মিজানুর রহমানের হাত খাটো করার সময় এসেছে

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ এখন তার (মিজানুর রহমান খান) হাত খাটো করার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন। এই আইনজীবী ছাড়াও অন্যান্য আইনজীবীরাও মিজানুর রহমান খানের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন আদালতে।

এদিকে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলার শুনানি অব্যাহত রেখে মামলার কার্যক্রম আগামীকাল সোমবার বেলা সোয়া ২টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

রোববার শুনানির সময় মিজানুর রহমান খান আদালতের কাঠগড়ায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর বসার অনুমতি চান তার আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। পরে আদালত তাকে বসার অনুমতি দেন।

শুনানির শুরুতে ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ আদালতের সামনে দৈনিক সমকাল ও নয়াদিগন্ত পত্রিকা উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও দৈনিক প্রথম আলোর পক্ষে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।

এসময় আদালত বলেন, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কীভাবে বিবৃতি প্রকাশ করে? এ সময় আদালত ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদের কাছে জানতে চান, এই আদালতের কি কনটেম্পট রুল জারি করা ক্ষমতা আছে কিনা? জবাবে রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী এই আদালতের ক্ষমতা আছে।

ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, মিজানুর রহমান খান যে আদালত অবমাননা করেছেন তাতে তার প্রতিকী শাস্তি নয়, কারাদণ্ড হওয়া উচিত।

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, মিজানুর রহমান খান এই লেখার মাধ্যমে আদালতকে জনগণের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। কার স্বার্থে এই ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করেছেন তা দেখতে হবে। তিনি বলেন, আপনারা সংবিধান ও জনগণের অধিকার রক্ষায় শপথ নিয়েছেন। এজন্যই আদালত অবমাননাকারীর বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা আপনাকে সংবিধান দিয়েছে।

ব্যারিস্টার আকতার হামিদ বলেন, আদালতকে হেয় প্রতিপন্ন করে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ হলুদ সাংবাদিকতা।

আহসানুল করীম বলেন, মিজানুর রহমান খান আদালত অবমাননা করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষমতা আদালতের নিজস্ব ক্ষমতা। আদালত সংবিধান ও জনগণের অধিকার রক্ষা করবে। তিনি আমার দেশ পত্রিকার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার শাস্তি বিষয়ক রায়ের তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, এটাই প্রথম আলো পত্রিকার প্রথম আদালত অবমাননা নয়। এর আগে একাধিকবার তারা আদালত অবমাননা করেছে। আদালত তাদের বিরুদ্ধে একাধিক রুল জারি করেছেন। যা এখনও বিচারাধীন। তিনি এ সময় মিজানুর রহমান খানের একাধিক নিবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, বিচার বিভাগকে আঘাত করে লেখা তার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদালত এ বিষয়ে নীরব থাকতে পারে না।

সালাহ উদ্দিন দোলন বলেন, এই সাংবাদিক সাগর-রুনী বা দেশের অন্য কোনো সমস্যা নিয়ে লেখেন না। গণ মানুষের অধিকারের কথা লেখেন না। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা তার চোখে পড়ে না। তিনি শুধুই বিচার বিভাগ নিয়ে লেখেন। বিচার বিভাগের ওপর আঘাত করে তিনি লিখে চলেছেন। আগেই যদি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে আজকের এই পরিস্থিতি হতো না। তিনি বিশেষ এজেণ্ডা নিয়ে লিখেছেন। অথচ এই বিষয়ে তার কোনো জ্ঞান নেই। সালাহ উদ্দিন দোলন আরও বলেন, এখন তার (মিজানুর রহমান খান) হাত খাটো করার সময় এসেছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি শাহেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দৈনিক সমকাল ও নয়াদিগন্ত পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকরের বিরুদ্ধে রুল জারি করা হয়েছে।

দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান ও যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে জারি করা রুলের ওপর শুনানিতে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা পেশা নিয়েও কথা বলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ও বরিশাল বিভাগীয় সাংবাদিক সমিতি আলাদা বিবৃতি দেয়। ওই বিবৃতির ভিত্তিতে দৈনিক সমকাল ও নয়া দিগন্তে প্রকাশিত প্রতিবেদন রোববার আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন।

এর ভিত্তিতে আদালত ডিআরইউ-এর সভাপতি ও সম্পাদককে তলব করেন। আগামী বুধবার তাদের হাজির হয়ে বিবৃতির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া সমকাল ও নয়াদিগন্তের বিরুদ্ধে জারি করা রুলে আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কেন বিবৃতি প্রকাশ করেছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে।

বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহেমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন। পত্রিকাটির বিরুদ্ধে জারি করা রুলের ওপর শুনানির সময় আদালত এ আদেশ দেন। এ শুনানি অব্যাহত রয়েছে। সোমবার বেলা সোয়া ২টায় আবার শুনানি হবে। এজন্য মিজানুর রহমান খানকে আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।

রুলের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার আখতার হামিদ, মো. আসাদুল্লাহ, সালাহউদ্দিন দোলন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আবু তালেবের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করীম। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার খায়রুল আলম চৌধুরী। এ সময় প্রথম আলোর পক্ষে আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. শাহদীন মালিক।

কলাম লেখা ও প্রকাশের মাধ্যমে আদালত অবমাননার অভিযোগে দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে গত ২ মার্চ রোববার স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ। একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আবু তালেবের করা পৃথক এক আবেদনে ওই দুইজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে পৃথকভাবে আরও একটি রুল জারি করেছেন। এই দুটি রুলের ওপর ৬ মার্চ থেকে শুনানি শুরু হয়।

গত ২৮ মার্চ ‘মিনিটে একটি আগাম জামিন কীভাবে?’ এবং পহেলা মার্চ ‘ছয় থেকে আট সপ্তাহের স্বাধীনতা’ শিরোনামে পর পর দু’দিন প্রথম আলো পত্রিকায় দুটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। মিজানুর রহমান খান নিবন্ধ দুটি লিখেছেন। এসব নিবন্ধে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এই নিবন্ধের বিষয়টি আদালতের নজরে আসার পর আদালত আদেশ দেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ