রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে এক নারী নেত্রীর গুরুতর অভিযোগ
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নারী দিবসের একদিন পর রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন এক নারী নেত্রী। মনিরা চৌধুরী নামের এই নেত্রী ডিসিসি’র ২২ নং ওয়ার্ড যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সোমবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মনিরা চৌধুরী ছাত্রলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে নির্যাতনের ফিরিস্তি তুলে ধরেণ। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতির পদের আড়ালে মোয়াজ্জেম হোসেন তপু গোটা রামপুরা এলাকার সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা, মাদক ও নারী ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করেণ। মনিরা চৌধুরী দাবি করেন, তপু প্রবীন সাংবাদিক আফতাব আহমেদ ও সিআইডি পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিম হত্যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সন্দেহভাজন আসামি। পুলিশ চাঞ্চল্যকর এই দুটি হত্যা মামলায় তপু বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা পেয়েও তাদেরকে ধরতে সাহস পায়নি। স্থানীয় সাধারণ মানুষদের উপর তপু’র নানা ধরণের অত্যাচারের শত শত অভিযোগ থানায় পড়ে থাকে। অসহায় মানুষরা এর বিচার পান না। তিনি নিজেও তপুর বিরুদ্ধে একাধিকবার থানায় বিচার চেয়েও পাননি। উল্টো রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দ্রুত তপুর সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে চাপ প্রয়োগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে মনিরার মা হোসনে আরা বেগম, আহত ভাই মেরাজ ও স্বামী মারুফ সরকার উপস্থিত ছিলেন।
১৮৬ উলন রোড, রামপুরার মৃত মজিবুর রহমান চৌধুরীর কন্যা মুনিরা তার উপর তপুর নির্যতনের চিত্র তুলে ধরে তপুকে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কারসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
মনিরা অভিযোগ করে বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর রামপুরা থানা এলাকার মানুষের কাছে পরিচিতি নানারকম। সে গোটা রামপুরা এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে। নিয়ন্ত্রন করে সকল সন্ত্রাসী। এই এলাকায় তার কয়েক শত নারী ব্যবসার ফ্ল্যাট রয়েছে যা থানা-পুলিশ এমনকি মতিঝিল জোনের ডিসিও অবগত আছেন।
তিনি বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন তপু এক সময় বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে সুযোগ সন্ধানী এই তপু ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে ২২নং (রামপুরা) ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়। সেসময়ে আমিও যুব মহিলা লীগের এই ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। একটি সময় তার অসংযত আচরণ, মাদক ও নারী ব্যবসার বিষয় অবগত হয়ে তার সঙ্গে কথা না বলে এড়িয়ে চলতাম। আমাদের ওয়ার্ডে তার মাদক ব্যবসার প্রধান বাধা ছিলাম আমরা। বিশেষ করে আমার মা ও আমার ভাই। আমরা সবাই এর প্রতিবাদ করতাম। এ কারণে তপু আমাদের পরিবারের সবার উপর ছিল ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়। বিগত ৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে সে এ কারণে আমাদের পরিবারের উপর অকথ্য, অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে মনিারা চৌধুরী বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর বিরদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করার পর গত অক্টোবর মাসে (কোরবানীর ঈদের দু’দিন আগে) সে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার রামপুরার বাসায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এসময় সে আমাকে তুলে নিতে চায়। আমার পরিবারের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে তারা পালিয়ে যায়। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর দিনের বেলায় আমার ছোট ভাই মেরাজের উপর হামলা চালিয়ে অভিযোগ পত্র প্রত্যাহার করে নিতে চাপ দেয়। তপু তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার বাসায় পুনরায় হামলা চালিয়ে গেইট ভাংচুর করে।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, সর্বশেষ তপু চলতি মাসের ৭ তারিখ (৭ মার্চ) আমার স্বামী ও বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে রামপুরা টিভি ভবনের উল্টা পাশে মদীনা টাওয়ারের সামনে পৌঁছালে তপু তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার বাচ্চাকে কোল থেকে টেনে ফেলে দিয়ে আমাকে রিকসা থেকে জোর করে নামায়। এসময় আমার স্বামী মারুফ সরকার তাকে বাধা দিলে মারুফ সরকারকে মেরে অজ্ঞান করে ফেলে। শত শত লোকের মধ্য থেকে আমাকে টেনেহিঁচড়ে মদীনা টাওয়ারের সিঁড়ির মধ্যে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালায়। আমার চিৎকারে এসময় তপু বাহিনীর সামনে কেউই এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। তারা আমার ভাইকেও মেরে অজ্ঞান করে। টহল পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। পরে আমি থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়ে মামলা করতে গেলে রামপুরা থানা পুলিশ আমার মামলা না নিয়ে অভিযোগ পত্রটি রেখে দেয়। পুলিশ এ ব্যাপারে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আমাদেরকেই মিমাংসা করতে চাপ দিতে থাকে।