ঠাকুরগাঁও চিনিকলে দু’মাস যাবৎ শ্রমিকদের বেতন বন্ধ

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঠাকুরগাঁওঃ ঠাকুরগাঁওয়ে চলতি মাড়াই মৌসুমের উৎপাদিত চিনিসহ বিগত দুই মৌসুমের উৎপাদিত প্রায় সমুদয় চিনিই অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে থাকায় টাকার অভাবে ঠাকুরগাঁও চিনিকলে চরম অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে এখানে কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিকদের বেতন বন্ধ রয়েছে দু’মাস ধরে। একই কারণে চলতি আখ মাড়াই মৌসুমে আখ চাষিদের কাছ থেকে কেনা প্রায় ১০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়নি। বাকিতে আখ বিক্রি করে দিনের পর দিন ঘুরেও টাকা না পেয়ে চাষিরা শতকরা ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে মধ্যস্বত্বভোগী এক শ্রেণীর মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছে আখের টাকা প্রাপ্তির রশিদ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক চাষিই আগামী বছরে আর আখ চাষ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩-২০১৪ আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করা হয় অনাড়ম্বরভাবে। ৫৬তম এ মৌসুমে ৫২ দিনে ৭০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৬ দশমিক ৫০ শতকরা হারে আহরণ করে ৪ হাজার ৫শ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত থাকলেও আখের বাম্পার ফলন ও গুড়ের দাম কম থাকায় চিনিকলে আখ সরবরাহ আশাতীত বেশি হয়েছে।

এর ফলে গত দু’মাসে এ চিনিকল সকল লক্ষ্যমাত্রাই পার করেছে। ৪ মার্চ পর্যন্ত এ চিনিকলে ৭ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করেছে প্রায় ২৮ কোটি টাকার চিনি।

ঠাকুরগাঁও চিনিকলসহ দেশের ১৫টি চিনিকলের উৎপাদিত চিনি বিক্রির জন্য সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেসরকারি চিনিকলগুলোর উৎপাদিত চিনির দর কেজি প্রতি প্রায় ১০ টাকা কম থাকায় দেশের সকল চিনিকলের মতো এখানেও বিগত দুই মৌসুমের প্রায় সমুদয় চিনিই গুদামে স্তুপিকৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সম্প্রতি সরকার চিনি বিক্রির দর প্রতি কেজি ৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। তারপরও চিনি বিক্রি শুরু না হওয়ায় এ অর্থসংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন ও চাষিদের সরবরাহ করা আখের দাম পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে সময় মতো আখের দাম না পাওয়া, আখ বিক্রির পুঁজি প্রাপ্তিতে বিড়ম্বনাসহ নানা কারণে অতিষ্ট অনেক চাষিই আগামীতে আর আখের চাষ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।

মিলগেট সাবজোনের আখচাষি সহিদুল আলম জানান, অনেক বিড়ম্বনার পর পুঁজি সংগ্রহ করে চিনিকলে আখ সরবরাহ করার পরও সময়মতো টাকা পাচ্ছেন না। এখন টাকার প্রয়োজনে অনেক চাষিই শতকরা ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছে টাকার রশিদ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে বড় অংকের লোকসান গুণতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এ অবস্থায় আগামীতে আখের চাষ করা থেকে সরে আসবেন অনেক আখ চাষি।

ঠাকুরগাঁও চিনি ব্যবসায়ি শাহাজান খান জানান, ক্রেতারা ঠাকুরগাঁও চিনিকলের চিনি কিনছে না। তাছাড়া মিল গেটের বাইরে চিনির কেজি ৩৮ টাকা। তাই ওই চিনি বিক্রি হচ্ছে না।

ঠাকুরগাঁও চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দস জানান, চিনি বিক্রি না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ২ মাস ধরে কোনো বেতন ভাতা দিতে পারছে না। অনেকে সংসার খরচের তাগিদে আদম ব্যসায়িদের কাছে ধর্না দিচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আজিজ অর্থসংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘যতটা দ্রুত সম্ভব এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ