কিছু শাস্তি দিয়ে দায় সাড়ছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা

nikরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নির্বাচনী প্রচারে আচরণবিধি লংঘনের দায়ে অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে বা জরিমানা করে রিটার্নিং কর্মকর্তারা দায় সাড়ছেন।

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে ৮৩টি উপজেলার মধ্যে মাত্র ৪টি উপজেলার ১০ জনকে জরিমানা ও তিনজন প্রার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়ায় মঙ্গলবার এবিসি নিউজ বিডির সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেছেন ইসি সচিবালয় কর্মকর্তারা।

তৃতীয় ধাপের নির্বাচনী প্রচারের সময় আচরণবিধি লংঘনের দায়ে চারটি উপজেলায় অভিযুক্ত ১০ জন প্রার্থীকে বিভিন্ন অঙ্কে ৮৯ হাজার টাকা জরিমানা ও একই কারণে তিনজন প্রার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে নির্বাচন কমিশন(ইসি)।

মঙ্গলবার এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা দাবি করে বলেছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের (অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক) কাছে অভিযোগ জমা পড়লেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা তা আমলে নিচ্ছেন না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ আমলে নিলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অথবা অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে বা জরিমানা করে দায় সাড়ছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্র আরও জানায়, কমিশন আগেই আচরণবিধি লংঘন সম্পর্কিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছিল। এ কারণে কমিশনে উল্লেখ করার মতো অভিযোগ জমাও পড়ছে না।

এ অবস্থায় নাজুক পরিস্থিতি সামাল দিতে কমিশন যেকটি ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং নিচ্ছে তার সবই গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ।

যেকটি উপজেলায় প্রার্থীদের শাস্তি প্রদান করা হয়েছে তা হলো সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ, ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার বুড়িচং।

এই চারটি উপজেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে আছেন কালিগঞ্জে সৈয়দ আহমেদ, দাগনভূঁইয়ায় চৌধুরী আশরাফুল, জামালগঞ্জে এসএম শফি কামাল ও কুমিল্লার বুড়িচংয়ে রাবেয়া বসরী।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, উল্লিখিত চারটি উপজেলার মধ্যে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আচরণ বিধি লংঘন হওয়ায় এ উপজেলার বিভিন্ন প্রার্থীদের কাছ থেকে মোট ৫৪ হাজার টাকা জরিমান  আদায় করা  হয়েছে।

এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাজ্জাদ হোসেনকে ১৫ হাজার টাকা, এটিএম মিজানুর রহমানকে ৩ হাজার টাকা, এছাড়া ভাইসচেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. সাইফুল আলমকে ৫ হাজার টাকা, মো. জামাল উদ্দিনকে ৪ হাজার টাকা, মো. জসিমউদ্দিনেক ১৫ হাজার টাকা, মো. মতিউর রহমান খানকে ৪ হাজার ও মো. শাহ আলমকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৮ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

এছাড়া ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া ও সুনামগঞ্জে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলায় ৩ প্রার্থীকে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

দাগনভূঁইয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এএসএস নুরুন নবী দুলালকে ২৫ হাজার টাকা ও মো. আলমগীরকে ৫ হাজার টাকা এবং সুনামগঞ্জে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী সুভাষ পালকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অপরদিকে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী মো. আলতাফ হোসেনকে দাঙ্গা সৃষ্টির অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই জেলার উপজেলায় মো. নজির গাজীকে ও শেখ সালাউদ্দিনকে গাঁজা রাখার অপরাধে ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

উল্লেখ্য, চতুর্থ্ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও কমিশনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমন অভিযোগের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের কাছে নির্বাচন কমিশনও ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে।

সূত্র জানায়, তবে তৃতীয় ধাপে কমিশন হার্ডলাইনে। তাই আগে ভাগেই নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ করতে আচরণ বিধি ভঙ্গের কারণে তিনজনকে কারাদণ্ড প্রদান ছাড়াও ১০ জনকে বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা করেছে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

মঙ্গলবার তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসির অবর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনার আবদুল মোবারক এবিসি ইউজ বিডিকে বলেন, আসন্ন তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন উপজেলার প্রার্থী-সমর্থকেরা অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছেন। যার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন গাজীপুরের শ্রীপুরে ক্ষমতাশীন দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা।

যে কারণে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে সহিংসতা বেশি হতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তাই এ বিষয়ে ১৩ মার্চ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রথম ধাপের নির্বাচনের ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী ধাপের নির্বাচন করা হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ছোট খাট সহিংসতা হলেও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। গোলমাল হলেই ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনী এলাকার ডিসি এসপিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ মার্চ তৃতীয় ধাপের ৮৩ উপজেলা ভোটগ্রহণ হবে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ