আইন না মেনে ২৬ প্রকল্প অনুমোদন ইসি নীরব
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আইন অমান্য করে তফসিল ঘোষণার পর দুই দফায় ১১ হাজার ৩২৬ কোটি টাকার ২৬টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বিষয়টি জানা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন আইন শাখা থেকে জানা যায়, আইন অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী এলাকায় কোনো ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন বা কাজ শুরু করা সম্পূর্ণ্ অবৈধ। তাই তফসিল ঘোষণার পরপরই সব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ রাখতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে চিঠি দেয় ইসি।
কিন্তু বাস্তব চিত্রে দেখা যাচ্ছে থেমে নেই এসব উন্নয়ন প্রকল্প। কমিশন এ বিষয়ে কেন নীরব ভূমিকা পালন করছে- এমন প্রশ্ন করা হলে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবাররক এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রের কোনো উন্নয় প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকতে পারে না।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে উপজেলা নির্বাচন প্রভাবিত হচ্ছে। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এ কৌশল নিয়েছে সরকার।
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন চিঠি দিয়েই চুপ করে বসে আছে। সরাসরি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সরকারকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত দুটি একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মোট ২৬টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক, সেতু, কালভার্ট ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। ১ জানুয়ারি একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয় ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের। এর মধ্যে ছয়টি প্রকল্পই হচ্ছে সড়ক, সেতুসহ গ্রামীণ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো মধুমতি নদীর ওপর কালনা সেতু নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৫ কোটি টাকা। কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-মিঠামইন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি টাকা। পত্নীতলা-সাপাহার-রহনপুর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় ১২৮ কোটি টাকা। কানসাট-রহনপুর-ভোলাহাট সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ৩৩ কোটি টাকা। শহীদ মনসুর আলী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ৫৩ কোটি টাকা। বিরুলিয়া-আশুলিয়া সড়ক নির্মাণের ব্যয় ৫০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ২৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় একনেক বৈঠক। এতে অনুমোদন দেওয়া হয় মোট ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্প। তার মধ্যে সড়ক ও সেতুসহ গ্রামীণ অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট প্রকল্প হলো চারটি।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রকল্প উন্নয়ন বিষয়ে ইসিতে লিখিত অভিযোগ করেন ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তার লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী একরামুল হক উপজেলার গাড়ি, রঙিন পোস্টার ও কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়া তফসিলের পর সাত দিনে প্রায় ৬০টি রাস্তা ও ব্রিজ-কালভার্টের উদ্বোধন করেছেন। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ফুলগাজী ইউপির উত্তর দৌলতপুর গ্রাম্য সড়ক, আনন্দপুর ইউপির ডা. শামছুদ্দিন সড়ক, মুন্সীরহাট ইউপির একরাম চেয়ারম্যান সড়ক, বসন্তপুর ইউপির বসন্তপুর-গোপালবাড়ি সড়ক। অভিযোগে একরামুল হককে জয়নাল হাজারীর স্টিয়ারিং কমিটির সাবেক সচিব বলে উল্লেখ করা হয়। হলফনামায় তার বিরুদ্ধে ৩০টির বেশি মামলা রয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনও নিজের পক্ষে ব্যবহার করছেন। তার অভিযোগে রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকাসহ ইসিতে জমা দিয়েছেন। এ উপজেলায় ২৩ মার্চ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও যশোরের ঝিকরগাছা ও নারায়ণগঞ্জ সদর থেকে একই ধরনের অভিযোগ এসেছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ভারপ্রাপ্ত সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাচনের কারণে জাতীয় উন্নয়ন বন্ধ থাকতে পারে না। যদি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালায় বিধি নিষেধ আছে এ রকম কোনো প্রকল্প অনুমোদন হয় তাহলে অবশ্যই বিষয়টি দেখা হবে।
উল্লেখ্য, ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয় পর্বের উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এখন তৃতীয় পর্বের নির্বাচনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে, এ পর্বের ভোট হবে ১৫ মার্চ্। চতুর্থ পর্বের ভোট হবে ২৩ মার্চ্ এব্ং পঞ্চম পর্বেরটি হবে ৩১ মার্চ।