বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসীর ভয়ে তটস্থ ব্যবসায়ীরা
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ রাজধানীর মতিঝিল, খিলগাঁও ও সবুজবাগ এলাকার ত্রাস মোস্ট ওয়ানটেড শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিক র্যাব-পুলিশের ভয়ে ভারতে পালিয়ে থাকলেও তার নির্দেশেই চলছে চাঁদাবাজি। তার অনুগতদের অত্যাচারে এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীসহ নিরীহ মানুষ অতিষ্ঠ।
মানিকের নিজস্ব বাহিনীর ভয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন হাসান ইমরানুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী। এ বিষয়ে তিনি মামলা ও একাধিক জিডি করেছেন। তবে অনেকেই নিরবে চাঁদা দিয়ে যাচ্ছেন এ বাহিনীকে। কেউ প্রাণভয়ে মুখ খুলতে চান না।
ভুক্তভোগী শাহজাহানপুরের ‘স্টেপ এন্ড হিট’ নামের ব্যায়ামাগারের মালিক হাসান ইমরানুর রহমান এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, মানিকের ভয়ে ২০১২ সাল থেকে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এখনও মানিকের লোকজন প্রতিনিয়ত তাকে হত্যার হুমকি দেয়। এ বিষয়ে তিনি সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শাহজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।
তিনি জানান, চাঁদা না দেওয়ায় ২০১২ সালের ১৮ জুন সন্ধ্যায় মানিকের লোকজন আমার জিমনেসিয়ামে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে পুলিশ কমিশনার ও মতিঝিল জোনের ডিসির নির্দেশে শাহজাহানপুর থানার ওসি ফোর্স পাঠিয়ে তালা খুলে দেন। এ বিষয়ে শাহজাহানপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। থানা তা ডায়েরিভুক্ত করে। এরপরও আমাকে হত্যার হুমকি দিলে প্রাণ ভয়ে আমি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি আমার চাচাকে দেখাশোনা করতে দেই। আর আমি গ্রামে ও স্বজনদের বাসায় পালিয়ে বাস করতে থাকি। পরে আবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসা শুরু করলে মানিকের লোকজন আবার আমার খোঁজখবর নিতে থাকে। পরে ২০১৩ সালের ২০ অক্টোবর বিকেলে মানিকের সহযোগী খোকন ওরফে ঠাসকি খোকন, কামরুল, মাসুম ওরফে চুকখা, ফারুক, কল্লোল, শাহীন ও রায়হানসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জন আমার ভাইকে বলে, তোর ভাই ইমরানকে কইস মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে। আমাগো মানিক ভাইরে কালার করছে, হের পুলিশ বাপগো দিয়া ব্যবসার তালা খোলাইছে, আমাগো নামে থানায় অভিযোগ দিছে, হেরে গুলি কইরা লাশ কুত্তারে খাওয়ামু।
এ বিষয়ে আমি শাহজাহনপুর থানায় একটি জিডি করি। এরপর কামরুলের সহযোগী ফয়সালও বিদেশে পালিয়ে যায়। সেখানে বসেই সে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। সম্প্রতি ওই সন্ত্রাসী চক্র আবার আমাকে বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আমি একই থানায় আরেকটি জিডি করি।
শাহজাহানপুর থানার ওসি জাকির হোসেন মোল্লা এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, মানিক ও তার বাহিনীকে গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
কে এই মানিক?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিক ২০টির বেশি মামলার আসামি। ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন। ২৭১/১ উত্তর শাহজাহানপুরের এই মানিক ১৯৯১ সাল থেকে অপরাধ রাজ্যে প্রভাব বিস্তার করে। হত্যা, চাঁদাবাজি, মাদকব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। পরে ২০০১ সাল থেকে মানিক ভারতে অবস্থান নেয়।তবে ভারত থেকেই টেলিফোনে তার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় চাঁদাবাজি সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে সে। বিদেশ যাওয়ার পর তার এ অপরাধ রাজ্য পরিচালনা করছেন তার ফুফাতো ভাই মাসুম ওরফে চুকখা মাসুম, খালাত ভাই কামরুল ওরফে কামরুইল্লা এবং ফয়সাল ওরফে পঁচা ফয়সাল, তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী খোকন ওরফে টাসকি খোকন ও কল্লোল। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। কিছু দিন আগে মাসুম নারায়নগঞ্জ আড়াইহাজারে ডাকতি করতে গিয়ে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়। আর কল্লোল অস্ত্র পাচারকালে শাহজাহানপুর থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। জামিন পেয়ে কল্লোল ইতালিতে চলে যায়। সেখান থেকেই এ অপরাধ জগতের সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলা নিষ্পত্তির তদবির চালিয়ে যাচ্ছে সে। মানিক রাজধানীর মোল্লা মাসুম, বাহার, মামুন, এজাজ, কাওসার, বিল্লাল মাসুম, রাজিব, দর্পন হত্যা মামলার আসামি।