বহিষ্কৃতদের নেতৃত্বে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বহিষ্কৃতদের নিয়ন্ত্রণে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ। কলেজের কমিটি বা পদ না থাকলেও বহিষ্কৃত নেতাদের নেতৃত্বে ফুটপাত, মার্কেট ও লেগুনা স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে চলছে চাঁদাবাজি। মেহনতি মানুষের ঘামের টাকা চাঁদাবাজি করে নিচ্ছে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ফুয়াদ হোসেন পল্লব ও সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান সুইম।
গত ২৯ নভেম্বর রাতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ছাত্র নিহত হওয়ার পর ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়। পরে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের দপ্তর সম্পাদক রাসেল কমিটি স্থগিতের পাশাপাশি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ থেকে সাত নেতাকর্মীকে বহিষ্কারের বিষয়টি এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেন।
এরা হলেন স্থগিত কমিটির সভাপতি ফুয়াদ হোসেন পল্লব, সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান সুইন, সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম হেমায়েত, যুগ্ম-সম্পাদক ফয়েজ, বিজ্ঞান সম্পাদক উজ্জ্বল খান, কর্মী সালাউদ্দিন সুমন ও কৌশিক আহমেদ সুমন।
বহিষ্কারের ৩ মাস অতিবাহিত হলেও যে ছিনতাই ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রাণ দিতে হলো নিরীহ ছাত্র ফারুককে। সেই ছিনতাই, চাঁদাবাজি বিরামহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ।
কলেজ শাখা ছাত্রলীগকে লেগুনা স্টেশনকে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। এই টাকা একদিন ঢাকা কলেজ সভাপতি ফুয়াদ হোসেন পল্লব অন্য দিন সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান সুইমের পকেটে যায়। একইভাবে ভাগ করা হচ্ছে ফুটপাত, মার্কেটের চাঁদা। যদিও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের কারণে বর্তমানে তাদের ভর্তি বাণিজ্যে মন্দা যাচ্ছে। এ নিয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেছে তারা।
ছিনতাই সম্পর্কে মার্কেট কর্মচারি আশিকুল্লাহ এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, কয়েক দিন আগে রাত ৯টার দিকে এক গার্মেন্টস শ্রমিক বেতন নিয়ে বাসায় যাচ্ছিল, এমন সময় সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান সুইমের কয়েক জন কর্মী ইচ্ছাকৃতভাবে তার গায়ে ধাক্কা দেয়। তাকে (শ্রমিক) এই ধাক্কা দিলি কেনো বলে নিউমার্কেট ফুটওভার ব্রিজের ওপর নিয়ে যায়। তার কাছে থাকা ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ওই কর্মীরা। বিষয়টি ছাত্রলীগের নেতাদের জানানো হলেও এর কোন শুরাহা হয়নি। সে ঢাকা কলেজের সামনের গার্মেন্টসে কাজ করতো। এভাবেই চলছে প্রতিনিয়ত ছিনতায়ের ঘটনা।
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন শাহবাগে কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ঢাকা কলেজের নেতাদের বলেন, ছাত্রলীগ এতোটা বিপদে পড়েনি যে খুনি, ছিনতাইকারী, ধান্দাবাজদের নিয়ে রাজনীতি করতে হবে।
ঢাকা কলেজের বর্তমান কমিটি গঠনের পর থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে ৮-১০টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, সবকটি সংঘর্ষেই ৫-৬ রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়েছে এবং ২৫-৩০টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া চাপাতি, রামদা, বিভিন্ন ধরনের ছুরি, হকিস্টিক এবং লাঠিসোটা নিয়ে দু’গ্রুপের মহড়া নিত্যদিনের ঘটনা। সাম্প্রতিক ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মারামারির সময় জীবন নামে একজন কর্মী চাপাতির কোপে গুরুতর আহত হন। এছাড়া অপর একটি সংঘর্ষে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জুলফিকারের পায়ে গুলি লাগে। সর্বশেষ কলেজের মেধাবী ছাত্র ফারুক দু’গ্রুপের ক্রসফায়ারে পড়ে নিহত হন।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ নভেম্বর (শুক্রবার) গভীর রাতে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাকিব আল হাসান সুইমের দুই বন্ধু পলাশ ও অজ্ঞাত অপর একজন গ্লোব মার্কেটের সামনে ইয়াবা কিনতে যায়। এ সময় তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হেমায়েত এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক উজ্জ্বল। তারা হল শাখা সভাপতি ফুয়াদ হাসান পল্লবের অনুগত বলে জানায়। এ সময় তারা ওই দুজনকে মারধর করে মোবাইল এবং মোটা অঙ্কের টাকা ছিনিয়ে নেন। পরে সুইমের কাছে ওই দুজন অভিযোগ জানালে, তিনি বিচারের জন্য দুজনকে রুমে ডেকে পাঠান।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয় এবং সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে নর্থ হল এবং সাউথ হলের মধ্যে। শুরু হয় গোলাগুলি। মুহূর্তের মধ্যেই দুই গ্রুপের মধ্যে ঘটে যায় ৩০-৩৫ রাউন্ড গোলাগুলি। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে বিপুল পরিমাণ ককটেল। এ সময় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র ফারুক গোলাগুলির মধ্যে পড়ে নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ফারুক রংপুর বিভাগের প্রত্যন্ত পঞ্চগড় জেলা থেকে এসে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু নিমিষেই সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়।
এছাড়া মনোবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র রাকিব গুলিবিদ্ধ হন। ককটেলের আঘাতে আহত হন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সুলতান মাহমুদ ও সাজু। তাদেরকেও রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর বাইরে সামান্য আহত বেশ কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সুইম চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বিকার করেছেন। তিনি বলেন, এই ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। তবে বহিষ্কারের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।