ডিবি পরিচয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে অপহরণ
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ডিবি পরিচয়ে মেজর (অব.) সৈয়দ আবু জাফর নামে এক সেনা কর্মকর্তাসহ তার স্ত্রী শিল্পী আক্তার ও জামাতা সৈয়দ মাসুম আল হোসেনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। এ সময় জমির দলিলসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্রও নিয়ে যায় তারা।
তবে পুলিশ বলছে, ভুয়া পরিচয়ে তাদের অপহরণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে আদাবরের ৯ নম্বর রোডের ৭২৯ নম্বর বাসার দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে ডিবি পরিচয়ে দু’বার অভিযান চালায় ৪-৫ জনের একটি টিম। অভিযানের নামে তারা মেজর (অব.) আবু জাফরের জমিজমার মূল দলিল, ১৫টি মুঠোফোন ও দুই লাখ টাকা নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় আবু জাফরের ছেলে সৈয়দ শামসুল আরেফিন অভিযোগ নিয়ে আদাবর থানায় জিডি করতে গেলে আইনগত বাধ্যবাধকতার দোহাই দিয়ে তাকে ডিবি কার্যালয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়।
শামসুল আরেফিন সাংবাদিককে জানান, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি তাদের বাসায় যান। তাদের মধ্যে জহির ও মফিজুল নামে দু’জন ব্যক্তি ডিবির এসআই পরিচয় দেন। তাদের সঙ্গে একজন নারীও ছিলেন। তারা জানান, ২০১৩ সালের একটি মামলায় সৈয়দ আবু জাফরকে আটক করা হবে। এ সময় শামসুল আরেফিন আটকের কাগজ দেখতে চাইলে জহির তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বাসা তছনছ করে জমিজমার দলিল, দুই লাখ টাকা ও মুঠোফোন সেট নিয়ে নেন। চলে যাওয়ার সময় তারা সৈয়দ আবু জাফর ও তার মেয়ের স্বামী সৈয়দ মাসুম আল হোসেনকে ধরে নিয়ে যান।
এরপর রাত ৩টার দিকে ওই ডিবি কর্মকর্তারা আবারও তাদের বাসায় যান। সে সময় বাসার সামনে গণম্যাধ্যমের কয়েকজন কর্মী উপস্থিত থাকায় তারা দ্রুত আবু জাফরের স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যান।
তিনি আরেও জানান, বুধবার ভোর ৬টার দিকে এসআই জহির তাকে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে ডাকেন। টাকা নিয়ে গেলে তার বাবা, মা ও দুলাভাইকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান ডিবির ওই কর্মকর্তা। এসআই মফিজুলকে সকালে ফোন করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন বাসায় আছি। একটু পরে অফিসে আসেন। সরাসরি কথা হবে।
শামসুল আরেফিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘গুলশান ২ নম্বর এলাকায় তাদের প্রায় ২২ কাঠা জমি আছে। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ২১০ কোটি টাকা। এই জমি হাতিয়ে নিতে রাজনৈতিক নেতারা তাদের চাপ দিয়ে আসছিলেন। এসব কারণে তার বাবা-মা ও দুলাভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে সকালে আদাবর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে তা নেয়নি পুলিশ।
এ ব্যাপারে আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল ইমাম এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে অভিযোগ পেয়ে তাদের প্রথমে ডিবি কার্যালয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়। তারপর জিডির কথা বলা হয়। তাছাড়া এ ঘটনা সর্ম্পকে অবগত হওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানো হয়।
পুলিশের মোহাম্মাদপুর-আবাদর জোনের সহকারী কমিশনার শেখ রাজিবুল হাসান এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, অভিযোগ পেয়েই নিখোঁজ ব্যাক্তিদের মোবাইল নাম্বার ট্র্যাকিংয়ে পাঠিয়েছি। কললিস্ট দেখে বোঝা যাবে পূর্বশত্রুতার জেরে তাদের অন্য কেউ তুলে নিয়ে গেছে নাকি ডিবির কেউ নিয়ে গেছে। তবে স্বজনদের ভাষ্যমতে জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিলে, বিধায় ডিবি পরিচয়ে অন্য কেউ তাদের অপহরণ করতে পারে। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখছি।
এ বিষয়ে ডিবির (পশ্চিম) সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোহাম্মাদ তৌহিদুল ইসলাম এবং সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম বাকী বিল্লাহ এবিসি নিউজ বিডিকে অভিযান বা আটক সর্ম্পকে জানেন না বলে জানান।
ডিএমপির (মিডিয়া) সহকারী কমিশনার মো. আবু ইউসুফ এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, এ বিষয়ে কোনো তথ্য আমার জানা নেই।