সিইসির ওপর নাখোশ সরকার!
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হন। এ বিজয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় সরকার খুশি। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা অধিকাংশ এলাকায় পরাজিত হন। এ পরাজয়ের পেছনে প্রধান কারণগুলোর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও আমলে নিচ্ছে সরকার। সিইসির প্রতি আস্থার জায়গা নিয়েও শুরু হয়েছে নতুন হিসাব-নিকাশ। বিশেষ করে এ সময়ে হঠাৎ ছুটি নিয়ে সিইসির বিদেশ সফরকে কেন্দ্র করে সন্দেহটা আরও প্রকট হচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, উপজেলা নির্বাচন রেখে দেড় মাসের সফরে দেশের বাইরে গেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ। সারা দেশে যখন কয়েক ধাপে উপজেলা নির্বাচন চলছে, ঠিক তখনই সিইসির দেড় মাসব্যাপী সফর নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমনকি বেশিরভাগ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন বাকি রেখেই ‘যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সেনাপতির পলায়ন’ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। তেমনি বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিরোধী দলসহ নানা মহলের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ- সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ শুধু সরকার নয়, সরকারি দলেরও অনুগত। তিনি স্বাধীন নয় প্রভুভক্ত নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সরকারের নির্দেশনায় সাজানো হয় নির্বাচন পরিচালনার ছক। এ নির্দেশনার অংশ হিসেবে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়নি আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের। রিটানিং ও সহকারী রিটানিং অফিসার হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ইউএনওকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু সরকারি দলের অনেকেই মনে করেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ‘অদক্ষতায়’ সমস্ত ছক, পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যায়। তাই উপজেলা নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য সিইসিকে অনেকাংশে দায়ী মনে করে শাসক দল আওয়ামী লীগ।
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায়ও রেকর্ড সংখ্যক ভোট বাতিল হয়েছে। এ দফায় ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৫টি ভোট বাতিল করা হয়। এর আগে প্রথম দফায় ৪ লাখ ৬১ হাজার ৩৮৩টি ভোট বাতিল হয়।
সূত্র জানায়, বাতিল ভোটের হার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ। উপজেলা নির্বাচনে এত ভোট বাতিল হওয়ায় রীতিমতো শঙ্কায় পড়েছে সরকার। এত বেশি ভোট বাতিল না হলে এসব এলাকায় সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে পুনরায় নির্বাচন দিলে সে সব এলাকায় বিজয়ের সম্ভাবনা বিএনপি-জামায়াত জোটের। এ অনাকাঙ্খিত পরাজয়ের জন্য সিইসির ওপর ক্ষুব্ধ সরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিইসির ভূমিকায় হতাশ আওয়ামী লীগ। তার ওপর ক্ষুব্ধ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এ কারণেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ‘পরামর্শে’ সিইসি রকিবউদ্দিন ছুটিতে যান।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সিইসি সোমবার মাসব্যাপী ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্রের গেছেন। সকাল ৭টা ১০ মিনিটে টার্কিশ এয়ারলাইনসের টিকে-৭১৩ নম্বর ফ্লাইটযোগে নিউইয়র্কের উদ্দেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। মাসব্যাপী সফরে সিইসি যুক্তরাষ্ট্র থাকবেন। এর পরই এপ্রিলের শুরু থেকে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত তিনি নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা প্রকল্পবিষয়ক কাজে আরও প্রায় ১৫ দিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করবেন। সব মিলিয়ে সিইসি ব্যক্তিগত সফরসহ প্রায় দেড় মাস দেশের বাইরে থাকবেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, সিইসি সফরে রয়েছেন। তবে এপ্রিলের শুরুতে প্রকল্পবিষয়ক যে প্রোগ্রাম রয়েছে সেখনে সিইসিও যোগ দেবেন।
জানা গেছে, ২ মার্চ সফর নিয়ে সিইসির স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়। তাতে বলা হয়েছে- ‘৩ মার্চ থেকে আমি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করব। আমি না ফেরা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন।’ তবে ওই অফিস আদেশে সিইসি কত দিনের সফর গেছেন বা কবে দেশে ফিরবেন তা উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে, নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন- সারা দেশে যখন কয়েক ধাপে উপজেলা নির্বাচন চলছে, এমন সময়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিদেশ সফর জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করবে। সিইসির অনুপস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।
এ বিষয়ে নির্বাচন বিশ্লেষক, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একদিকে দেশে চলছে উপজেলা নির্বাচন অন্যদিকে সংরক্ষিত আসনেরও নির্বাচন রয়েছে। এমন সময় সিইসি দেশে থেকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করলে উত্তম হতো। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে যখন বিতর্ক উঠেছে, তখন নির্বাচন সুষ্ঠু করা নিয়ে কমিশনের মনোযোগী হওয়া উচিত ছিল।