বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার প্রধান প্রতিবন্ধকতা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বাংলাদেশে আইনের শাসন বাস্তবায়নে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যার্থতা রয়েছে। আর এর প্রধান কারণ হচ্ছে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। এ দুটি কারণে দেশটির বিচার ব্যবস্থায় এক ধরণের স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট এর এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে। ‘ডব্লিউজেপি রুল অব ল’ ইনডেক্স-২০১৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গতকাল প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষ করে পুলিশসহ নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে দুর্নীতি উল্লেখ করার মতো। সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে ব্যর্থতা। দীর্ঘ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটটি সূচকের মধ্যে সবচেয়ে কম স্কোর করেছে দুর্নীতি, দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট ৯৯টি দেশের ওপর এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের অবস্থান ৯২তম। বলা হয়েছে, এখানে দুর্নীতির প্রচলন রয়েছে। বিশেষ করে তা নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে উল্লেখ করার মতো। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯৫তম। তবে আইনের শাসন বিষয়ক ওই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় ৪ নম্বরে। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম আইনের শাসন রয়েছে আফগানিস্তানে। তালিকায় তাদের অবস্থান ৯৮তম। পাকিস্তান ৯৬তম। বাংলাদেশ ৯২তম। ভারত ৬৬তম। নেপাল ৫৭তম ও শ্রীলঙ্কা ৪৮তম। বাংলাদেশে সরকারি ক্ষমতা সীমাবদ্ধ রাখার প্রবণতা দুর্বল। এ ক্ষেত্রে সবগুলো দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০তম, দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে। সরকারি কর্মকর্তারা ক্ষমতার যে অপব্যবহার করেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ। এতে আরও বলা হয়েছে, প্রশাসনিক এজেন্সিগুলো এবং আদালত দুর্বল। দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রভাব রয়েছে এসব স্থানে। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও পুলিশি নির্যাতন বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। তবে বাংলাদেশ শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিষয়টিতে তুলনামূলক ভাল পারফরমেন্স করেছে। এক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬তম ও এ অঞ্চলে তৃতীয়। এটা সম্ভব হয়েছে সম্ভবত এখানে অপরাধের মাত্রা কম বলে, যদিও সহিংতার কারণে ব্যক্তিগত দুঃখ-দুর্দশা উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়ে গেছে। নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলোর তুলনায় সম্পদের অধিকার রক্ষার বিষয়টি শক্তিশালী। দেওয়ানি বিচার (সিভিল জাস্টিস), ফৌজদারি বিচার, দুর্নীতির অনুপস্থিতি, ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণ, মুক্ত সরকার (ওপেন গভর্নমেন্ট), মৌলিক অধিকার, আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা, নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বাস্তবায়ন- মোট এই আটটি বিষয়ের ওপর ওই সূচক প্রণীত হয়। এতে বলা হয়, দেওয়ানি বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান ৯২তম। ফৌজদারি বিচারে ৯৪তম। দুর্নীতির অনুপস্থিতিতে ৯৫তম। ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ৮০তম। মুক্ত সরকারের তালিকায় ৮৫তম। মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে ৮৭তম। আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬তম। নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বাস্তবায়নে অবস্থান ৯১তম। ওই তালিকায় ভারতের অবস্থান ৬৬তম। এ সম্পর্কে বলা হয়, ভারতে রয়েছে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা। মুক্তভাবে মত প্রকাশে রয়েছে শক্তিশালী সুরক্ষা। রয়েছে মুক্ত সরকার। এক্ষেত্রে বিশ্বে ভারতের অবস্থান ৩০তম। এতে ভারতের প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রশাসনিক এজেন্সিগুলো চলে ধীরগতিতে এবং তারা অত্যন্ত দুর্বল। এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান ৮১তম। তবে নাগরিক আদালতের বিচার ব্যবস্থার অর্জন খুব দুর্বল। এক্ষেত্রে ভারত রয়েছে ৯০তম অবস্থানে। এর প্রধান কারণ হতে পারে আদালতগুলো জনাকীর্ণ থাকে। মামলা পরিচালনা ও তা প্রক্রিয়াকরণ করা হয় ধীরে। ভারতেও দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। গত বছরে কিছুটা উন্নতি করলেও এ ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান ৭২তম। আইনের শাসনের সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো অপরাধ, নাগরিকদের মধ্যে সংঘাত ও রাজনৈতিক সহিংসতা। এ হিসাবে ভারতের অবস্থান ৯৫তম। পুলিশি অবমাননা ও নির্যাতন রয়েছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে। এতে বলা হয়, দেওয়ানি বিচার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দু’বছর আগে ছিল সবচেয়ে তলানিতে। তবে এ বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ১৯, যুক্তরাজ্য ১১, নেদারল্যান্ডস ২, জার্মানি ৩ ও সিঙ্গাপুর রয়েছে ৪ নম্বর অবস্থানে। বিশ্বের শতাধিক দেশের সুশাসনের ব্যাপারে বিশেষ অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ২৪০০ বিশেষজ্ঞ ও ৯৭ হাজার সচেতন নাগরিকের ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এ প্রতিবেদন। জরিপে সহায়তা করে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার ও বিশ্বের সেরা ধনী বিল গেটস।