হেরেই এশিয়া কাপ শেষ বাংলাদেশের
স্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নতুন বছরে জয়টা মরীচিকা হয়েই থাকল বাংলাদেশের। আরও একবার ধরা দিতে দিতেও দিল না জয় নামের ‘সোনার হরিণ’। এশিয়া কাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে বাংলাদেশ হারল ৩ উইকেটে। বাংলাদেশের ২০৪ রানের চ্যালেঞ্জ ম্যাথুজের ফিফটিতে লঙ্কানরা পেরিয়ে যায় ৬ বল বাকি থাকতে। তাই জয় ছাড়াই এশিয়া কাপ মিশন শেষ হল বাংলাদেশের।
অথচ গত আসরে রানার্সআপ হয়েছিল মুশফিকুর রহিমের দল! নিউজিল্যান্ডকে ‘বাংলাওয়াশ’ করায় এবার বাংলাদেশকে নিয়ে প্রত্যাশার পারদটা চড়েছিল চড়চড়িয়ে। সেই প্রত্যাশার বেলুন ফুটো করে বাংলাদেশ ‘লঙ্কাওয়াশ’ হয় ম্যাথুজের দলের সাথে। এবার এশিয়া কাপে সব ম্যাচ হেরে হল ‘এশিয়াওয়াশ’!
২০৪ রানের অল্প পুঁজি নিয়েও একটা সময় লড়াই জমিয়ে তুলেছিল বাংলাদেশ। ৮ রানে ৩ উইকেট নেয়ার পর ৭৫ রানে শ্রীলঙ্কার ৫ জনকে প্যাভিলিয়ানে পাঠিয়েছিল তারা। কিন্তু ম্যাথুজ,থিরিমান্নে,চতুরঙ্গ ডি সিলিভাদের দৃঢ়তায় সব ম্যাচে জয় নিয়েই ফাইনালে খেলার কৃতিত্ব দেখাল লঙ্কানরা।
অল্প রানের পুঁজি নিয়েও অবশ্য লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। ৮ রানে শ্রীলঙ্কার তিন উইকেট নিয়ে শুরুতেই ধাক্কা দেয় তারা। সেই চাপটা কাটিয়ে শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে ১৫৭ করায় ম্যাচটা হাতফস্কে যাচ্ছিল বাংলাদেশের। তবে ষষ্ঠ উইকেটে ম্যাথুজের সাথে ৮২ রানের জুটি গড়া চতুরঙ্গ ডি সিলভাকে ফিরিয়ে আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। ৫২ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৪৪ করা সিলভাকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান মাহমুদু্ল্লাহ। কিন্তু গলার কাঁটা হয়েছিলেন অধিনায়ক ম্যাথুজ। ১৯তম ওয়ানডে ফিফটি করে টেলএন্ডারদের সঙ্গে নিয়ে কোন অঘটন ঘটতে দেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ম্যাথুজ অপরাজিত থাকেন ৭৪ রানে।
৮ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর থিরিমান্নে ও প্রিয়ঞ্জন চতুর্থ উইকেটে গড়েন ৩৯ রানের জুটি। ২৪ করা প্রিয়ঞ্জনকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে জুটিটা ভাঙ্গেন জিয়া। অথচ এই জিয়াকে পাকিস্তানের সাথে বলই দেননি মুশফিক। সেই মুশফিকের মিসে সাকিবের বলে ২২ রানে থাকা প্রিয়ঞ্জন জীবনও পেয়েছিলেন আজ। প্রিয়ঞ্জন ফেরার পর ওপেনার থিরুমান্নেও বেশিক্ষণ ছিলেন না আর। আরাফাত সানির বল তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনসে রুবেলের অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন তিনি। ৬০ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৩৩ রানের ইনিংস আসে তার উইলো থেকে।
এই মিরপুরে বাংলাদেশ আগের ম্যাচেই করেছিল নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩২৬। তবে আজকের পিচটা আগের মত ব্যাটিং উদ্যান নয়। তাই রান নিতে যথেষ্ট লড়াই করতে হয়েছে দুদলকেই। পিচটা স্পিন বান্ধব হলেও পেসার আল আমিন স্বপ্নের শুরুই এনে দেন বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় বলেই উইকেটের পেছনে এনামুলের ক্যাচ বানিয়ে তিনি ফেরান কুশল সিলভাকে (০)। ভয়ংকর কুমার সাঙ্গাকারাকেও (২) নিজের পরের ওভারে নাসিরের অসাধারণ ক্যাচ বানিয়ে ফেরান আল আমিন। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়েই কিনা চাপে পড়েন অভিজ্ঞ মাহেলা জয়াবর্ধনের মত ব্যাটসম্যান। থিরিমান্নের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে কোন রান না করেই রান আউট হয়ে যান তিনি।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার শামসুর রহমান ও এনামুল হক ১৮ ওভারে গড়েছিলেন ৭৪ রানের জুটি। ইনজুরিতে পড়া ইমরুলের জায়গায় খেলতে নামা শামসুর রহমানকে (৫৭ বলে ৩৯) এলবিডব্লিউ করে জুটিটা ভাঙ্গেন মেন্ডিস। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আঘাত হানা মেন্ডিস সেই ওভারের শেষ বলে বোল্ড করেন মমিনুলকেও (১)। এরপর ডি সিলভা এলবিডব্লিউ করেন মুশফিককে (৪)। ভালো শুরু করেও আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এনামুল ৮৬ বলে ৪৯ করে পার্টটাইম স্পিনার প্রিয়ঞ্জনের বলে ক্যাচ দেন থিরিমান্নেকে।
৩২ বলে ২০ করা সাকিবকেও ফেরান প্রিয়ঞ্জন। ৭৪ রানে বিনা উইকেট থেকে ১১৯ রানে ৫ উইকেটে পরিণত হয় বাংলাদেশ। অর্থাৎ ৪৫ রানের ব্যবধানে টপঅর্ডারের পাঁচজন হারিয়ে বিপদে পড়ে মুশফিকের দল। নাসির ও মাহমুদুল্লাহ,দুজনই সমান ৩০ করলেও টেনে নিয়ে যেতে পারেননি স্কোরটা। তাই থামতে হয় ৯ উইকেটে ২০৪ রানে। জিয়াউর ১২,রাজ্জাকের জায়গায় খেলা সানি ২ আর শফিউলের বদলে সুযোগ পাওয়া রুবেল ফিরেন ০ রানে। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন লাকমল,মেন্ডিস,থিসারা ও প্রিয়ঞ্জন।