ঠাকুরগাঁওয়ে স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা!

রিপোর্টার,এবিসি নিউজ বিডি, ঠাকুরগাঁওঃ ঠাকুরগাঁও জেলার সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, খামখেয়ালিপনা আর সঠিক তথ্য না জানানোর ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর ফলে, ঠাকুরগাঁও জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক আর ওষুধপত্র ঠিকঠাক মতো থাকলেও সেবার মান ভালো না হওয়ায় অধিকাংশ রোগী প্রাইভেট হাসাপাতালগুলো থেকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জনের আওতায় সদরের আধুনিক হাসপাতাল ছাড়াও চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, ৫১টি ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ১৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।

এদিকে, ঠাকুরগাঁও সদরের পৌরসভা এলাকায় প্রাইভেট ক্লিনিক, নার্সিংহোম, হাসপাতাল, প্যাথলজি, ল্যাব, ডেন্টাল ক্লিনিক রয়েছে প্রায় ৪০টি।

উপজেলার মানুষেরা ছোট-খাটো অসুবিধা ছাড়া বেশির ভাগ সময় জেলা সদরের প্রাইভেট অথবা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের তুলনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন সেবা কেন্দ্রগুলোতে রোগীরা সেবা নিতে আসছেন বেশি। এছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ ও প্রসূতি সেবায় এসব চিকিৎসা কেন্দ্র অনেক ভূমিকা রাখছে।

ঠাকুরগাঁও জেলার মানুষসহ আশপাশের কয়েক উপজেলার মানুষের চিকিৎসা সেবার অন্যতম নির্ভরতার স্থান ঠাকুরগাঁও আধুনিক হাসপাতাল।

হাসপাতালটি ১৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও এখানে সারাবছরই প্রায় ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। সে কারণে এ হাসপাতালের রোগীদের সেবা দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হয়।

অন্য হাসপাতালগুলোর তুলনায় এখানকার চিকিৎসা সেবা ভালো হলেও নোংরা পরিবেশ ও দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়ত বেকায়দায় পড়ছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা।

এদিকে, এ হাসপাতালের সেবিকাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে অসদাচরণের একাধিক অভিযোগ। সরকারি চাকরি হওয়ায় এ ধরণের আচরণ করেন বলেও হাসপাতালে ভর্তি একাধিক রোগী অভিযোগ করেছেন।

সদর উপজেলা থেকে পেটের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন হাবিবুর রহমান (৬০) নামের এক বৃদ্ধ।

তিনি জানান, হাসপাতাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ওষুধ পাওয়া যায়নি। এমনকি প্যাথলজির পরীক্ষাগুলোও বাইরের ক্লিনিক থেকে করাতে হয়েছে।

জানা গেছে, হাসপাতালে ওষুধ ও পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

শুধু হাবিবুর রহমানই নয়, সালন্দর এলাকার এক গৃহবধূ নার্গিস জানান, ৩ দিন আগে প্রসব বেদনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে তার সন্তান হয়েছে। স্বামী শাহা শিকদার একজন কৃষক। দিন আনেন, দিন খান। ওষুধ কেনার মতো কোনো টাকা-পয়সা নেই। আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ঋণ করে চিকিৎসার ব্যয় চালাতে হচ্ছে। ৩ দিনে প্রায় ২ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়েছে তাকে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে কোনো ওষুধ পাওয়া যায়নি।

তবে এ হাসপাতালে জেলা সদরের বাইরের রোগী বেশি হওয়ায় এ ব্যাপারে কোনো প্রতিকার চেয়েও কাজ হয় না বলে জানা গেছে।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে সরকারিভাবে অল্প খরচে প্যাথলজি, আলট্রাসনোগ্রাম, এক্সরে, ইসিজি করার সুযোগ থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দালালের খপ্পরে পড়ে বাইরের সেন্টারগুলো থেকে এগুলো করানো হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, এসব পরীক্ষার জন্য রোগীর বাহক ও চিকিৎসকদের অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে থাকে ক্লিনিকগুলো।

শুধু জেলার হাসপাতালের চিকিৎসকরাই নয়, রাজধানী থেকে নামকরা হাসপাতালের চিকিৎসকরা এসে এখন জেলা পর্যায়ে মাসে ১ দিন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সপ্তাহে ১ দিন এসে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

এসব চিকিৎসকরা আবার অতিরিক্ত অর্থ আয়ের আশায় কারণে-অকারণে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে নানা রকমের পরীক্ষা দিচ্ছেন। চিকিৎসার ফি-এর বাইরেও পরীক্ষা করাতে যে টাকা লাগছে, সেখান থেকেও একটি অংশ তারা নিয়ে যাচ্ছেন।

ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা.আফজাল হোসেন তরফদার জানান, রোগীর তুলনায় হাসপাতালে ডাক্তার কম। তাই এতসব রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালের সার্বিক সমস্যার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে। শীঘ্রই এসকল সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ