সোনালী ব্যাংকের ভল্ট অরক্ষিত : ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ একের পর এক ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ আর বিভিন্ন কেলেঙ্কারির পর এবার অরক্ষিত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ভল্টগুলো। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই ব্যাংকের যেন শনিরদশা পিছু ছাড়ছে না।
কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা লুটের ঘটনার দুই মাস না যেতেই বগুড়ায় ঘটলো একই ঘটনা। শক্রবার রাতে বগুড়ার আদমদীঘি সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে সুড়ঙ্গ কেটে লুট করা হয়েছে সাড়ে ৩২ লাখ টাকা। এ ঘটনার তদন্ত শুরু করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তদন্তে যেসব তথ্য উদ্ঘাটিত হবে এবং যাদের অবহেলা ধরা পড়বে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
একই ব্যাংকে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে কেন? এ ধরনের ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা জড়িত আছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাছাড়া সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে কোনো চক্র কাজ করছে কিনা সেটিও তদন্তে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ নওশাদ আলী চৌধুরী এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, কারা এর সাথে জড়িত তা তদন্তের বিষয়। তবে নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কারণ এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা বিশেষ করে ভল্টের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য সার্কুলার জারি করা হয়েছে। তাছাড়া ব্যাংকার্স মিটিংয়েও নিরাপত্তার বিষয়টি বারবার বলা হয়েছে। এর পরেও যারা অবহেলা করেছে তাদের ছাড় দেবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তিনি বলেন, বগুড়ার আদমদীঘি সোনালী ব্যাংকে সুড়ঙ্গ করে টাকা লুটের ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে বগুড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আঞ্চলিক অফিসে ফোন করে জানানো হয়। এবং এর তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তদন্তে যাদের অবহেলা ধরা পড়বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
শুক্রবার বগুড়ার আদমদীঘি সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে সুড়ঙ্গ কেটে লুট করা হয়েছে সাড়ে ৩২ লাখ টাকা। এখন প্রশ্ন উঠেছে ব্যাংকের সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থান ভল্ট নিয়ে।
এর আগে ২৬ জানুয়ারি ব্যাংকটির কিশোরগঞ্জ প্রধান শাখায় ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা চুরির ঘটনা ধরা পড়ে। এর পরে সোনালী ব্যাংকের ভল্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহার নেতৃত্বে তিনটি পরির্দশন টিম চেস্ট ব্রাঞ্চগুলো পরির্দশন শুরু করে। পরিদর্শন টিমে আইটি বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলীও রয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক উর্ধতন কর্মকর্তা এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, রাষ্ট্রীয় খাতের এ ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের হয়ে অনেক সময় বাণিজ্যিক ব্যাংক বা গ্রাহক পর্যায়ে লেনদেন করে। ফলে এ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত অর্থের পরিমাণও তুলনামূলক বেশিই থাকে। সোনালী ব্যাংকের ৬৬টি চেস্ট ব্রাঞ্চ যা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে কাজ করে। এসব শাখার অধিকাংশের নিরাপত্তা অবস্থা নাজুক। প্রতিবছর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব শাখা পরিদর্শন করা হয়। ব্যাংকটির ভল্টে রক্ষিত অর্থের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে নির্দেশনা দিলেও সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। এর ফলে সম্প্রতি ভল্টের নিরাপত্তাবেষ্টনী ধ্বংস করে অর্থ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এমতাবস্থায়, ব্যাংক ভল্ট-এর নিরাপত্তার বিষয়টি অধিকতর শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুর্বল অবকাঠামো আর ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজসেই এ ধরনের হরিলুট চলছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও এসব শাখায় নিরাপত্তার জন্য কোনো বীমাও নেই। যদিও ব্যাংকের ঝুকি মোকাবেলায় ব্যাংকের ভল্টের বীমা করার বিধার রয়েছে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার বিষয়টি স্বীকার করে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত রোববার সাংবাদিকদের বলেন, এটা স্বীকার করি যে সোনালী ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এটা দূর করতে আমরা ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, ব্যাংকের ১২০৪টি শাখায় এই পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু করার জন্য ৬১টি দল গঠন করা হয়েছে। ৬১টি আঞ্চলিক অফিসকে কেন্দ্র করে এসব দল পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।