মোবারক রকিবের পথেই হাঁটছেন !

Abdul mobarok আব্দুল মোবারকসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ এখন আমেরিকায় অবস্থান করছেন। উপজেলা নির্বচন চলাকালে তার এ ছুটিতে যাওয়াটা রহস্যাবৃত। তার অনুপস্থিতে রুটিন মাফিক দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আব্দুল মোবারক। তবে তার বিরুদ্ধেও উঠেছে অনিয়ম, সরকারের প্রতি আনুগত্য এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ।

ইসি সূত্রে জানা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ দেড় মাসের ছুটিতে এখন আমেরিকায় অবস্থান করছেন। এমনই এক সময় তিনি ছুটিতে গেলেন- যখন দেশে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুই দফা নির্বাচন হয়েছে। শনিবার তৃতীয় দফায় ৮২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ।

৫ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচন এবং এতে কাজী রকিবের ভূমিকা ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। তার অনুপস্থিতে রুটিন মাফিক দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আব্দুল মোবারক। রকিব উদ্দিনের মতো তার বিরুদ্ধেও উঠছে অনিয়ম, দায়িত্বে অবহেলা, সরকারের প্রতি আনুগত্য ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ। তিনি যেন রকিব উদ্দিনের পথেই  হাঁটছেন। কাজী রকিব উদ্দিনের ছুটির পর নির্বাচনে আব্দুল মোবারকের ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা এবিসি নিউজ বিডিকে এমন মন্তব্য করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন- কাজী রকিবের জায়গায় আব্দুল মোবারকের দায়িত্ব গ্রহণে আশান্বিত হওয়ার কিছু্ নেই। তিনি কাজী রকিবের সব অনিয়ম ও অপকের্মের অংশীদার। কাজী রকিবের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি নির্বাচন পরিচালনা করছেন। সরকারের আদেশ-নির্দেশ বাস্তবায়ন করছেন। জনগণের দৃষ্টি ভিন্নদিকে ফেরাতেই কাজী রকিবের  সাময়িক প্রস্থাণ, মোবারকের প্রবেশ। আসলে তারা একই ‍মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গের কারণে কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের নিজস্ব ক্ষমতাকে অর্থহীন বলে সমালোচিত হয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ।

৯১ই ধারা বিলোপের ফলে প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘন বেড়ে যাবে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেছিলেন, ‘সবাই এ আইনের ভয়েই আচরণবিধি মেনে চলতেন, তা বলা যাবে না।’ এতে ইসির ক্ষমতা কমে যাবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায় না, তা রেখে লাভ কী?’

নির্বাচন কমিশন এখন নিজেকে যথেষ্ট শক্তিশালী ভাবছে কি না- সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে সিইসি জবাব দেওয়ার আগেই নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেছিলেন, ‘ইসি যথেষ্ট শক্তিশালী’।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে অন্য প্রার্থীদের বিপুল পরিমাণ অভিযোগ জমা পড়লেও এ ব্যাপারে একেবারেই নীরব ভূমিকা পালন করছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ, হুমকি প্রদর্শন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আপত্তিকর কর্মকাণ্ডের অভিযোগসহ ভোট পুনঃগণনা ইত্যাদি সংক্রান্ত প্রায় ১৫ থেকে ২০টি অভিযোগ প্রতিদিন নির্বাচন কমিশনে জমা পড়ে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। কিন্তু এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে নির্বাচন কমিশন এগুলোর কোনোটাই আমলে নেয় না। এসব ব্যাপারে কোনো দায়বদ্ধতা আছে কিংবা তাদের কিছু করার আছে বলে মনে করে না নির্বাচন কমিশন। বরং কোনো অভিযোগ বা আপত্তি পেলে তা যাচাই-বাছাইসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েই দায়মুক্ত থাকতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অভিযোগেরও গুরুত্ব দিচ্ছে না ইসি।

নির্বাচনের বিভিন্ন জায়গায় অনিয়মের ব্যাপারে বিএনপির অভিযোগের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) রুটিন দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনার মো. আব্দুল মোবারক বলেছেন, কারো মুখে লাগাম নেই। যে যা ইচ্ছা বলছেন, সবার কথা শুনতে হবে- এমন কোন কথা নেই।

টাঙ্গাইল-৮ শূন্য আসনের নির্বাচন নিয়ে বৃহস্পতিবার আইন-শৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা আইন শৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন দিক নিয়ে পরামর্শ করেছি। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে সে বিষয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

মোবারকের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তিনি জনগণের কথা শুনতে বাধ্য। যদি না শুনেন তা অগণতান্ত্রিক। আমাদের দেশে ভোট না দিলে শাস্তির বিধান নেই- এটা যেমন সত্য, বর্তমান কমিশন নির্বাচনের সুষ্ঠ পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারা নিয়েও অনেক অভিযোগ আছে।’

কাজী রকিবের মতো নির্বাচন পরিচালনায় আব্দুল মোবারকের ভূমিকায় স্বচ্ছতা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহদিক এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘রকিব উদ্দিনের মতো আব্দুল মোবারকও বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। মোবারক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছাও দেখছিনা। বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগ মুহুর্তে এ গ্রেফতার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ গ্রেফতারে নির্বাচন কমিশনের নীরবতা সন্দেহজনক।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ