অনৈতিক কার্যকলাপ চলছে পার্লারের অন্তরালে
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, চট্টগ্রামঃ চট্রগ্রাম শহরের বিভিন্ন পার্লারে সেলুনের নামে চলছে অনৈতিক কর্মকাণ্ড। যুবতীদের দিয়ে পুরুষদের ম্যাসেজ করানো হয় এসব জেন্টস সেলুন এবং পার্লারে। দিনের পর দিন শহরের অভিজাত এলাকায় চলছে এসব কর্মকাণ্ড। সমাজে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এসব অনৈতিক কাজের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। আর বড় অংকের টাকা মাসোয়ারার বদৌলতে প্রশাসন থাকছে নির্বিকার। দেশের বৃহত্তম শহর বন্দর নগরী চট্রগ্রাম।
বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত চট্রগ্রাম শহরের অভিজাত এলাকায় সেলুন বিউটি পার্লার ও ম্যাসেজ পার্লারের আড়ালে চলছে অনৈতিক কর্মকাণ্ড। অভিযোগ আছে এই ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা মাসোয়ারা হিসেবে আদায় করছে স্থানীয় পুলিশ সহ কিছু দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি। শহরের প্রাণকেন্দ্র পূর্ব নাসিরাবাদের জিইসি মোড়ের পাশে এম এম টাওয়ারের নিচ তলায় অবস্থিত স্টার সেলুন জেন্টস পার্লার। বাইরে থেকে ভিতরের পরিবেশ অনুমান করা কঠিন। ভিতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে ছিমছাম পরিপাটি সেলুন। অথচ এর মধ্যেই চলছে অনৈতিক কর্মকাণ্ড। পার্লারের বিউটিশিয়ানদের কাছে জানতে চাওয়া হয় এখানে আপনারা ছেলেদের ম্যাসেজ করেন, আপনাদের কি খারাপ লাগেনা, এটা যে অনৈতিক কাজ সেটা আপনাদের বিবেকে বাধেনা? তারা টাকার জন্য এ কাজ করছেন বলে জানান। এর বাইরে আরো অন্য কি কাজ করানো হয় আপনাদের দিয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা শুধু ম্যাসেজ করে দেই, অন্য কিছু করিনা।
সেলুনের ম্যানেজারে শীতল এর কাছে জানতে চাওয়া হয় আপনারা এই ম্যাসেজ করতে কত টাকা নেন এবং এটা অনৈতিক কাজ মনে হয় কি না? ম্যানেজার বলেন, আমরা এর বিনিময়ে ৩’শ টাকা করে নেই। আর এটা যদিও অনৈতিক তবু ও টাকার জন্য পেটের জন্য আমাদেরকে করতে হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন বাধা নেই বলেও জানান তিনি। সেখানে কয়েকজন কাস্টমার অপ্রস্তুত অবস্থায় একুশে টিভির ক্যামেরাবন্দি হয়ে জানান, এখানে ম্যাসেজ ছাড়া আর অনৈতিক কিছু হয়েছে কি না জানতে চাইলে অস্বীকার করেন তারা। ম্যানেজার শীতলের কাছে আবার জানতে চাওয়া হয় এই মেয়েদের কি কোন সার্টিফিকেট আছে, অথবা মানুষের ম্যাসেজ করলে কি ধরনের উপকার তারা পেয়ে থাকেন? ম্যানেজার বলেন, এখানে যাদের বাত’ এর প্রবলেম আছে তারা আসেন, তারা সুস্থ হয়ে যান। তবে যুবকদের আমরা এখানে ম্যাসেজ করিনা। অথচ ঐ সময় যুবকদেরকে অশালীন অবস্থায় হাতেনাতে ধরা হয়। প্রতিষ্ঠানের কোন বৈধ কাগজ আছে কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না আমার কাছে কোন কাপড় নেই, মালিকের সাথে কথা বলতে হবে। তবে মালিকের সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। ঐ বাড়ির মালিকের ছোট ভাইয়ের সাথে কথা বলে হলে তিনি বলেন, ৩ মাস আগের তারা সেলুনের নাম করে এখানে উঠেছে, এখন ওদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আমাদের কানেও এসেছে, আমরা তাদেরকে ৩ মাসের মধ্যে বাসা ছেড়ে দেয়ার নোটিশ দিয়েছি।
ভবনের দ্বিতীয় তলার চাকুরিজীবি আজিজ উদ্দিন আজিজের সাথে কথা বলা হয়, তিনি বলেন, আমরাও শুনেছি সেলুনের নাম দিয়ে এখানে নাকি অনৈতিক কর্মকান্ড চলে। তবে ওদের হাত এত বেশি লম্বা যে সাধারণ মানুষ সেখানে গিয়ে কথা বলতে পারেনা। পূর্ব নাসিরাবাদের লায়লা মঞ্জিলে তানিম সেলুন এন্ড পার্লার অবস্থিত। তৃতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ি দেখে বোঝার উপায় নাই যে, ৪র্থ তলায় কেউ যাতায়াত করে। এখানেও দেখা গেল দামী সোফা রয়েছে খরিদ্দারদের জন্য। তবে চুল কাটার চেয়ারে কেউ বসা নেই। ক্যামেরা বন্ধ করার জন্য রীতিমত হাতাহাতি শুরু করে পার্লারের মেয়েরা। আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া গেল একজনকে। তবে ক্যামেরার সামনে কথা না বলেই কৌশলে সটকে পড়ল সে। আর একুশে টিভির রেকর্ডকৃত ক্যাসেট ছিনিয়ে নেয়ার জন্য মাস্তানদের আসার জন্য ফোন দেয় এই পার্লারের ম্যানেজার। এবং তালা দিয়ে আটকিয়ে রাখা হয় একুশে টিভির রিপোর্টার এবং ক্যামেরাম্যানকে। ফোনে জানানো হয় পার্লারে ডাকাত পড়েছে।
এদিকে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করলে তারা টালবাহানা শুরু করে। পরবর্তীতে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে অনেক সাংবাদিক চলে আসে, আসে পুলিশও। তবে তখনো থেমে ছিলনা ঐসব কর্মকান্ড। পরে পুলিশ স্বীকার করে যে এখানে যা হচ্ছে তা অনৈতিক। পুলিশ ঐ সময় ঐ পার্লারের ম্যানেজার, ১জন খরিদ্দার ও ৭জন মেয়েকে আটক করে নিয়ে যায়। বিশ্ব¯ত্ম সুত্রে জানা যায়, ঐ দিন রাতেই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং কর্মকাণ্ড চলতে থাকে আগের মতই। এ ধরনের সামাজিক অবক্ষয় রোধে প্রশাসনের আশু পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তা না হলে স্কুল পড়–য়া ছাত্র এবং যুবসমাজ নৈতিক অবক্ষয়ের প্রাত্মসীমায় পৌঁছে যাবে।