৮০ ফুট মাটির নিচে গৃহবধূর লাশ
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, কুমিল্লাঃ কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বারে হত্যার এক মাস পর গৃহবধূর লাশের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। দুবাই প্রবাসী স্বামীর পরিকল্পনায় দুই লাখ টাকার বিনিময়ে শাহিনা আক্তারকে (৩৩) হত্যা করে ৮০ ফুট মাটির নিচে পুঁতে রেথেছে দুর্বৃত্তরা।
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের ছেছড়াপুকুরিয়া গ্রামে শ্বশুর বাড়ির টিউবওয়েলের পাইপের নিচে শাহিনার লাশ রয়েছে বলে জানতে পারে পুলিশ। এরপর থেকে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত লাশটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
নিহত শাহিনা আক্তার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের তুলাগাঁওয়ের মৃত কেরামত আলী সরকারের মেয়ে ও ছেছড়াপুকুরিয়া গ্রামের দুবাই প্রবাসী সোলায়মানের স্ত্রী। এদিকে, পুলিশ এ ঘটনায় শাহিনার স্বামী সোলায়মানের বন্ধু প্রতিবেশী করিমকে আটক করেছে।
দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ্ কামাল আকন্দ বলেন, গৃহবধূ শাহিনা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আমরা বিভিন্নভাবে তদন্ত চালাই। বৃহস্পতিবার বিকেলে ছেচরাপুকুরিয়া গ্রামের আব্দুল করিমকে সন্দেহভাজন হিসেবে ময়নামতি সেনানিবাস থেকে আটক করি। রাতে তার জবানবন্দি নিলে আব্দুল করিম হত্যার ঘটনা স্বীকার করে বলেন, শাহিনাকে হত্যা করার জন্য মোবারক হোসেন তাদের সঙ্গে দুই লাখ টাকা চুক্তি করে। ওই চুক্তি মোতাবেক আব্দুল করিম বিভিন্ন কৌশলে শাহিনা আক্তারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি করেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে আব্দুল করিমসহ আরও দুই ঘাতক শানিহাকে ঘর থেকে ডেকে এনে পাশের একটি ফাঁকা স্থানে শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যার পর ঘটনাস্থলের পাশে একটি অব্যবহৃত গভীর নককূপের (ডিপ টিউবওয়েল) পাইপের ভেতর ফেলে পাইপের মুখ মাটি দিয়ে বন্ধ করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, আব্দুল করিমের দেওয়া তথ্যানুসারে, আমরা বৃহস্পতিবার রাতেই তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে ওই ডিপ টিউবওয়েল এর পাইপ সনাক্ত করে হত্যার আলামত পাই। শুক্রবার সারাদিন খননকারীদের না পাওয়ায় লাশ উদ্ধার সম্ভব হয়নি। কুমিল্লার একটি নলকূপ খনন টিমের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে খনন কাজ শুরু হবে।
এদিকে নিহতের বড় ভাই শাহ আলম সরকার জানান, প্রায় ১২ বছর পূর্বে মোবারক হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় বোন শাহিনা আক্তারের। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। গত ২ বছর পূর্বে ভগ্নিপতি মোবারক হোসেন ছুটিতে বিদেশ থেকে দেশে আসার পর তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্যকলহ সৃষ্টি হয়। এ সময় মোবারক হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা শাহিনা আক্তারের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। প্রায় ৩-৪ মাস ছুটি শেষে মোবারক হোসেন বিদেশে চলে যায়। এরপর মোবারক হোসেনের পরিবার শাহিনাকে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়েছিল। এর এক পর্যায়ে আমার বোন বাদি হয়ে তাদের বিরুদ্ধে দেবিদ্বার থানায় নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে মোবারক হোসেন বিদেশ থেকে মোবাইল ফোনে এবং তার পরিবারের সদস্যরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমার বোনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে আমার বোনের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় আমরা দেবিদ্বার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি।
অন্যদিকে, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকার শতশত উৎসুক জনতা ভীড় জমিয়েছে। নিহতের দুই ছেলে ইমরান হোসেন (১১), তুষার আহমেদ (৮) ও একমাত্র মেয়ে রোজিনা আক্তার (৫) মায়ের সন্ধান পাওয়ায় গভীর নলকূপের পাইপ জড়িয়ে ধরে আহাজারি করছে।
শিশু ইমরান হোসেন বলেন, ওই রাতে খাবার শেষে মা আমাদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার মাকে দেখিনি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।