আবার সোনালী ব্যাংকের টাকা লুট, ক্যাশিয়ার আটক
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, বগুড়াঃ কিশোরগঞ্জের পর এবার বগুড়ায় সুড়ঙ্গ কেটে সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা লুট করার ঘটনা ঘটেছে। জেলার আদমদীঘি উপজেলায় সুড়ঙ্গ তৈরি করে সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৩২ লাখের বেশি টাকা লুটের ঘটনায় ব্যাংকের ওই শাখার ক্যাশিয়ারকে আটক করেছে পুলিশ।
এ নিয়ে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে।
আদমদীঘি থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, শনিবার বিকালে টাকা লুটের ঘটনা প্রকাশের পর রাতে ব্যাংক কার্যালয়ে ক্যাশিয়ার আজহার উদ্দিনকে ডেকে নেয়া হয়।
“পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে,” বলেন তিনি।
ওসি নজরুল জানান, আদমদীঘি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সোনালী ব্যাংকের কার্যালয় সংলগ্ন একটি ফার্নিচারের দোকান থেকে সুড়ঙ্গ তৈরি করে ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৫০৩ টাকা লুট করা হয়েছে।
বিকালে ব্যাংক বন্ধ করতে যাওয়ার আগে ভল্ট পরীক্ষা করার সময় টাকা লুটের বিষয়টি কর্মকর্তাদের নজরে আসে।
এর আগে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ব্যাংকের নিরাপত্তা রক্ষী মিলন (২৪) ও পূর্ণ চন্দ্র (২২) এবং ব্যাংকের পাশের ফার্নিচার ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম ও তার এক কর্মচারীকে আটক করা হয়।
স্থানীয়রা জানায়, আদমদীঘির বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সোনালী ব্যাংকের পাঁচতলা ভবনের দেয়ালের নিচে সুড়ঙ্গ কেটে ভেতরে ঢোকে দুর্বৃত্তরা। শনিবার সন্ধ্যায় নিরাপত্তাকর্মীরা ঘটনা টের পায়। পরে ব্যাংক কর্মকর্তাদের জানায়। গত দুদিনের ছুটিতে দুর্বৃত্তরা এ সুড়ঙ্গ কেটে থাকতে পারে।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুটি গ্যাস সিলিন্ডার, একই স্লাইরেঞ্জ ও একটি কর্নি উদ্ধার করে। দুর্বৃত্তরা টাকা লুট করার আগে গ্যাস ব্যবহার করে ভল্টের তালা গলিয়ে ফেলে।
পরে ব্যাংকের ওই শাখার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পূর্ণদেব ও মিলন নামে দুই আনসার সদস্য ও ব্যাংকের পাশের একটি ফার্নিচারের দোকানের মালিক আশরাফুল ও কর্মচারী শাহীনুরকে আটক করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছে।
আটকের পূর্বে ব্যাংকের ক্যাশিয়ার আজাহার জানান, বৃহস্পতিবার লেদদেন শেষ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংক বন্ধ করে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। শনিবার বিশেষ কার্যদিবসের ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানো হয়। বিকেল ৫টার দিকে ভোল্ট ভাঙার বিষয়টি চোখে পড়ে। এসময় পুলিশকে খবর দেয়া হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৮৮৪ টাকা লুটের বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ব্যাংক ম্যানেজার শামছদ্দীন শরিফ জানান, শনিবার ভোল্ট বই ও ক্যাশ বইয়ের জন্য ভোল্ট রুমে গিয়ে ভোল্ট ভাঙা দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানানো হয়। তিনি জানান, ভোল্টে ৩২ লাখ ৫১ হাজার টাকা ছিল।
আদমদীঘি থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। ব্যাংক কিংবা আশে পাশের ভবনের কেউ এর সঙ্গে জড়িত আছে কীনা সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পূর্ব) সৈয়দ আবু সায়েম জানান, টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ব্যাংকের দুই নিরাপত্তা কর্মীসহ ৪ জন আটক করা হয়েছে।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক শফিকুর রেজা বিশ্বাস, সোনালী ব্যাংকের ডিজিএমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
গত ২৬ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ শহরে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখার মাটির নিচে সুড়ঙ্গ কেটে ভল্ট থেকে প্রায় ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার দুদিন পর সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের ঘটনার মূল হোতা সোহেল ওরফে হাবিবকে রাজধানীর শ্যামপুর থেকে আটক করে র্যাব। এ সময় ইদ্রিস মিয়া নামে আরো একজন আটক হয়। তাদের কাছ থেকে ৫ বস্তা টাকা উদ্ধার হয়।