মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে সফটওয়্যার

সাইফ মাহমুদ, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ   মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রমকে আরো তরান্বিত করতে নতুন গোএএমএল সফটওয়্যার চালু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে এখন থেকে ব্যাংকসহ সকল রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থার কাছ থেকে অনলাইনে তাদের নগদ লেনদেন প্রতিবেদন (সিটিআর), সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন (এসটিআর), অভিযোগ গ্রহণ ও তা বিশ্লেষণ করতে পারবে। ফলে এ সফটওয়ারের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যাবস্থা নিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এ সফটওয়ার ব্যবহার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা, বিএফআইইউ এর উপ-পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ –এর মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ, সিআইডি’র ডিআইজি সাইফুল ইসলাম এবং দুদকের পরিচালক মনিরুজ্জামান প্রমুখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বর্তমানে কোনো একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয় বরং এটি বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ দেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। বিএফআইইউ রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্যে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তথ্যাদি প্রেরণ করছে।

গভর্নর  আরও বলেন, মুদ্রা পাচার ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশ আইসিআরজি প্রক্রিয়া হতে অব্যাহতি পেয়েছে। এফএটিএফ এর ‘গ্রে-লিস্ট’ থেকেও আমরা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। এতদিন এ লিস্টে থাকায় এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এক শতাংশ পর্যন্ত চার্জ দিতে হতো। এখন এই চার্জ অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে বলে তিনি জানান। এ নিয়ে এখন থেকে ব্যাংকগুলো বিদেশী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কার্যকর ‘নেগোসিয়েশন’ করার দক্ষতা দেখাতে পারবে বলে তিনি আশা করেন।

মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণী সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) কে শক্তিশালী করার জন্যে কতগুলো সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে। সুপারিশমালায় বিএফআইইউ-কে শক্তিশালী করতে বিশ্লেষণধর্মী সফটওয়্যার ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া হয়। সাম্প্রতি অর্থমন্ত্রীকে  লিখিত এফএটিএফ এর সর্বশেষ পত্রেও বিএফআইইউ-কে শক্তিশালী করার জন্যে তাগিদ দেয়া হয়। বিএফআইইউকে একটি আধুনিক এবং মান নিশ্চিত করণ ও আন্তর্জাতিক সুপারিশমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে  এই সফটওয়্যাররের কার্যক্রম চালু করা হল।

সাইফুল ইসলাম বলেন, সন্ত্রাসের প্রধান উৎস হলো টাকা। আর এ টাকা সংক্রান্ত তথ্য সহজে কেউ প্রকাশ করতে চায় না। এ সফটওয়ারে সব ধরণের তথ্য থাকার ফলে সিআইডি’র তদন্ত কাজ অনেক সহজ হবে। টাকার উৎস এবং লেনদেন সনাক্ত করা সম্ভব হলে বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ১৮টি দেশ এ সফটওয়ার ব্যবহার করছে। গত বছর পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাংলাদেশের সাতটি ব্যাংকে অন্তর্ভূক্ত করে এ প্রকল্প চালু করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সব ব্যাংকে এ সফটওয়ারে রিপোর্ট প্রদানের জন্য বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ