রাজনৈতিক বিবেচনায় পুলিশ পদক!
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১৩ সালের পুলিশ পদক দেওয়ার কারণে সৎ, কর্মঠ ও সাহসী পুলিশ সদস্যরা বঞ্চিত হচ্ছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব পুলিশ সদস্যদের আবেদন করতে মৌখিকভাবে নিষেধ করে আবার তারাই আবেদন করে পদক বাগিয়ে নিয়েছেন। পদক তালিকায় একই পরিবারের অনেক পুলিশ সদস্যর নাম এসেছে। এরমধ্যে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করে বিপুল পরিমাণ উৎকোচ ও মামা-ভাগিনা গ্রুপের ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।
পুলিশ পদকের জন্য এবার গত বছরে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ও আহত পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের কয়েকজন সৎ ও কর্মঠ পুলিশ সদস্যদের নাম এসেছিলে এবং তাদেরই যাচাই-বাছাই করে পদক দেওয়ার কথা। অথচ তালিকা প্রস্তুতের পর দেখা যাচ্ছে ঊর্ধ্বতন এবং বিতর্কিতদের নাম। অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান ও আবদুল জলিল মণ্ডল, লালবাগের ডিসি হারুনুর রশীদ, ওয়ারীর এডিসি মেহেদী হাসান এবং এসি শিবলী নোমান বিতর্কিতদের তালিকায় শীর্ষে।
৬ মার্চ থেকে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে পদকে ভূষিতদের হাতে এই পদক তুলে দেবেন বলে পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে। ১ মার্চ পুলিশ সদর দফতরের এক প্রজ্ঞাপনে ১০৫ জনকে পদক দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। ৬-৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ ২০১৪। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর বর্তমান জনবল ১ লাখ ৫৪ হাজার।
গত বছরে (২০১৩) দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের যেসব সদস্যরা বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ১০৫ জনকে পুলিশ পদক দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে ১৬ জনকে মরণোত্তর বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), ২৯ জনকে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম), ২০ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-সেবা) এবং ৪০ জন রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) পাচ্ছেন।
২০১২ সালে ৬৯ জনকে পদক দেওয়া হয়েছিলে কিন্তু এবার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চসংখ্যক দেওয়া হচ্ছে ১০৫ জনকে। এর কারণ রাজনৈতিক, ৯০ জনকে পদক দেওয়া কথা থাকলেও এই বিবেচনায় আরও ১৫ জনকে পদক তালিকায় নাম উঠানো হয়। যার বেশির ভাগই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
পদক তালিকায় পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন ৩২ কর্মকর্তার নাম থাকায় যেসব নিন্মপদের সদস্যরা জীবনবাজি রেখে দেশের জন্য কাজ করে চলেছেন তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব পুলিশ সদস্য এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, আমরা সব ধরনের প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি এবং নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কাজ করি, অথচ প্রতিবছর পদক পান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই। এবার যেসব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদক পাচ্ছেন তারা হলেন র্যাবের ডিজি মোখলেছুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ, হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আছাদুজ্জামান, অতিরিক্ত কমিশনার (ডিএমপি) আবদুল জলিল মণ্ডল, শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি এসএম মনির-উজ-জামান, র্যাবের এডিজি কর্নেল জিয়াউল আহসান, এডিশনাল ডিআইজি (এসবি) মাহবুব হোসেন, র্যাবের অধিনায়ক মল্লিক ফখরুল ইসলাম, র্যাব-১২ এর অধিনায়ক জামিল আহমেদ, র্যাব পরিচালক লে. কর্নেল রিয়াজুর রহমান, উইং কমান্ডার মোফাজ্জল হুসাইন, ডিএমপির ডিসি (সদর দফতর) আনোয়ার হোসেন, মতিঝিলের ডিসি আশরাফুজ্জামান, ঝালকাঠির এসপি মজিদ আলী, নোয়াখালীর এসপি আনিসুর রহমান, নারায়ণগঞ্জের এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, এসবির বিশেষ পুলিশ সুপার ফরিদা ইয়াসমিন, র্যাব-৮ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফরিদুল আলম, র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সাঈদ মোহাম্মদ, র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কিসমত হায়াৎ, রাজবাড়ীর এসপি রেজাউল হক, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল হায়দার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপি মনিরুজ্জামান, ডিএমপির ডিসি শামীমা বেগম, লালবাগের ডিসি হারুন-অর-রশীদ, ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার পরিচালক (ডিসি) হাজী মাসুদুর রহমান, মাগুরার এসপি জিহাদুল কবির, তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার, র্যাবের উপপরিচালক মেজর মেহেদী হাসান, মেজর আবুল কালাম আজাদ ও মেজর মাহফুজ-উল-আমিন নূর।
বিপিএম-মরণোত্তর পাচ্ছেন নিহত ১৬ জন: গত এক বছরে দেশের টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সহিংসতা ও নাশকতায় পুলিশ বাহিনীর যেসব সদস্যরা নিহত হয়েছেন তাদের ১৬ জনকে দেওয়া হচ্ছে বিপিএম-মরণোত্তর পদক। চলতি বছর পদক পাচ্ছেন রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১৬ পুলিশ সদস্য তারা হলেন এসআই শাহজাহান (ডিএমপি), এসআই শরিফুল ইসলাম (ডিবি, ডিএমপি), নায়েক ফিরোজ খান (গোপালগঞ্জ), কনস্টেবল ফেরদৌস খলিল (ডিএমপি), জাকারিয়া (গোপালগঞ্জ), সিদ্ধার্থ চন্দ্র সরকার (আরএমপি), আবু তারেক (চট্টগ্রাম জেলা), কাজী জহিরুল হক (যশোর), জিএম ওমর ফারুক (হরিণাকুণ্ডু থানা), মফিজুর রহমান (খুলনা), মোজাহার আলী (রংপুর), আজিজুর রহমান (আরআরএফ), মো. বাবুল মিয়া (গাইবান্ধা), তোফাজ্জল হোসেন (গাইবান্ধা), হযরত আলী (গাইবান্ধা) ও খাজা নাসিরউদ্দিন আখন্দ (সৈয়দপুর রেলওয়ে)।
বিপিএম-সেবা পাচ্ছেন র্যাবের ডিজি মোখলেছুর রহমান (অতিরিক্ত আইজিপি), ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ, হাইওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি আছাদুজ্জামান মিয়া, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল, ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শেখ মারুফ হাসান, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনির-উজ-জামান, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান, স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত ডিআইজি মাহবুব হোসেন, র্যাব-৩ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মল্লিক ফখরুল ইসলাম, র্যাব-১২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি জামিল আহমদ, র্যাব সদর দফতরের পরিচালক (অপারেশনস) লে. কর্নেল রিয়াজুর রহমান, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) উইং কমান্ডার মোফাজ্জল হোসাইন, ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দফতর) আনোয়ার হোসেন, ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মহা. আশরাফুজ্জামান, ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মজিদ আলী, নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, স্পেশাল ব্রাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপার (প্ররক্ষা) ফরিদা ইয়াসমিন, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ওয়ারী) এসএম মেহেদী হাসান এবং অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সচিবালয় নিরাপত্তা) মশিউর রহমান।
রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পাচ্ছেন ডিএমপির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সাইফুর রহমান, র্যাবের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার রিপন মিয়া, শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম, হাজারীবাগ থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম, সাতকানিয়া থানার ওসি শেখ নেয়ামত উল্লাহ, ফুলতলা থানার সাবেক ওসি মামুন-অর-রশিদ, এসপিবিএনের ইন্সপেক্টর আলাউদ্দীন, শ্যামপুর থানার এসআই খন্দকার হেলাল উদ্দীন, রমনা থানার এসআই খান মোহাম্মদ জোবায়ের, আরএমপির পিএসআই মকবুল হোসেন, এসআই জাহাঙ্গীর আলম, মুজিবনগর থানার এসআই শামসুল মান্নান, সিএমপির সার্জেন্ট হেলাল উদ্দীন ভূঁইয়া, ডিএমপির এএসআই আবদুর রহিম মিয়া, পল্টন মডেল থানার এএসআই আবদুল হালিম, গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশের এএসআই আজিবর রহমান, ঝিনাইদহ পুলিশের এএসআই আজম মাহমুদ, দিনাজপুর জেলা পুলিশের এএসআই জাবেদ আলী, র্যাব-৯ এর এএসআই নাসিরউদ্দীন সরকার, খুলনা পুলিশ লাইনের নায়েক কেরামত আলী, র্যাব-৩ এর কর্পোরাল শামসুজ্জামান, নায়েক রুহুল আজম, ডিবির কনস্টেবল আজিজুর রহমান, ডিএমপির ট্রাফিক দক্ষিণের কনস্টেবল ফাইজুল ইসলাম, কনস্টেবল পিয়ারুল ইসলাম, আরএমপির কনস্টেবল হামিদুর রহমান, কনস্টেবল আনন্দ কুমার, কনস্টেবল তৌহিদুর রহমান এবং ফরিদপুর জেলা গোয়েন্দা শাখার কনস্টেবল বাকির হোসেন।
রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) পাচ্ছেন র্যাব-৮ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফরিদুল আলম, র্যাব-১১ এর লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কিসমৎ হায়াৎ, রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার রেজাউল হক, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শেখ রেজাউল হায়দার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান, ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার শামীমা বেগম, ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ, ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান, মাগুরার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির, ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, র্যাব সদরের উপ-পরিচালক মেজর মেহেদী হাসান, মেজর মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল-উল-আমিন নূর, র্যাব-১২ এর স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ মিরান হোসেন, পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাসিয়ান ওয়াজেদ, বিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আতিকুর রহমান মিয়া, পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম হাসানুল জাহীদ, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান, বরিশাল সিটি এসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেএমপির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার শেখ জয়নুদ্দীন, ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমান, সহকারী পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানা, সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম, র্যাব-৬ এর এএসপি গোলাম রব্বানী শেখ, র্যাব সদর দফতরের ক্যাপ্টেন নাহিদ আল আমিন, ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার এএম শিবলী নোমান, এসবির সহকারী পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম মিয়া, সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ গোলাম মাওলা, চকবাজার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক মুহাম্মদ আলমগীর ভূঁইয়া, ডিবির পরিদর্শক মেসবাহ উদ্দীন আহমেদ, সবুজবাগ থানার পরিদর্শক তাজুল ইসলাম, ডিবির পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার, খিলগাঁও থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ, ত্রিশাল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার, বাড্ডা থানার এসআই সৌমেন বড়ুয়া, মির্জাপুর থানার এসআই শ্যামল কুমার দত্ত, জয়দেবপুর থানার এসআই ইকবাল হোসেন, শিল্প পুলিশের এএসআই মুকুল মোহন কুণ্ড এবং ফরিদপুর জেলা পুলিশের কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম।
প্রতি বছরই অসীম সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ কাজ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও প্রশংসনীয় অবদানের জন্য পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন পদের সদস্যদের পদক দেয়া হয়। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-সেবা) ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) প্রদান করা হয়। পদকপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের এককালীন সম্মানী ভাতা দেওয়া হয়। এছাড়া বিপিএম পদকপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা আজীবন ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং পিপিএম পদকপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা ১ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পান।