বৈধ পতিতাবৃত্তির বিশালতার সাক্ষী জার্মানির ‘প্যারাডাইস’

Paradise Brothel ব্রোথেল পতিতালয়আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ‘স্বর্গে স্বাগতম’- এভাবে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পতিতালয় ‘প্যারাডাইস’। জার্মানির সুৎগার্টে বেড়ে ওঠা এ বৈধ পতিতালয়ের বিশালতায় বোকা বনে যান অনেকে। ২০০২ সালে জার্মান সরকার প্রথম পতিতাবৃত্তিকে তাদের দেশে বৈধতা দেওয়ার পর থেকে বৈধ পতিতালয়ে পতিতারা কাজের খোঁজে আসতে থাকেন। খুব দ্রুত এ শহরে ‘প্যারাডাইস’ নেমে যে পতিতালয়টি গড়ে উঠেছে, তা এখন ‘মেগা ব্রোথেল’ নামে বিখ্যাত। পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন পেশায় জড়িতদের স্বর্গ এটি। এখানে চষে বেড়িয়ে বিশাল এক নিবন্ধ লিখেছেন দ্য টেলিগ্রাফের রবিবারের ‘স্টেলা ম্যাগাজিন’র অ্যাসিস্টেন্ট এডিটর নিশা লিলিয়া দিউ।

বারো তলার মূল ভবনটি বিশাল, তৈরি করা হয়েছে মরোক্কান থিমে। মনে হবে, স্বপ্নময় অ্যারাবিয়ান নাইটসের কোনো সুলতানের প্রাচুর্যপূর্ণ প্রাসাদে প্রবেশ করা হচ্ছে। ভিতরে বিলাসবহুল এক মদের বার। বারো তলা ভবনটি ছাড়াও এর চারদিকে রয়েছে নামহীন বহু অফিস ব্লক আর সীমাহীন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। এই ব্রোথেলে বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা!

‘প্যারাডাইস’ চেইন শপের মতো, ঠিক যেমন খাবারের চেইন শপ পিজা হাট বা কেএফসি ইত্যাদি। পাঁচ-পাঁচটি বিশাল ব্রাঞ্চ রয়েছে এই ব্র্যান্ড পতিতালয়ের।  আরো তিনটি শাখা গড়ে উঠছে জাঁকজমকের সঙ্গে। এ ব্যবসার একজন অংশীদার মাইকেল বেরেটিন। তিনি যখন হাসিমুখে নিশা লিলিয়াকে স্বাগত জানালেন, তখন তার হাতে ঝিলিক দিয়ে উঠল অ্যাডুমারস পিগটের হাতঘড়ি, যার মূল্য এক লাখ পাউন্ড বা প্রায় দেড় কোটি টাকা। এ লোকটি খুব শিগগিরই আরেকটি ব্রোথেল খুলতে যাচ্ছেন। সাড়ে চার মিলিয়ন ইউরো খরচ করে ১৫ হাজার স্কয়ার ফুটের এ পতিতালয়ের নাম হবে ‘প্যারাডাইস সারব্রুকেন’।

মাইকেল বেরেটিন টানা ছয় তলা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন লিলিয়াকে। এই ছয়টি তলায় ঘন বার্গেন্ডি রঙে উপচে পড়ছে। ঠিকরে আসা আলোয় বাইরে থেকে ভেতরটাকে লাল টকটকে ভেলভেটের কেকের মতো মনে হয়। আর ভেতরে মনে হবে, কেক তৈরির জ্বলন্ত চুলা। ওখানে সবাই ইচ্ছেমতো নগ্ন হতে পারেন।

অনেকেই জানেন, আমস্টারডাম বোধহয় ইউরোপের পতিতালয়ের রাজধানী। কিন্তু জার্মানির এই শহরে আরো ঢের সংখ্যক পতিতা এবং খদ্দেরের সমাগম ঘটে যা ইউরোপ-আমেরিকার যেকোনো শহরের ব্রোথেলের চেয়েও বেশি। এমনকি এ সংখ্যা ব্যাংককের চেয়েও বড় অংকের। প্রায় এক যুগ আগের একটি হিসাব জানাচ্ছে, ব্যাংককে প্রতিদিন ৪ লাখ পতিতা প্রায় ১২ লাখ খদ্দেরকে সময় দেয়। ২০০২ সালে প্রথম জার্মানিতে বেশ্যাবৃত্তিকে বৈধতা দেওয়ার দুই বছরের মধ্যে এ ব্যবসা থেকে বছরে ৬ বিলিয়ন ইউরো  উপার্জন হয়। এই পরিমাণ অর্থ জার্মানির বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান পোর্শে বা অডির বাৎসরিক আয়ের সমান। এক যুগ না পেরোতেই প্রস্টিটিউশনে জার্মানিতে ১৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হচ্ছে। আর এ বিশাল অর্থের জন্যই জার্মান সরকার পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দিয়েছে, জানান বেরেটিন।

জার্মানির সোশাল ডেমোক্রেট-গ্রিন কোয়ালিশনের চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডার অন্যান্য চাকরির মতো পরিচয় ঘটান পতিতাবৃত্তিকে। পতিতারাও অন্যান্য চাকরির জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে পারবেন, পাওনা আদায়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ইন্সুরেন্স করতে পারবেন যেখানে পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধা থাকবে।

‘কিন্তু এগুলো কোনো কাজে আসেনি’, জানালেন বেরেটিন। কারণ পতিতাদের কেউ চাকরি দেয় না।

এখানে মূলত কী হয়? নিয়নে মোড়ানো গোটা ১২ তলা ভবনটি কোলনের গন্ধে পরিপূর্ণ। মাত্র ৫০ থেকে ১০০ ইউরোর বিনিময়ে এখানে যে কেউ সীমাহীন যৌনতা কিনতে পারেন। তা ছাড়া এখানকার বারে দামি-কমদামি মদে ডুবে যেতে পারেন, সোনা বারে উষ্ণতা উপভোগ করতে পারেন। সেইসঙ্গে রয়েছে রাজকীয় শোবার ঘর। তা ছাড়া পতিতাকে নিয়ে সময় কাটানোর জন্য রাস্তার দু’ধারে সারি সারি সাজানো রয়েছে কমমূল্যের ক্যারভান, যেগুলোকে বলা হয় ‘সেক্স বক্স’।

এ দেশে পতিতাবৃত্তি ব্যবসার ফুলে-ফেঁপে ওঠার হার সত্যিই বিস্ময়কর। এ ব্যবসায় বেরেটিন এবং তার আরেক অংশীদার জার্গেন রুডলফের মতো মানুষেরা হচ্ছেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। আগামী এপ্রিলে প্যারাডাইসের আরেকটি শাখা খোলা নিয়ে দারুণ ব্যস্ত তারা। সারব্রুকেন শহরটি খুব ছোট। এখানে মাত্র ১৮ লাখ মানুষের বাস। এ শহরে পতিতালয়টি গড়ে উঠবে ফ্রেঞ্চ বর্ডার থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে এবং স্টারসবার্গের ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট থেকে মাত্র এক ঘণ্টা পথের দূরত্বে। এখানকার ব্রোথেলটি হবে এ যাবতকালের সবচেয়ে আকর্ষণীয়, আশা করছেন বেরেটিন।

সারব্রুকেনের মেয়র চার্লোটি ব্রিৎজ বললেন, জার্মানির অন্যান্য শহরের মতো এখানেও পতিতাবৃত্তি বিস্মকর হারে বেড়ে যাচ্ছে। এর শুরু ২০০৮ সালে, যখন রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া ইউরোপিয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত হয়। ছোট এ শহরেই রয়েছে একশোটির বেশি ব্রোথেল।

পতিতাবৃত্তি বৃদ্ধির এই ব্যাপক হার কী সমস্যা সৃষ্টি করছে? লেখিকার প্রশ্নে মেয়রের উত্তর, ‘সুপারমার্কেট, কার পার্কিং থেকে শুরু করে এক কাপ চা খেতে গেলে, এমনকি কোনো মৃতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও কোনো না কোনো পতিতার সামনে পড়তে হয়। বাস স্টপেজে, রাস্তা-ঘাটে এমনকি স্কুলের সামনে পড়ে থাকে ব্যবহৃত কনডম, বিরক্তির সঙ্গে জানালেন চিন্তিত মেয়র।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ