তৃতীয় দফায় যে কারণে জাপা বোল্ডআউট
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ উপজেলা পরিষদের প্রবর্তক সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। অথচ চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দু’দফায় তার দলের শোচনীয় পরাজয়। পরাজয় এড়াতে পরবর্তি রাউন্ডে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। চেষ্টাও করেনি। তাই তৃতীয় দফার নির্বাচনে তারা শুধু শোচনীয়ভাবে পরাজিতই হয়নি, ক্লিন বোল্ড আউট! কিন্তু কেন এ ভরাডুবি?
জাতীয় পার্টিসহ একাধিক সূত্র জানায়, চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বিপর্যয় ঘটে। দুই দফায় ২১১ উপজেলায় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চরম বিপর্যয় হয়েছে। মাত্র দুই জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এরপরও ১৫ মার্চের নির্বাচন উপলক্ষে কোনো প্রস্তুতি ছিলনা জাতীয় পার্টির। কেন্দ্র থেকে কাউকে সমর্থন দেওয়া হয়নি। কোনো কোনো উপজেলায় ছিলেন দলের একাধিক প্রার্থী। আবার কোনো উপজেলায় দলের প্রার্থীই নেই। এসব ক্ষেত্রে ছিলনা কেন্দ্রের কোনো নির্দেশনা। পার্টিতে বিরাজ করছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এ কারণে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ৮১টি উপজেলায় একটি পদেও তারা জয়লাভ করেনি।
সূত্র মতে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এরশাদ ও রওশনের টানাপড়েনের কারণেই মূলত দলটির তৃণমূল পর্যায়ে এ লেজেগোবরে অবস্থা। এরশাদ বা রওশন কেউই উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি।
জানা যায়, প্রথম পর্যায়ে এরশাদ সমর্থিত কেউ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেননি। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় দলের একমাত্র প্রার্থী এইচএম গোলাম শহীদ রঞ্জু জিতলেও তার প্রতি সমর্থন ছিল না এরশাদের। ব্যক্তি ইমেজে জিতেছেন তিনি।
সামগ্রিকভাবে পার্টির পরাজয়ের কারণ নেতৃত্বের বিরোধ, সংশয় ও যোগ্য প্রার্থী দিতে না পারা। আর রওশন এরশাদ ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মধ্যে নেতৃত্বের বিরোধ জিইয়ে রেখেছেন পার্টির কয়েক নেতা। তারা চান, পার্টিতে রওশনের কর্তৃত্ব। তবে সারাদেশে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চান এরশাদকে। নেতৃত্বের এ দ্বন্দ্ব নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি করছে। এর প্রভাব পড়েছে দলে। ভোটের রাজনীতিতে তাই পিছিয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টি।
এদিকে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত তাদের দলীয় প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে দলের অবস্থান শক্ত করে নিচ্ছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং সংসদে আজ্ঞাবহ বিরোধীদলীয় নেতা পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদের দ্বন্দ্বকেই দায়ী করছেন তারা। নেতাকর্মীরা আরও বলছেন, তারা দু’জন এক হতে না পারার কারণে কেন্দ্র থেকে প্রার্থীর সমর্থন দেয়া সম্ভব হয়নি।
তৃণমূল নেতাদের আরও অভিযোগ, শুধু এরশাদ-রওশন দ্বন্দ্বই নয়, দলের চৌকশ নেতাদের কোণঠাসা করে রাখায়ও পার্টির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নেয়া- না নেয়াসহ গুরুত্বপূর্র্ণ ইস্যুতে এরশাদের বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনকে ভালো চোখে দেখেননি এরশাদ ভক্তরাও। এরশাদ পারেননি দলের ভাঙন ঠেকাতে। এসব নেতিবাচক ঘটনাও উপজেলা নির্বাচনকে প্রভাবিত করে।
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দল সঙ্কটে ছিল। আমাদের সংগঠিত হতে কিছুটা সময় লাগছে। তবে পরের পর্বগুলোতে আমরা ভাল করবো।’
উপজেলা পরিষদ কনসেপ্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। অথচ তার দলের আজ দুরবস্থা- এ প্রশ্নের জবাবে মসিহ বলেন, ‘উপজেলা বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দল শুধু সমর্থন দেয়। মনোনয়ন দেয় না। আমরা তৃণমূল থেকে দল গোছানোর কাজ শুরু করবো। তবে তা পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে।’
জাতীয় পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপিকা মাসুদা রশীদ চৌধুরী এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের ভুল বোঝাবুঝি, সিদ্ধান্তহীনতা, সমন্বয়হীনতা এখনো দূর হয়নি। এ কারণে উপজেলা নির্বাচনে এ ফলাফল।’