অটিস্টিক শিশুরা অমূল্য সম্পদ : প্রধানমন্ত্রী
অটিস্টিক শিশুদের জীবনযাত্রা সহজ করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অভিভাবকসহ সবার ‘মানসিকতা’ পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একটু ভালবাসা এই শিশুদের জীবন আরো একটু সহজ করতে পারে।
ষষ্ঠ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অটিস্টিক শিশুরা আমাদের বোঝা নয়। তারা আমাদের জন্য অমূল্য সম্পদ। তাদের মেধা কাজে লাগাতে হবে।”
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।আলোচনার পর অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে বেসরকারি উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সরকারিভাবে তো আমরা করবই। বেসরকারি খাতে যারা এ জন্য কাজ করছে, তাদের কীভাবে সহায়তা করা যায়- তা জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে করা হবে।”
এ জন্য আগামী বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার কথাও বলেন সরকার প্রধান।
এবারের বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের স্লোগান- ‘অটিজম-জীবনের সাহসী যাত্রা’।
অটিস্টিক শিশুদের সমান অধিকার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অনেক অভিভাবক তাদের অটিস্টিক শিশুকে সবার সামনে আনতে চান না। স্কুলে পাঠাতে চান না। এই প্রবণতা পরিহার করতে হবে।”
“অটিস্টিক শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে লেখাপড়া শিখবে। এরা যতো স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে মিশবে, ততো স্বাভাবিক আচরণ শিখবে”, বলেন তিনি।
অটিস্টিক শিশুদের সমাজের মূল ধারায় যুক্ত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অটিস্টিক শিশুরা আমাদের বোঝা নয়। তাদের আমরা বোঝা মনে করি না। এ ব্যাপারে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।”
অটিস্টিক শিশুদের প্রতি আরো মনোযোগী ও সংবেদনশীল হওয়ার আহবান জানানোর পাশাপাশি তাদের ‘আরো ভালোবাসা’ দেয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
প্রতিবন্ধীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে তিনি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে এই শিশুদের আরো বেশি সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্ব দেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জানান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী অর্থ বছরে এই কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
“সুস্থ খেলোয়াড়, সুস্থ মানুষেরা যা না পারে, প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়রা তার চেয়ে বেশি পারে। বিশেষ অলিম্পিকে তারা বেশি স্বর্ণ নিয়ে আসে।”
বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিস্টিক শিশুদের প্রাথমিক সেবা দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেন্টার ফর নিউরো ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তিনি জানান, সরকার জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে অধিদপ্তরে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী তার মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুলের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব রণজিত কুমার বিশ্বাস।
আলোচনা অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী অটিস্টিক শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
এছাড়া মিলনায়তনের বাইরে সেন্টার ফর নিউরোডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন, স্কুল ফর গিফটেড চিলড্রেন, অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, সোসাইটি ফর দ্যা ওয়েলফেয়ার অফ অটিস্টিক চিলড্রেন, সুইড বাংলাদেশ, প্রয়াস এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের স্টলও ঘুরে দেখেন তিনি।