৫ হাজার টাকা জরিমানা প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদকের

Court prothom alo আদালত প্রথম আলোসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আদালত অবমাননার দায়ে দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান খানকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া আদালত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।

একই অভিযোগে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা রেখে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করলে আদালত তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহেমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ মিজানুরের জরিমানা করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন।

এর আগে আদালত অবমাননার অভিযোগে জারি করা রুলের ওপর মঙ্গলবার শুনানি শেষ হওয়ার পর আদালত বৃহস্পতিবার রায়ের দিন ধার্য করেন।

বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। ওই দিন আদালতে হাজির হন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।

এ সময় আদালত মতিউর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাকে হেয় করার জন্য এখানে ডাকা হয়নি। আপনি কি প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পড়েছেন? জবাবে মতিউর রহমান বলেন, পড়েছি, প্রকাশ হওয়ার আগেও পড়েছি পরেও পড়েছি। তখন আদালত বলেন, আপনার কি কিছু মনে হয়নি? জবাবে মতিউর রহমান বলেন,  প্রথম আলোর বয়স ১৫ বছর হলো, আমরা সব সময় সতর্ক থাকার চেষ্টা করেছি। কখনোই আদালতকে খাটো করার উদ্দেশ্যে কোনো সংবাদ ছাপা হয়নি। প্রতিদিন ২৪ থেকে ৩২ পৃষ্ঠার পত্রিকা বের হয়। এর প্রতিটি লাইন ব্যাখা করা সম্ভব নয়। ভুল থাকতেই পারে। তারমানে এই নয় যে, আমরা আদালতকে খাটো করার উদ্দেশ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছি।

আদালত সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে নীতিমালা সম্পর্কে জানতে চাইলে মতিউর রহমান বলেন, সরকারের প্রেস কাউন্সিল আছে, প্রেস অ্যাক্ট আছে। এবং সর্বোপরি প্রথম আলোর নিজস্ব আচরণ বিধি আছে।

তখন আদালত জানতে চান সংবাদপত্রে প্রকাশিত লেখার দায় কার, লেখকের না সম্পাদকের? মতিউর রহমান বলেন, যেহেতু আমি সম্পাদক এবং নিবন্ধটি প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছে তাই আমি দায় এড়াতে পারি না।

তখন আদালত বলেন, নিবন্ধটি পড়লে মনে হয় একটি মাত্র বেঞ্চকে উদ্দেশ্যে করেই এটি লেখা হয়েছে এবং এটি হচ্ছে সেই বেঞ্চ যেখানে আপিনি দাঁড়িয়ে আছেন। এই নিবন্ধের ফলে আমার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে। নিবন্ধটি পড়লে মনে হয় আমার প্রতি তার কোনো ক্ষোভ আছে।

জাবাবে মতিউর রহমান বলেন, বিচার বিভাগকে খাটো করার কোনো ইচ্ছে আমাদের নেই, কখনও ছিল না।

এরপর মতিউর রহমানের আইনজীবী শাহদীন মালিক হলফনামা পড়তে শুরু করেন। এ পর্যায়ে জয়নুল আবেদীন আদলতকে বলেন, মিজনুর রহমান খান ক্ষমা চাইছেন নাকি মামলা লড়তে চাইছেন। এ পর্যায়ে শাহদীন মালিক মিজানুর রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করেন। তখন নিবন্ধের লেখক মিজানুর রহমান খান আদালতে কথা বলার অনুমতি চান। তখন আদালত অনুমতি দিলে তিনি বলেন, গত কয়েক দিনে নিজের উপলব্ধি ও আইজীবীরা যারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন তাদের সংবেদনশীলতাকে শ্রদ্ধা করি।    আমি দীর্ঘ দিন ধরে বিচার বিভাগ নিয়ে লেখালেখি করছি। আমার লেখার মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সংস্কারই ছিল মূল উদ্দেশ্য। এই আদালতকে আহত করার উদ্দেশ্য আমার ছিল না। তারপরও কোর্টের যদি মনে হয়, এই নিবন্ধের নির্দিষ্ট কোনো শব্দ বা বাক্য আদালতকে আহত করেছে তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তারপরও যদি কোনো অংশ আদালতকে আহত করে তার পরও আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

এরপর রুলের পক্ষে আদালতের উদ্দেশ্য ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রথম আলো সম্পাদক নিজে আদালতে হাজির হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তখন আদালতও প্রথম আলো সম্পাদককে ধন্যবাদ দেন। এরপর রোকন উদ্দিন বলেন, এখন আর তার বিষয়ে শুনানির দরকার নাই। ৫৭ ডিএলআরে হাইকোর্টে বিচারক নিয়োগের বিষয়ে নির্দেশনা আছে। আদালতের রিপোর্টের জন্য একটি গাইড লাইন থাকা উটিত। আপনার এ বিষয়ে নির্দেশনা দিতে পারেন। এ সময় আদালত তার কাছে জানতে চান, এ বিষয়ে আদালত গাইড লাইন দিতে পারে কিনা? তখন রোকন উদ্দিন বলেন, আপনারা প্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিতে পারলে সংবাদপত্রকে কেন দিতে পারবেন না।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মিজানুর রহমান খানের লেখা ‘মিনিটে একটি জামিন কীভাবে?’ ও ১ মার্চ ‘ছয় থেকে আট সপ্তাহের স্বাধীনতা’ শীর্ষক নিবদ্ধ প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়। পরের দিন ২ মার্চ হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ লেখার জন্য প্রথম আলোর সম্পাদক ও ওই যুগ্ম-সম্পাদকের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এ বিষয়ে রুল জারি করেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ