দেশে প্রথম অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ দেশে প্রথমবারের মতো অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করা হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সোমবার বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২ এ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
সোমবার এক রোগীর অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে গোপনীয়তার স্বার্থে রোগীর নাম-পরিচয় জানানো হয়নি।
মন্ত্রী বলেন, ব্লাড ক্যান্সার একটি প্রাণঘাতি রোগ। আমাদের দেশেও অনেক মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে যত ধরনের ক্যান্সার রয়েছে তার শতকরা ১১.০৪ ভাগ ব্লাড ক্যান্সার । বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন অর্থাৎ অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন এ রোগের নিরাময়যোগ্য চিকিৎসা। তবে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। যেখানে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশনের ব্যবস্থা নেই সেখানে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী ও তার আত্মীয় স্বজনদের অসহায়ত্ব নিদারুণ। সামর্থ থাকলে রোগীরা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশনের জন্য দেশের বাইরে যেয়ে থাকেন। একবার গেলে হয় না বারবার যাতায়াত করতে হয়। প্রতিবছরে রোগীপ্রতি খরচ হয় ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা। যাদের দেশের বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ নেই তাদের কেমো থেরাপী দেওয়া হয়। অচিরে তাদেরকে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পন করতে হয়। তাই ব্লাড ক্যান্সার এক মহাআতঙ্কের নাম।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে যাতে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশনের ব্যবস্থা করা যায় সেজন্য বিগত সরকারের সময়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উদ্যোগ নেয়া হয়। নবনির্মিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২এ দেশে প্রথম বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন ইউনিট প্রতিষ্ঠার সেই প্রচেষ্টার একটি সফল অধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ৫ বছরে স্বাস্থ্যখাতে যে অভুতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন ইউনিট তার একটি উজ্জ্বল মাইল ফলক বলেও মন্তব্য করেন নাসিম।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসময় আরও জানান, এ ট্রান্সপ্লানটেশন সফলভাবে সম্পাদন করেছেন বাংলাদেশের হেমাটলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএ খান ও মার্কিন যুক্তরাষ্টের ম্যাসাচুসটস জেনারেল হসপিটালের বাংলাদেশী বংশদ্ভুত মার্কিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. বিমলাংশু দের নেতৃত্বাধীন একটি সমন্বিত চিকিৎসক দল। শুধু আজকের ট্রান্সপ্লানটেশন সম্পাদন নয়, এ কর্মসূচিতে শুরু থেকে আমাদের সাথী হয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্টের ম্যাসাচুসটস জেনারেল হসপিটালের চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, নার্স, টেকনোলজিস্ট সমন্বয়ে একটি হৃদয়বান দল এবং গ্লেবাল হেলথ নামক একটি বিশ্বখ্যাত দাতা সংস্থা।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের মার্কিন যুক্তরাষ্টসহ বিভিন্ন দেশে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন বিষয়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
বোনম্যারো ট্রান্সপ্লনটেশনের মত একটি জীবানুনিরোধক প্রযুক্তি ও বিবিধ অথ্যধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন চিকিৎসা কেন্দ্র নির্মাণ ছিল বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ২ প্রকল্প বলিষ্ট নেতৃত্বে অপসারিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. জাহেদ মালেক, স্বাস্থ্য সচিব এসএম নিয়াজ উদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক প্রমুখ।