা ছাড়িয়ে চলে কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের মহোৎসব। অন্তত ১৩টি উপজেলায় দুপুরের মধ্যে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন প্রার্থীরা। ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ তোলা হয় বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে।

এমন জোর জবরদস্তির মধ্যেও নির্বাচনের ফল নিজেদের অনুকূলে রাখতে পারেনি ক্ষমতাসীন দল। বরং বিরোধী  জোটের প্রার্থীরা বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন নির্বাচনের ফলে। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ কিছুটা ব্যবধান কমালেও ভাইস চেয়ারম্যান পদে বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। কার্যত এ নির্বাচনের ফলে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোট তৃণমূলের সমর্থনের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকায় চাঙ্গা রয়েছে জোটের নেতাকর্মীদের মনোবলও। এটিকে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য ধাপের নির্বাচনে ফল নিজেদের অনুকূলে রাখারও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

তবে প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচন বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এর পেছনে সরকারি দলের সদিচ্ছার অভাবের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকেও দায়ী করছেন অনেকে।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এ নির্বাচনে কোন দল জয়লাভ করল, তার চেয়েও বড় কথা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে৷ এতো কিছুর পরও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিভাবে বললেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে? টেলিভিশনে, পত্র-পত্রিকায় মানুষ দেখেছে যে নির্বাচনে কী পরিমাণ অরাজকতা হয়েছে৷

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ