সিরিয়ায় যুদ্ধাপরাধের দায় বৃহৎ শক্তিগুলোর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় তৎপর হাজার হাজার বিদ্রোহী সেদেশকে ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে নিয়ে গেছে। ৭৫ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে ২০১৩ সালের ১৫ই জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ দেয়া হয়েছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে সপ্তমবারের মত জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হল। এবারের প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়া সিরিয়ার শরণার্থীদের অবস্থার চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।
সিরিয়ায় জাতিসংঘ তদন্ত কমিটির প্রধান পাওলো বানিরো এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সিরিয়ায় প্রকাশ্যভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং সেদেশে অমানবিক আচরণের সঙ্গে জড়িতদেরও বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, সিরিয়ায় অব্যাহত যুদ্ধাপরাধের দায় বৃহৎ শক্তিগুলোকেই নিতে হবে। জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ এলাকায় মানবিক ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রী পাঠানোর পথেও বাধা দিচ্ছে বিদ্রোহীরা। তারা ক্ষুধার মধ্যে ফেলে দিয়ে অবরুদ্ধ এলাকাবাসীদেরকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বহু শিশু তাদের পরিবার হারিয়েছে।
ইহুদিবাদী ইসরাইল সিরিয়ায় তৎপর সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া এবং ১৬০০’র বেশি সন্ত্রাসীকে চিকিৎসা দেয়ার কথা স্বীকার করার পর সন্ত্রাসীদের প্রতি ইসরাইল, পাশ্চাত্য ও কয়েকটি আরব দেশের সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে ইসরাইলের একজন পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে এবং ইসরাইল ভূখণ্ডেই এসব আহত বিদ্রোহীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও সম্প্রতি তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে আহত বিদ্রোহীদের চিকিৎসা দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। সম্প্রতি তিনি চিকিৎসাধীন আহতদের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য গোলান উপত্যকায় সফর করেছেন।
আল-কায়েদা সমর্থিত ইসলামিক স্টেট অভ লিভান্ট বা আইএসআইএল ও আল-কায়দার সন্ত্রাসীরা তিন বছর আগে পাশ্চাত্য ও কয়েকটি আরব দেশের অর্থ ও অস্ত্র সহায়তায় সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। বিদেশি মদদপুষ্ট এসব সন্ত্রাসীদের হামলায় এ পর্যন্ত সিরিয়ার হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং লাখ লাখ মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে।
ইসরাইলি দৈনিক মাআরিও সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতা আব্দুল্লাহ আল বাশিরের বক্তব্য উদ্ধৃত করে গ্লোবাল রিসার্সের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বলেছে, সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ইসরাইলের ভেতরে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। দৈনিকটি আরো লিখেছে, বিদ্রোহী নেতা আল বাশির গত বছর আহত হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য ইসরাইলে আসে। তবে তার ইসরাইলে যাওয়া এবং বিদ্রোহীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকার বিষয়টি গোপন রাখার জন্য তখন দাবি করা হয়েছিল সে নিহত হয়েছে এবং তাকে দারআ উপত্যকায় দাফন করা হয়েছে।
জাতিসংঘ ও রেড ক্রস কমিটির এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ মানুষ নিহত হয়েছে এবং একবিংশ শতাব্দীর এ ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের জন্য ইসরাইল ও তার সমর্থকরাই দায়ী।