৭ জেলায় দুর্ঘটনায় নিহত ১৮
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচরে ট্রেনের ধাক্কায় নসিমনের দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। এছাড়া ফেনীতে পিকআপ ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নারীসহ তিনজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ট্রাক-টেম্পু ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে একই পরিবারের পাঁচজনসহ ছয়জন নিহত, কুমিল্লার বুড়িচং ও মুরাদনগ উপজেলায় এক শিশুসহ চারজন, গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় অটোরিকশার এক যাত্রী, গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় এক বৃদ্ধ ও লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে একজন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে বৃহস্পতিবার, এতে আহত হয়েছেন আরও কয়েক জন। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে-
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার কুলিয়ারচরে বৃহস্পতিবার বিকেলে ট্রেনের ধাক্কায় নসিমনের দুই যাত্রী নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, সুনাম উদ্দিন (৬০) ও মুর্শিদ মিয়া (২৩)। তাদের বাড়ি বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়নের মিরেরগাঁও গ্রামে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ৫টার দিকে কুলিয়ারচর রেলস্টেশনের কাছে বড়খার চর রেলক্রসিংয়ে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে একটি বাঁশবাহী নসিমন পড়ে থাকে। নসিমনটি কয়েকজন মিলে ধাক্কা দিয়ে সরানোর সময় কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর এগারসিন্দুর (গোধূলী) ট্রেনটি তাদেরকে ধাক্কা দেয়। এতে নসিমনটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই সুনামউদ্দিন নিহত ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান মুর্শিদ মিয়া। এ ঘটনায় আহত একজনকে ভাগলপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদরের ফতেহপুর রেলক্রসিং এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেলে পিকআপ ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নারীসহ তিনজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। আহতদের ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের শিলারী পদুয়ার মোহাম্মদ হানিফের স্ত্রী সায়রা বেগম (৪০), তাহের উদ্দিনের ছেলে সুজন (৩০) ও জসিম উদ্দিন (৪৫)।
ফেনী সদর থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, মোহাম্মদ আলী এলাকা থেকে অটোরিকশাটি ফেনী শহরে যাওয়ার পথে ফতেহপুর রেলক্রসিং এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ট্রাক-টেম্পু ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে একই পরিবারের পাঁচজনসহ ৬ জন নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে ওই উপজেলার ইসলামাবাদ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী সরাইলের নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বচিউড়া গ্রামের শাহজাহান মিয়া (৪০), তার স্ত্রী রওশন আরা (৩৫), ছেলে সন্তান আশরাফুল (৮), কন্যা সন্তান স্বপ্না (৬) ও কন্যা শিশু রত্না (৪) এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক একই এলাকার দেওড়া গ্রামের আবুল হাসেম (৪২)। এছাড়া টেম্পুর চালককে (৩৫) আশঙ্কাজনক অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী এরশাদ জানান, উপজেলার ইসলামাবাদ এলাকায় সিলেট অভিমুখী সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাক ওভারটেক করতে গিয়ে একই দিক থেকে আসা লবণ বোঝাই একটি টেম্পুকে প্রথমে চাপা দেয়। পরে ভুল পথে (রং সাইড) গিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়া অভিমুখী সিএনজিচালিত অটোরিকশাটির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের তিনজন ছাড়াও সিএনজি চালক নিহত হয়। পরে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিএনজির অপর যাত্রীরা মারা যায়।
দুর্ঘটনার পর ট্রাকের চালক পালিয়ে গেছে। এলাকাবাসী ঘাতক ট্রাকটিকে আটক করেছে। দুর্ঘটনা কবলিত টেম্পু ও দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া সিএনজি অটোরিকশাটিকে ক্রেনের সাহায্যে উদ্ধার করে খাটিহাতা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয়েছে বলে জানান ওসি।
বুড়িচং (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, উপজেলা সদরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় বৃহস্পতিবার শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের কোরপাই এলাকায় বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ১৫ মিনিটে ময়নামতি সেনানিবাস এলাকাগামী একটি মোটরসাইকেলকে বিপরীত দিক থেকে আসা কন্টেইনারবাহী ট্রেইলার ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী জালালউদ্দিন (২৮) নিহত ও জাভেদ (২৫) গুরুতর আহত হন। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৪টায় জাভেদের মৃত্যু হয়। নিহতদের বাড়ি বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের কাকিয়ারচর গ্রামে।
এদিকে, সকাল ৯টায় বুড়িচং উপজেলা সদরের উত্তরপাড়া গ্রামের মাসুদ মিয়ার মেয়ে মাঈশা (৭) স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তা পারাপারের সময় বুড়িচং-মীরপুর সড়কে একটি অটোরিকশা চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সে স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলের ১ম শ্রেনীর ছাত্রী।
অন্যদিকে, মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ-মুরাদনগর সড়কের রামধনীমুড়ায় বৃহস্পতিবার বিকেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মাহবুব আলম (৯) নামে এক শিশু নিহত হয়। সে রামধনীমুড়া গ্রামের কাঠ মিস্ত্রী আলাউদ্দিনের ছেলে।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় অটোরিকশার এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও একজন। আহত যাত্রীকে মাওনা চৌরাস্তার আলহেরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, শ্রীপুরের জয়নাবাজার থেকে একটি অটোরিকশা ভালুকার মস্টারবাড়ীর দিকে যাওয়ার পথে ওই সড়কের নাসিরগ্লাস কারখানার সামনে ময়মনসিংহগামী যাত্রীবাহী শ্যামলী বাংলা পরিবহন নামের একটি বাস পেছন দিক থেকে অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় অটোরিকশাটি যাত্রীসহ রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে অটোরিকশার অজ্ঞাত পরিচয়ের এক যাত্রী নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। আহত যাত্রীকে মাওনা চৌরাস্তার আলহেরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় সড়কের উভয়পাশে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে মাওনা হাইওয়ে থানা ও ভালুকার ভরাডোবা হাইওয়ে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধকারীরা অবরোধ তুলে নেয়।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় জনাব আলী (৭০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের মাঝিপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জবান আলী গাইবান্ধা সদরের সাহাপাড়া ইউনিয়নের চকচকা গ্রামের বাসিন্দা।
পলাশবাড়ী থানার এসআই হাসান জানান, জনাব আলী ব্যক্তিগত কাজে বাইসাইকেলে করে গাইবান্ধা যাচ্ছিলেন। তিনি গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের মাঝিপাড়া মোড়ে পৌঁছালে গাইবান্ধা থেকে বগুড়াগামী একটি মাইক্রোবাস তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি জানান, রায়পুর-চাঁদপুর সড়কের খাইলারপুল এলাকায় বৃস্পতিবার ভোরে সড়ক দুর্ঘটনায় দিন মোহাম্মদ জমদ্দার (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হন আব্দুল আওয়াল (৪৫) ও আমিন উল্যা (৪০)। তাদেরকে লক্ষ্মীপুর সদর সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রায়পুর থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি মালবাহী পিকআপভ্যান ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দিন মোহাম্মদের মুত্য হয়। গুরুতর আহত হন দুজন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠান।
রায়পুর থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকতা (ওসি) রুপক কুমার সাহা জানান, পুলিশ পাঠিয়ে অটোরিকশা ও পিকআপটি উদ্ধার করা হয়েছে। চালক দুজনই পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি।