কেলেঙ্কারির হোতারা ফার কেমিক্যালে: সংশয়ে বিনিয়োগকারীরা

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য অনুমোদন পাওয়া ফার কেমিক্যাল লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। এসব কেলেঙ্কারীর হোতাদের মাধ্যমে পরিচালিত এ কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা ধরনের সংশয় দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, যেসব ব্যক্তি ফার কেমিক্যাল পরিচালনা করছেন তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মামলাও করেছে।

এর আগে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসি ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিনেন্সের ২০ এর (এ) ধারার ক্ষমতাবলে ফার গ্রুপের আরএন স্পিনিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাদের ফারুককে বরখাস্ত করে। একই সঙ্গে তাকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানাও করে বিএসইসি। আরএন স্পিনিংয়ের রাইট শেয়ার কেলেঙ্কারি ও জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত থাকার পরও তিনি ফার কেমিক্যালের একজন অন্যতম উদ্যোক্তা।

প্রতিষ্ঠানটির শুরু তিনি এ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলেও কেলেঙ্কারীর কারণে তিনি এ পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। প্রসপেক্টাসে তাকে একজন শেয়ারহোল্ডার হিসেবে দেখানো হয়েছে।

এছাড়া আইন লঙ্ঘনের দায়ে আরএনস্পিনিংয়ের পরিচালক কিম জং সুককে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। কিম জং সুক বর্তমানে ফার কেমিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছে। প্রসপেক্টাসে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফার কেমিক্যালে তার ২৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

একইভাবে আরএন স্পিনিংয়ের আবিদ মোস্তাফিজুর রহমান ফার কেমিক্যালের চেয়ারম্যান। অথচ তিনি আরএনস্পিনিংয়ের কেলেঙ্কারী মামলার অন্যতম আসামি। ফার কেমিক্যালে তার শেয়ার রয়েছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

এছাড়া একই কেলেঙ্কারির ঘটনায় আরএনস্পিনিংয়ের পরিচালক শিরিন ফারুক কে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। তিনিও ফার কেমিক্যালে  শেয়ার হোল্ডার হিসেবে রয়েছেন।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলেন, যেসব কোম্পানি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছে না তাদের জন্যই পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। এতে বিনিয়োগকারীদের মাশুল দিতে হয়। তবে অসাধু এসব কোম্পানি নিজেরা লাভবান হচ্ছে। তাই এদের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাসহ বিনিয়োগকারীদের সজাগ থাকতে হবে।

এদিকে, বিনিয়োগকারীরা বলছেন, নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসি হলো বাজারের অভিভাবক। কোনো কোম্পানি অনুমোদন দেওয়ার আগে বিএসইসি’র উচিত স্বচ্ছভাবে তাদের সম্পর্কে যাচাই বাছাই করা। যদি কোনো কোম্পানির করামকর্তারা অতীতে কেলেঙ্কারীর সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তাদের বাজারে তালিকাভূক্তির অনুমোদন না দেওয়ার অনুরোধ জানান তারা।

এ সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট হাসান মাহমুদ বিপ্লব এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, যেকোনো কোম্পানি বাজারে তালিকাভূক্তির আগে তা যাচাই বাছাই করার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসি’র। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা যদি যাচাই বাছাই করার পরও কোনো কেলেঙ্কারীর হোতাদের কোম্পানিকে বাজারে তালিকাভূক্তির অনুমোদন দেয় তাহলে তা হবে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ভালো মৌলভিত্তি কোম্পানিকে বাজারে তালিকাভূক্তির অনুমোদন দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এ সম্পর্কে বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবিএম মির্জা আজিজুল ইসলাম এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, যেসব কোম্পানির পরিচালক অতীতে কেলেঙ্কারীর সঙ্গে জড়িত তাদের পরিচালিত নতুন কোনো কোম্পানিকে বাজারে তালিকাভূক্তির অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়। ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভূক্তির অনুমোদন পেলে বাজারে ধারাবাহিকভাবে স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন তিনি।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ