আপিলে এবার সাঈদীর পালা
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আপিল বিভাগ। সর্বোচ্চ আদালতের (সামার ভেকেশনের) ছুটির কারণে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাঈদীর মামলায় আপিল শুনানি মুলতবি রয়েছে। ঘোষিত ভ্যাকেশন (ছুটি) চলবে দুই সপ্তাহ। দুই সপ্তাহ পর খুব দ্রুতই সাঈদীর মামলায় আপিল শুনানির কার্যক্রম শেষ হবে। তারপরই মামলার সর্বশেষ পর্যায় রায় ঘোষণা এবং কার্যকরের পালা।
ট্রাইব্যুনালে মামলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করা হয়। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বর মাসে আপিল বিভাগে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় ফাঁসির দণ্ড ঘোষণার পর সরকার তা কার্যকর করেছে।
এ বিষয়ে সরকারের অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের সমন্বয়ক এমকে রহমান এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টের আপিলে সাঈদী ছাড়া আরও ছয়টি মামলা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু সাঈদীর মামলার কার্যক্রম সবচেয়ে এগিয়ে। অন্য কোনো মামলার শুনানি এখনও শুরুই হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘তবে শুধুমাত্র সাঈদীর মামলায় আসামিপক্ষের আর্গুমেন্ট (যুক্তি) শুনানি শেষ করে রাষ্ট্রপক্ষের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করি, সামার ভ্যাকেশনের পরে রাষ্ট্রপক্ষের আর্গুমেন্ট দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। আপিলে মামলায় আর্গুমেন্ট (যুক্তি) খণ্ডনের পরের পর্যায় হলো রায় ঘোষণা।’ তবে রায় কবে নাগাদ দেওয়া হবে তা বলেননি তিনি।
এমকে রহমান বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টের অবকাশ শেষ হলেই সাঈদীর মামলার আপিলের কার্যক্রম শেষ হবে। সে হিসেবে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার পরেই দলটির নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসইন সাঈদীর রায় ঘোষণার এবং কার্যকরের পালা।’
ট্রাইব্যুনালের জোষ্ঠ ও সাঈদীর মামলায় দ্বায়িত্বরত প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টের অবকাশ শেষ হলে হয়ত্ আরও এক সপ্তাহ রাষ্ট্রপক্ষের আর্গুমেন্ট (যুক্তি) খণ্ডন চলতে পারে। তার পরবর্তী পর্যায় হল (সিএবি) রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখার পালা। সে হিসেবে অন্য কোনো মামলা আর শুনানির পর্যায়ে নেই। তাই সাঈদীর মামলার রায় আগে হতে পারে। কাদের মোল্লার পর এবার সাঈদীরই পালা বলা যেতে পারে।’
সৈয়দ হায়দার আলীর সঙ্গে একমত পোষণ করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান খান এবিসি ইনিউজ বিডিকে বলেন, ‘সাঈদীর মামলায় এক সপ্তাহ রাষ্ট্রপক্ষের আর্গুমেন্ট (যুক্তি) খণ্ডন চলতে পারে। তার পরবর্তীতে (সিএবি) রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখার পালা। সে হিসেবে এপ্রিলে না হলেও মে মাসে সাঈদীর মামলার রায ঘোষণা হতে পারে।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের অন্যতম একটি ছিল যুদ্ধাপরাধের বিচার। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বিচার কার্যক্রম শুরু হয়ে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১০টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলার কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। আরও চারটি মামলার কার্যক্রমও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
ট্রাইব্যুনালে ১০টি মামলায় মাওলানা আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ড, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন, (আপিলের রায়ে পরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর), আরেক সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড, নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড, সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের ৯০ বছরের কারাদণ্ড ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড, চৌধুরী মুঈন উদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও এমপি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড ও আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে আরেক বিএনপি নেতা আব্দুল আলীমের মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
অন্যদিকে প্রথম ধাপে মামলার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর অপেক্ষমান রায় ঘোষিত না হওয়ায় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ফজলে কবীরের মেয়াদ শেষে তিনি অবসরে গেলে তার স্থানে অন্য বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাই নিয়ম অনুযায়ী নিজামীর দ্বিতীয় ধাপের যুক্তি খণ্ডন শেষ হওয়ার অপেক্ষায়।
নিজামীর পরবর্তী পর্যায়ে আব্দুস সোবহান, মীর কাশেম আলী, এটিএম আজহার ও আওয়ামী লীগ নেতা মোবারকে হোসেন এবং বিএনপির নেতা নগর কান্দার মেয়র জাহিদ খোকনের মলার কার্যক্রম দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আইন অনুযায়ী মামলাগুলো সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি করার কথা। সে হিসেবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যাবজ্জীবন দণ্ড থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে। তার কিছুদিন পরই নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।
প্রসিকিউটর হায়দার আলী বলেন, ‘আব্দুল কাদের মোল্লার আপিলে যে সময় লেগেছে সাঈদী বা অন্যান্য মামলায় ততো সময় নাও লাগতে পারে।’
ট্রাইব্যুনালে আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় রায় ঘোষণার পর দণ্ডের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করার বিধান থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। পরে ট্রাইব্যনাল আইন সংশোধন করা হয়। যদিও ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করার পর আপিল নিষ্পত্তির জন্য দুই মাস অর্থাৎ ৬০ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু কাদের মোল্লার মামলায় ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর আপিল শুনানি শেষ করতে সময় লেগেছে ৫৬ দিন।
এদিকে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিসহ বিভিন্ন মহল থেকেও রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জোরালো হচ্ছে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার নিষ্পত্তির পরে পর্যাযক্রমে অধ্যাপক গোলাম আযম, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মো. কামারুজ্জামানের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।
পরের ধাপে শুনানির জন্য আসতে পারে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আব্দুল আলিমের আপিল আবেদন। তবে আবুল কালাম আযাদ ও আল বদর নেতা চৌধুরী মুঈন উদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করা হয়নি।