সুরিন্দর থেকে থিরিমানে
স্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ এবারের এশিয়া কাপে সবচেয়ে বেশি রান লাহিরু থিরিমানের। একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে দুই সেঞ্চুরিসহ এই শ্রীলঙ্কান করেছেন ২৭৯ রান। বেশি উইকেট লাসিথ মালিঙ্গা ও সাঈদ আজমলের। দু’জনেই ১১টি করে উইকেট পেয়েছেন। তবে ১২তম আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটি জিতেছেন লাহিরু থিরিমানে। থিরিমানের আগে এশিয়া কাপের সেরা খেলোয়াড়দের পারফর্ম্যান্স নিয়েই এ আয়োজন।
১৯৮৪, সুরিন্দর খান্না: ১৯৮৪-এর প্রথম এশিয়া কাপের সেরা খেলোয়াড় সুরিন্দর খান্না ১০ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে করেছেন দুটি ফিফটি। দুটিই আবার ১৯৮৪ এশিয়া কাপে। ভারতকে শিরোপা জেতানোর পথে করা ৫১* (বিপক্ষ শ্রীলঙ্কা) ও ৫৬ (বিপক্ষ পাকিস্তান) রানের দুটি ইনিংসে এশিয়া কাপের প্রথম আসরের সেরা খেলোয়াড় হন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। কে বলবে, ১৯৭৯ বিশ্বকাপের পাঁচ বছর বাদে সেবারই প্রথম দলে ফিরেছিলেন সুরিন্দর?
১৯৮৬, অর্জুনা রানাতুঙ্গা: প্রথম আসরের মতো ১৯৮৬ সালের এশিয়া কাপের দ্বিতীয় টুর্নামেন্টেও ২০০ ছাড়ানো ইনিংস ছিল না কোনো দলের। পুরো টুর্নামেন্টে ফিফটিই হয়েছিল মাত্র তিনটি! তিনটিই আবার ফাইনালে। পাকিস্তানের বিপক্ষে কলম্বোর সেই ফাইনালে ৫৫ বলে ৫৭ করা অর্জুনা রানাতুঙ্গা টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১০৫ রান করায় জেতেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭ আর গ্র“প পর্বে পাকিস্তানের সঙ্গে ৪১ রানের দুটি ইনিংস ছিল রানাতুঙ্গা।
১৯৮৮, নভজ্যোত সিং সিধু: ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি আর দলীয় ২৫০ ছাড়ানো ইনিংস প্রথমবার ১৯৮৮ সালের তৃতীয় আসরেই দেখেছিল এশিয়া কাপ। পাকিস্তানের ইজাজ আহমেদ এক সেঞ্চুরি এক ফিফটিসহ সর্বোচ্চ ১৯২ রান আর ভারতীয় স্পিনার আরশাদ আইয়ুব ৯ উইকেট নিলেও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা জেতেন নভজ্যোত সিং সিধু। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালে ৮৭ বলে ৪ বাউন্ডারি ৩ ছক্কায় ৭৬ রানের ইনিংসসহ তিন ফিফটিতে ১৭৯ করাতেই সেরাদের সেরা বেছে নেওয়া হয় ভারতীয় এই ওপেনারকে।
১৯৯৫, নভজ্যোত সিং সিধু: ১৯৯০ সালের এশিয়া কাপে আনুষ্ঠানিকভাব দেওয়া হয়নি টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে পাঁচ বছর বাদে ফেরা ১৯৯৫ সালের আসরে আবারও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটি জেতেন নভজ্যোত সিং সিধু। ১৯৮৮ সালের মতই ধারাবাহিক ভালো খেলার স্বীকৃতি পান তিনি। সেবার বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজিত ৫৬, পাকিস্তানের সঙ্গে ৫৪, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ আর ফাইনালে সেই লঙ্কানদের সঙ্গে ১০৬ বলে ৫ বাউন্ডারিতে অপরাজিত ৮৪ করেছিলেন সিধু। বলে রাখা ভালো, চার ম্যাচের কোনোটিতেই কিন্তু সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেননি তিনি! এমনকি ফাইনালেও ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা নিয়ে যেতে দেখেছেন ৮৯ বলে অপরাজিত ৯০ করা মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনকে।
১৯৯৭, অর্জুনা রানাতুঙ্গা: সিধুর মতো কেবল অর্জুনা রানাতুঙ্গারই আছে দু’বার এশিয়া কাপের সেরা হওয়ার। ১৯৮৬ সালের পর ১৯৯৭ সালে কীর্তিটা গড়েছিলেন এই লঙ্কান কিংবদন্তি। এক সেঞ্চুরি দুই ফিফটিসহ ২৭২ রান এসেছিল রানাতুঙ্গার উইলো থেকে। সেবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪০ বলে ২৮, ভারতের বিপক্ষে ১৫২ বলে ১৭ বাউন্ডারিতে ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ১৩১, বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫১ বলে ৫১ রানের পর ফাইনালে ভারতের সঙ্গে অপরাজিত ছিলেন ৬৬ বলে ৫ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ৬২-তে। গড়টা তো এমনি এমনি ‘ব্র্যাডম্যানিয়’ ১৩৬ হয়নি! ১৯৯০ সালেও দুই ফিফটিতে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ১৬৬ করেছিলেন রানাতুঙ্গা । আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কারটা দেওয়া হলে সর্বোচ্চ তিনবার সেরা খেলোয়াড় হতে পারতেন তিনিই!
২০০০, মোহাম্মদ ইউসুফ: ২০০০ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের আসরটিতে ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে ইউসুফ ইয়োহানাই ছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। ব্যাটের দ্যুতিতে অন্যদের ম্লান করায় তার হাতেই উঠেছিল টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার। ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫৪ বলে ২৫ করলেও গ্রুপ পর্বের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে একপ্রকার ঠিক হয় গিয়েছিল ইউসুফের সেরা হওয়ার নিয়তি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০৪ বলে ৮০ দিয়ে শুরু। এরপর ভারতের বিপক্ষে ১১২ বলে ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ১০০ আর গ্র“প পর্বের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আরো একটি ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ৯০ রানের ইনিংস ছিল তাঁুর। ইউসুফের কাঁধে চড়ে ১৬ বছরের আক্ষেপ মিটিয়ে সেবারই প্রথম এশিয়া কাপের শিরোপা জিতে পাকিস্তান, তাও পুরো টুর্নামেন্টে অপরাজিত থেকে।
২০০৪, সনাৎ জয়াসুরিয়া: ২০০৪ সালের আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯৩ রানের পাশাপাশি ৪ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার শিরোপা পুনরুদ্ধার অভিযানের নায়ক ছিলেন সনাৎ জয়াসুরিয়া। শুরুতে অবশ্য চেনা ছন্দে ছিলেন না জয়াসুরিয়া। কিন্তু সুপার ফোরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০১ বলে অপরাজিত ১০৭ রানের পরের ম্যাচেই ভারতের সঙ্গে করেছিলেন ১৩২ বলে ১৩০। ভারতের বিপক্ষে জেতাতে পারেননি তারপরও। তবে ফাইনালে ১৫ রানের পর ২ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ঠিকই এনে দিয়েছিলেন শিরোপাটা।
২০০৮, অজন্থা মেন্ডিস: ব্যাটসম্যান বা অলরাউন্ডাররাই হবেন এশিয়া কাপের সেরা, এই ধারাটা ভেঙে ২০০৮ সালের সেরাদের সেরা হন ‘রহস্য স্পিনার’ অজন্থা মেন্ডিস। ক্যারম বলের জাদুতে সেবার মাত্র ৮.৫২ গড়ে ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ওভারপিছু রানও দিয়েছেন ‘হাড়কিপ্টে’ ৩.৪৫ রেটে। ফাইনালে মেন্ডিসের অপার রহস্য ভেদ করতে পারেননি স্পিনে ‘দাদাগিরি’ দেখানো ভারতও। সেই ম্যাচে মেন্ডিসের ১৩ রানে ৬ উইকেট এখনও এশিয়া কাপের সেরা। তার স্পিন নিয়ে কাটাছেঁড়ার সুযোগ না দিতে ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলা শ্রীলঙ্কা সুপারফোরের ম্যাচটিতে ভারতের বিপক্ষে নামায়নি মেন্ডিসকে। ফাইনালে কাজে এসেছিল এই রণনীতি। মেন্ডিসের মায়াবি বোলিংয়ের জন্যই সেবার এশিয়া কাপের এক আসরে সবচেয়ে বেশি ৭৫.৬০ গড়ে ৩৭৮ করেও সেরা খেলোয়াড় হতে পরেননি সনৎ জয়াসুরিয়া। অথচ এই মেন্ডিসই সেই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য!
২০১০, শহীদ আফ্রিদি: এর আগের টুর্নামেন্টের প্রতিটিতে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন শিরোপাজয়ী দলের কেউ না কেউ। ২০১০ সালে ধারাটা ভাঙেন ‘বুম বুম’ শহীদ আফ্রিদি। এমনকি ফাইনালে না পৌঁছেও সেবার টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছিলেন সে সময়ের পাকিস্তানি অধিনায়ক। তিন ম্যাচে তিন উইকেটের পাশাপাশি ১৬৪.৫৯ স্ট্রাইকরেটে করেছিলেন ২৬৫ রান। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭৬ বলে ৮ বাউন্ডারি ও ৭ ছক্কায় ১০৯ করে দলকে জেতাতে না পারলেও হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। ভারতের বিপক্ষে ছিল ২৫ বলে ৩২ রানের ইনিংস। টানা দুই ম্যাচ হারার জ্বালাটা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে টর্নেডো বইয়ে মিটিয়েছেন আফ্রিদি। মাত্র ৬০ বলে ১৭ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় ১২৪ রানের ‘দানবীয়’ ইনিংসে পাকিস্তানকে জয় এনে দিয়েছিলেন ১৩৯ রানের।
২০১২, সাকিব আল হাসান: আফ্রিদির তবু ফাইনাল খেলতে না পারার সান্ত্বনা ছিল। কিন্তু গত আসরের সেরা সাকিব আল হাসান পুড়েছেন ফাইনালে ২ রানে হারের যন্ত্রণায়। চার ম্যাচে তিন ফিফটিসহ চতুর্থ সর্বোচ্চ ২৩৭ রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। ফাইনালেই করেছিলেন আবার সেই টুর্নামেন্টে নিজের সেরা ৬৮, সঙ্গে ২ উইকেট। তার পরও দেখতে হয়েছে শিরোপার মুঠো গলে চলে যাওয়া।