দলীয় হলে স্থানীয় নির্বাচনে সৎ প্রার্থী কমবে

nikরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ দলীয় রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অনেক অসৎ, অদক্ষ ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন। কোনঠাসা হয়ে পড়ছে অনেক সৎ ত্যাগী রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তি।

নির্দলীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সৎ ও যোগ্যদের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বেশি। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে দলীয়করণ করা হলে এসব প্রার্থীরা বিপাকে পড়বে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসৎ ও দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রভাব বেশি। পেশীশক্তি ও কালো টাকার বদৌলতে তারা পেয়ে যান দলীয় মনোনয়ন। এই অসুস্থ রাজনীতির ডামাডোলে হারিয়ে যাচ্ছেন অনেক ত্যাগী মানুষ। সুস্থ ও কল্যানমুখী রাজনীতির চর্চা করেও দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না অনেকে। সেক্ষেত্রে তাদের ভরসা নির্দলীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই নির্বাচন দলীয়ভাবে হলে এই মানুষগুলো রাষ্ট্রের আর কোনো ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষভোটে জনপ্রতিনিধিত্বের সুযোগ পাচ্ছেন না।

বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, সংসদ নির্বাচনে অনেক সময় প্রার্থীর সততা ও যোগ্যতার অভাবে অনেকে নিজদলের নির্বাচনে উৎসাহ পান না। নির্বাচনে অংশ নেন না স্বতঃস্ফূর্তভাবে। দলীয় বাধ্যবাধকতার কারণেই তারা নিজদলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে যেতে পারেন না। কিন্তু সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ায় রাজনৈতিক নেতারা প্রতিপক্ষ দলের সৎ প্রার্থীকেও নির্বাচিত করার সুযোগ পান। দলীয় সঙ্কীর্ণতার বাইরে জনগণের সঠিক ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। কিন্তু এ নির্বাচন দলীয়ভাবে হলে অধিক যোগ্য ও সৎ প্রার্থীকে নির্বাচনের সুযোগ কমে যাবে।

দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার জন্য আইন পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ৩ মার্চ রাজধানীর মিরপুরে দোলারটেক আওয়ামী লীগের এক সম্মেলনে তিনি এ ইঙ্গিত দেন।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, দেশে দুই ধরনের শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত। একটি সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা, অন্যটি স্থানীয় সরকার শাসন ব্যবস্থা। এক দেশে দুই ধরনের শাসন ব্যবস্থা থাকতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন আইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারকে গতিময় করতে আইন সংশোধন জরুরি। আশা করি, শিগগিরই জাতীয় সংসদে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া বিল উত্থাপন করতে পারব। এ সময় ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভারতেও পৌর, সিটি করপোরেশন এমনকি পঞ্চায়েত নির্বাচনও দলীয়ভাবে হয়। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনে কী হয়? এক ব্যক্তি সব ক্ষমতার মালিক থাকেন। তার জবাব দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। এসব কারণে আইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়করণে সরকারের চিন্তাভাবনার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, উপজেলা নির্বাচন একেবারে আইনানুগভাবে দলীয়করণ হলে তাতে ভালো কিছু অর্জন হচ্ছে বলে মনে হয় না। দলীয় নির্বাচনের চেয়ে নির্দলীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের সুযোগ বেশি থাকে। এ নির্বাচন দলীয় হলে জনগণ সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ