লং মার্চ এ আওয়ামী লীগের নাশকতার আশংকা

5937_1

হেফাজতে ইসলামের ঢাকা চলো কর্মসূচি করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের বিভাগীয় ও জেলা স্তরে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে বিশ্বস্ত কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এমন সিদ্ধান্তের ফলে তৃণমূল স্তরে সরকারি দলের মারমুখী অবস্থানে ভীত পরিবহন মালিকরা লং মার্চকারীদের বাসভাড়া দিতে নিজেদের অক্ষমতার কথা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে পায়ে হেঁটে হলেও ঢাকা চলো সফল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হেফাজতের নেতারা আশঙ্কা করছেন, শাহবাগকারী গণজাগরণ মঞ্চ ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির (ঘাদানিক) ব্যানারে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নাশকতা চালাতে পারে।

ধর্ম বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রচারের প্রতিবাদসহ ১৩ দফা দাবিতে আগামী শনিবার এই ঢাকা চলো কর্মসূচি করতে যাচ্ছে দেশের বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলামী।

গত মার্চে এই কর্মসূচি ঘোষণা করার পর থেকে সরকার নানাভাবে এই গোষ্ঠীটির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছে।

তবে দাবি পূর্ণ না করা পর্যন্ত কর্মসূচির নড়চড় হবে না বলে জানিয়েছে হেফাজত। সবশেষ গত রবিবার রাতেই প্রধানমন্ত্রীর এক প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দিয়ে চট্টগ্রামে হেফাজত প্রধান আল্লামা শফীর কাছে গিয়েছিলেন বন ও পরিবশে মন্ত্রী এবং চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ। তবে তাকেও নিরাশ করেছেন শফী।

এরপর সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ বৈঠকে বসেন ড. হাছান মাহমুদ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিশেষ বৈঠকে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল আলম হানিফ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এনায়েতুল্লাহ খানকে ডেকে পাঠানো হয়।

পরিবহন মালিকরা যাতে ঢাকামুখী যানবাহন ভাড়া না দেন, সে বিষয়ে কড়া নজর রাখতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।

পরে বুধবার দুপুরে সরকারের উচ্চস্তর থেকে ডেকে পাঠানো হয় লীগপন্থী সংগঠন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ও গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে।

পরে বৃহস্পতিবার সকালে ঘাদানিকসহ ২৭টি সংগঠনের তরফে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদেশে  হরতালের ঘোষণা দেন জনাব বাচ্চু। গণজাগরণ মঞ্চের তরফে এই সময়কালে অবরোধের ঘোষণা আসে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে সারা দেশে নির্দেশ দেয়া হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চসহ এই ২৮টি সংগঠনের ব্যানারে ঢাকামুখী হেফাজতকর্মীদের ‘প্রতিহত’ করার জন্য।

সরকার সমর্থক সংগঠনগুলোর এই হরতাল ঘোষণার পর থেকে বিপাকে পড়ে যান পরিবহন মালিকরা। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে গাড়ি বের করতে তারা অপরাগতা জানান। ইতোমধ্যে নেয়া বুকিং মানি ফেরত দিতে শুরু করেছেন পরিবহন মালিকরা।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, হরতাল প্রত্যাহার না হলে পায়ে হেঁটে ইসলামপ্রিয় মানুষেরা এই লংমার্চ কর্মসূচি সফল করবে।

অন্যদিকে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজত প্রধান জনাব শফী বলেন, সরকারপন্থীরা হরতাল প্রত্যাহার না করলে রবিবার থেকে লাগাতার হরতাল দেবে হেফাজত।

এদিকে, চট্টগ্রামে হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি তৃণমূলে এই ‘প্রতিহতে’র ঘোষণার ফলে তারা নাশকতার শঙ্কা করছেন।

লংমার্চ প্রস্তুতির দায়িত্বে থাকা নেতারা বলছেন, সরকারের লোকেরা পথিমধ্যে বাধা দিলে বা হামলা করলে আল্লামা শফীর নির্দেশ রয়েছে পাল্টা সহিংস না হয়ে ‘আল্লাহর জিকির করতে করতে পথে অবস্থান নেয়া’।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ