খালেদা ও তারেকসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।
ঢাকার বিশেষ জজ-৩ এর বিচারক বাসুদেব রায় বুধবার বিকেলে এ আদেশ দেন।
খালেদা ও তারেক ছাড়া অপর যে সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তারা হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
এদের মধ্যে খালেদা দুটি মামলারই আসামি। তারেক, কামাল, শরফুদ্দিন, মমিনুর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আসামি। আর জিয়াউল, মনিরুল, হারিছ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আসামি। পলাতক আছেন হারিছ চৌধুরী, কামালউদ্দিন ও মনিরুল। তারেক রহমান আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেন। বাকি সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালতের প্রতি আনাস্থা ও হট্টগোল
খালেদা জিয়া আদালতের এজলাসে প্রবেশ করেন দুপুর ১ টা ২ মিনিটে। আদালতের অনুমতি নিয়ে একটি চেয়ারে বসেন তিনি। এরপর তার আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন আদালতকে জানান, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা মহামান্য আপিল ডিভিশনে বিচারাধীন। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন। আইন হলো, উচ্চ আদালতে মামলার কোনো বিষয়ে যদি শুনানি থাকে তবে নিম্ন আদালত মামলার বিচারকাজ করতে পারবেন না।
আসামি পক্ষের এ বক্তব্যের বিরোধীতা করেন দুদকের প্রধান আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। তিনি আদালতকে বলেন, দুই বছর ধরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য সময় নিচ্ছেন আসামি পক্ষ। তারা বারবার আদালতকে বলে আসছেন, উচ্চ আদালতকে থেকে আদেশ নিয়ে আসবেন। আর জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আদেশ আনার জন্য অন্তত দশটি ধার্য তারিখে সময় নিয়েছেন আসামি পক্ষ। কিন্তু তারা উচ্চ আদালত থেকে কোনো ধরণের আদেশ আনতে পারেনি। যে কারণে দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করা হোক।
কাজলের আবেদনের পর আদালত আদেশ দেন, আসামি পক্ষের সময় আবেদন নামঞ্জুর করা হলো। আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হবে। সময় তখন দুপুর ১টা ৩০ মিনিট। বিচারক বাসুদেবের এ বক্তব্যের পর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বিচারককে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দিতে থাকেন। এতে বিচারক বিব্রত হয়ে এজলাস ত্যাগ করেন। এরপর আসামি পক্ষের আইনজীবী সানাউল্লা মিয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহাসিন মিয়া, মোসলেহ উদ্দিন জসিম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার বিচারকের খাস কামরায় যান। প্রায় এক ঘণ্টা বিচারকের রুমে ছিলেন তারা। বেরিয়ে এসে খালেদা জিয়ার সামনেই ঘোষণা দেন, এ বিচারকের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই। তার এ বক্তব্যের এক ঘণ্টা পর বিচারক বাসুদেব আবার এজলাসে আসেন।
এ সময় আসামি পক্ষে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতকে বলেন, আমাদের সময় আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। এর বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আমাদের আরও আবেদন রয়েছে। প্রথমটি হলো, সময় আবেদন নামঞ্জুরের আদেশ পুনর্বিবেচনার, মামলার দায় হতে আসামির অব্যাহতির আবেদন আছে। এসব আবেদন নিষ্পত্তি করে আপনি পরবর্তী কার্যক্রমে যাবেন। এ সময় বিচারক কথা বলতে থাকলে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা চিৎকার করতে থাকেন। এতে বিচারক দ্বিতীয় দফায় এজলাস ত্যাগ করেন। এর মিনিট দশেক পর ওই আদালতের পেশকার আরিফ আসেন এজলাস কক্ষে।
তিনি বলেন, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আগামী ২১ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণের শুনানি। এরপর আসামি খালোদ জিয়া তার আইনজীবীদের জিজ্ঞাসা করেন, অভিযোগ গঠন করতে হলে আসামির কাছে জিজ্ঞাসা করতে হয়, আপনি দোষী না নির্দোষী। কই, আমাকেতো কিছুই জিজ্ঞাসা করলেন না বিচারক।
উল্লেখ্য, শুনানির পুরো সময় জুড়ে ধরে সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস আদালতে উপস্থিত ছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা খালেদা জিয়া এজলাসের মধ্যে বসে ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন
খালেদার আইনজীবী ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, সরকারের নির্দেশে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন বলেন, আইন অমান্য করে খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করায় এই বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করা হবে। তাকে প্রত্যাহারের দাবিও জানাচ্ছি।
অপরদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, আইন মেনেই বিচারক খালেদাসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ চার আসামির বিরুদ্ধে দেয়া দুদকের অভিযোগপত্র গত ১৫ জানুয়ারি আমলে নিয়েছেন আদালত। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। এজহারে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানম নামে এক মহিলার কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। তবে জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে, যা কাগজপত্রে উল্লেখ করা হয়। এই টাকার বৈধ কোনো উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি। ২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চার জনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খান।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১০ সালের ৫ আগস্ট বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। অভিযোগপত্র দেওয়ার পর ২৬ টি ধার্য তারিখ পার হলেও আইনি মারপ্যাচে খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। সর্বশেষ এ মামলায় খালেদা জিয়া গত বছরের ১১ অক্টোবর আদালতে হাজিরা দেন। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এ অনিয়মের অভিযোগে এ মামলাটি দায়ের করে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৩৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।