প্রথম আলোকে অব্যাহতি, ভোরের কাগজ’র জরিমানা বহাল

Court prothom alo আদালত প্রথম আলোরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ ফয়েজীর আইনজীবীর (এলএলবি) সনদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে প্রথম আলোর সম্পাদক, প্রকাশক ও প্রতিবেদককে অব্যাহতি দিয়েছে আপিল বিভাগ।

একই ঘটনায় ভোরের কাগজের প্রকাশককে অব্যাহতি দেওয়া হলেও পত্রিকাটির তখনকার সম্পাদক ও প্রতিবেদকের আপিল নাকচ করা হয়েছে।

আপিল মঞ্জুর হওয়ায় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ওই সময়ের প্রকাশক মাহফুজ আনাম (ডেইলি স্টার সম্পাদক), প্রতিবেদক একরামুল হক বুলবুল ও মাসুদ মিল্লাত।

বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ দৈনিক প্রথম আলো ও ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক ও প্রতিবেদকসহ সাত সাংবাদিকের হাইকোর্টের দণ্ডের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায় ঘোষণা করেন।

এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ‘দৈনিক প্রথম আলোর’ সম্পাদক, প্রকাশক ও প্রতিবেদককে এক হাজার টাকা জরিমানা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মঞ্জুর করেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে ওই পত্রিকাকে আর কোনো জরিমানা দিতে হচ্ছে না।

তবে একই অভিযোগে ‘দৈনিক ভোরের কাগজ’র তৎকালীন সম্পাদক আবেদ খান ও প্রতিবেদক সমরেশ বৈদ্যকে জরিমানা দিতে হবে।  কিন্তু কত টাকা দিতে হবে তা বলা হয়নি। কারণ এর আগে এক হাজার ঠাকা জরিমানা করা হয়েছিল। পত্রিকাটির প্রকাশককে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

আদালতে আপিল আবেদনের পক্ষে ছিলেন ড. কামাল হোসেন। ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।

১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম আইন কলেজ থেকে এলএলবি প্রিলিমিনারি ও ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেন ফয়সল মাহমুদ ফয়েজী। পরে তিনি হাই কোর্টের বিচারপতি নিয়োজিত হলে তার এলএলবি সনদ নিয়ে ২০০৪ সালের ৩০ অক্টোবর প্রথম আলো ও দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে তার এলএলবি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার টেব্যুলেশন শিটে ‘ব্যাপক অনিয়ম’ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।

পরে পত্রিকা দুটির প্রতিবেদন বিষয়ে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে মামলা করেন ফয়েজীর পিতা সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ফয়েজ। এরপর ২০০৫ সালের ২১ মার্চ এ মামলায় রায়ে প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান, প্রকাশক মাহফুজ আনাম, প্রতিবেদক একরামুল হক বুলবুল ও মাসুদ মিলাদকে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

এছাড়া ভোরের কাগজের প্রতিবেদক সমরেশ বৈদ্যকে দুই মাসের কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা এবং পত্রিকাটির ওই সময়ের সম্পাদক আবেদ খান ও প্রকাশক সাবের হোসেন চৌধুরীকে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে আপিল করা হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আপিল শুনানি শুরু হয়।

অন্যদিকে, ফয়েজীর এলএলবি সনদের বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর ২০০৪ সালের ৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায় পরীক্ষায় জালিয়াতি, নম্বরপত্র ও সদনপত্রে অনিয়ম খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

পরে এই কমিটির প্রতিবেদনে ফয়েজীর ব্যাপারে বলা হয় যে, তার প্রিলিমিনারি পরীক্ষার রোল-১৯৩৪, ফাইনাল পরীক্ষার রোল-৩৬৫২। দুই পরীক্ষার অংশগ্রহণের সাল ১৯৮৯। উভয় পরীক্ষাতে ফলাফল দেখানো আছে- তৃতীয় শ্রেণী।

তদন্ত প্রতিবেদনের মন্তব্যে বলা হয়, ‘তার টেব্যুলেশন শিটে ঘষামাজা’।

২০০৭ সালের ৩ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিচারপতি ফয়েজীর এলএলবির সনদ বাতিল করে দেয়। পরের দিন ৪ মার্চ ফয়েজীকে হাইকোর্টের বিচারকাজ থেকে প্রত্যাহার করে নেন প্রধান বিচারপতি। পরে ফয়েজীর এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯ মার্চ তার এলএলবি সনদ বাতিলের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্ট।

পরে একই বছরের ১২ জুলাই সনদ জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ ফয়েজী বিচার কাজ থেকে পদত্যাগ করেন।

এর আগে ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান ফয়েজী। পরে ২০০৬ সালের ২২ অগাস্ট তিনি স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ