টাকা দিলেই সাংবাদিকরা লিখেন

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ   ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, সাংবাদিকদের ফ্রিডম হলো তাদের টাকা দিলেই লিখেন না দিলে লিখেন না। তিনি দৈনিক যুগান্তর ও কালের কন্ঠের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এই দৈনিক দুটি একে অপরের বিরুদ্ধে লিখছে।

বৃহস্পতিবার দৈনিক প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের রুলের উপর শুনানিতে তিনি এ কথা বলেন।শুনানিতে তিনি বার বার সাংবাদিকদের কটূক্তি করেছেন।

বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে দিনভর এ শুনানি চলে।

আদালতে মিজানুর রহমান খানের পক্ষে দুই সপ্তাহের সময় আবেদন করেন তার আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। পরে সোমবার আদালত অবমাননার অভিযোগে দেয়া রুলের জবাব দাখিলের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। একই সঙ্গে রুলের উপর শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন নির্ধারণ করা হয়।

রুলের পক্ষে শুনানিতে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ আদালত অবমাননার অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন, মিজানুর রহমান খান যে প্রতিবেদনটি লিখেছেন তা একটি উদ্দেশ্যমূলক এবং আদালতকে জনগণের সামনে হেয় করার জন্য করা হয়েছে।

ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন বলেন, জামিন নিতে আসা সাধারণ মানুষের কাছে চায়ের স্টলে বসা লোকটি জানতে চাইবে কত টাকায় জামিন হলো। তখন আমাদের অবস্থাটা কি দাঁড়ায়?

তিনি বলেন, আদালত অবমাননার অভিযোগে দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ছয় মাসের জেল দিয়েছিল আপিল বিভাগ। সেই হিসেবে মিজানুর রহমানের ছয় বছরের জেল হওয়া উচিত। কারণ তিনি মাহমুদুর রহমানের চাইতেও বেশি হস্তক্ষেপ করেছেন।

রোকন বলেন, দেশে সাংবাদিকদের পেশাগত কাজ নিয়ন্ত্রণে কোনো সংগঠন নেই। ফলে তারা যা খুশি তাই লেখে। সাংবাদিকরা মনে করে তারা আইনের ঊর্ধ্বে। তাদের যে স্বাধীনতা আছে তারা সেই স্বাধীনতার অপব্যাবহার করে অন্যকে হেয় করে। তারা টাকা নিয়ে রিপোর্ট লিখে অন্যকে হেয় করে। সাংবাদিকরা এখন নিজেদের অনেক শক্তিশালী মনে করে।

সম্প্রতি যুগান্তর ও কালের কন্ঠের সংবাদ প্রকাশের কথা উল্লেখ করে রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এক সংবাদপত্র অন্য সংবাদপত্রের কর্তৃপক্ষের স্বার্থের বিরুদ্ধে লিখে। এটাই হচ্ছে আজকে আমাদের সংবাদপত্রের লেভেল।

শুনানিতে সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানকে উদ্দেশ্য করে ব্যারিস্টার রফিক উল হক বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে তার অনেক চিন্তা। দেশের ভবিষ্যতের ব্যাপারে তিনি অনেক সচেতন। বিচার বিভাগ নিয়ে একের পর এক লিখেই চলছেন। এক-এগার সময় থেকে  শুরু করে তিনি অনেক লিখেছেন।

রফিক উল হক সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন জানান।

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, তিনি (মিজানুর রহমান খান) গণজামিনের বিরুদ্ধে লিখেছেন, কিন্তু গণগ্রেফতারের বিরুদ্ধে কিছু লেখেননি। আমি বুঝতে পারছি না  যে, তিনি কার স্বার্থ হাসিলের জন্য কাজ করছেন।

শুনানির এক পর্যায়ে ড. শাহদীন মালিক সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ওই অনুচ্ছেদে বলা আছে কারো সঙ্গে অমার্যাদাকর আচরণ করা যাবে না। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, আমরা কি কারো সঙ্গে কোনো অমার্যাদাকর আচরণ করেছি?

বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর বিরুদ্ধে এ মামলার শুনানির জন্য এ বেঞ্চে অন্য কোনো মামলার শুনানি হয়নি।

প্রসঙ্গত, বিচারাধীন বিষয়ে কলাম লেখায় গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে স্বশরীরে হাজির হয়ে আদালতের আদেশের ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছিল।

একই সঙ্গে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে কেন শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছিল হাইকোর্ট।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ