নিখোঁজ মালয়েশীয় বিমান মালাক্কা যায়নি

Biman Serch বিমান সন্ধানআন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নিখোঁজ হওয়ার চার দিন পরও হদিস মেলেনি মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজটির। গতকাল মঙ্গলবার পাওয়া নতুন কিছু তথ্য রহস্যের ধূম্রজাল না ছিঁড়ে বরং জন্ম দিয়েছে নতুন প্রশ্নের। সর্বশেষ গণমাধ্যমে খবর বের হয় যে  ‘নিখোঁজ’ উড়োজাহাজটি উল্টো পথে মালাক্কা প্রণালীর দিকে গেছে। কিন্তু সামরিক রাডারে এমন তথ্য পাওয়ার কথা বলেননি বলে আজ বুধবার দাবি করেছেন দেশটির বিমান বাহিনীর প্রধান।

বুধবার এক বিবৃতিতে রোদজালি দাউদ বলেছেন, রাডারে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে তাদের ধারণা হয়েছে, উড়োজাহাজটি দিক বদলে উল্টো পথে যাওয়ার ‘চেষ্টা করে থাকতে পারে’।

ফলে শনিবার প্রথম প্রহরে আকাশ থেকে হঠাৎ ‘উধাও’ হওয়া যাওয়ার পর সেই বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ আর ২৩৯ জন আরোহীর ভাগ্যে কি ঘটেছে, সে রহস্য আরো জটিল আকার ধারণ করেছে।

বিমানটির খোঁজে দশ দেশের তল্লাশি অভিযান পঞ্চম দিনে গড়ালেও পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন মত ও বক্তব্যের ভেতর থেকে নিশ্চিত হওয়ার মতো কোনো প্রমাণ এখনো মেলেনি।

শনিবার প্রথম প্রহরে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংয়ের পথে উড্ডয়ানের ঘণ্টা খানেক পর ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ এর সঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

বিমান বাহিনীর প্রধান রোদজালি দাউদের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার পত্রিকা বেরিতা হারিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই রাতেই ২টা ৪০ মিনিটে যাত্রাপথের পুরো উল্টো দিকে কয়েকশ কিলোমিটার দূরে মালাক্কা প্রনালীর আকাশে শেষবার বিমানটির অবস্থান সনাক্ত করতে পেরেছে বিমান বাহিনীর রেডার।

বিষয়টি অস্বীকার করে রোদজালি দাউদ বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, “আমি বলতে চাই, ওই ধরনের কোনো বক্তব্য আমি দেইনি।”

এ বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সও মঙ্গলবার জানায়, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর বিমানটি গতিপথ বদলেছিল।

“বিমানটি পতিপথ বদলে মালয়েশিয়ার কোটা বারুর দিকে যায় এবং অনেক নিচু দিয়ে উড়ে মাল্লাকা প্রনালীর আকাশে পৌঁছায়।”

তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেক বেসামরিক ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেন, গতিপথ বদলানোর বিষয়টি অনেকগুলো সম্ভাবনার মধ্যে একটি। বিষয়টি তারা পরীক্ষা করে দেখছেন।

উড়োজাহাজটি যদি সত্যিই যাত্রাপথ বদলে পশ্চিম দিকে উড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে হঠাৎ যান্ত্রিক গোলযোগে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাতিল করে দিতে হয়।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখপাত্র টেংকু শরিফউদ্দিন টেংকু আহমেদ বুধবার রয়টার্সকে বলেন, দক্ষিণ চীন সাগর থেকে উল্টো ঘুরে মালয় উপদ্বীপ পেরিয়ে বিমানটি মালাক্কার দিকে গেছে- এমন কোনো প্রমাণ থাকার কথা সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানানো হয়নি।

বিমানটি সন্ত্রাসী হামলা কিংবা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে কিনা- সে প্রশ্নেও জোরালো কোনো যুক্তি বা প্রমাণ পায়নি উদ্ধারকাজে নিয়োজিত বহুজাতিক সংস্থাগুলো।

দুই যাত্রী চুরি করা পাসপোর্টে ওই বিমানে উঠেছেন- এমন প্রমাণ পাওয়া গেলেও তাদের জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদে সংশ্লিষ্টার সম্ভাবনা ইন্টারপোল একপ্রকার নাকচ করে দিয়েছে।

ভিয়েতনাম সাগরে কয়েক দফা বিমানের সম্ভাব্য ধ্বংসাবশেষ ও তেল ভাসার খবর পাওয়া গেলেও সেগুলোর সঙ্গে ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ এর কোনো যোগাযোগ পাওয়া যায়নি।

নিখোঁজ বিমানের খোঁজে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টি জাহাজ এবং ৩৪টি বিমান তৎপর রয়েছে। মঙ্গলবার থেকে তল্লাশির এলাকাও বাড়ানো হয়েছে। তবে গত পাঁচ দিনে রহস্যের জাল তারা ছিঁড়তে পারেনি।

নিখোঁজ উড়োজাহাজটির ২৩৯ আরোহীর মধ্যে ১২ জন ক্রু, বাকিরা ১৪টি দেশের নাগরিক। এদের মধ্যে অন্তত ১৫২ জন চীনের, ৩৮ জন মালয়েশিয়ার, ৭ জন ইন্দোনেশিয়ার, ৬ জন অস্ট্রেলিয়ার, ৫ জন ভারতের, ৪ জন ফ্রান্সের এবং ৩ জন যুক্তরাষ্ট্রের।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ