ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সাংবিধানিক ও আইনি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন আহমেদ খান।
চতুর্থ পযায়ে উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রথম ও দ্বিতীয় দফার চেয়ে তৃতীয় দফার নির্বাচনে সহিংসতা, ভোট জালিয়াতির ঘটনা বেশি ঘটেছে। ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কমিশন অ্যাকশন নিতে পারেনি। তারা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হয়েছে। এর দায় কমিশনকেই নিতে হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
দেশে চলমান উপজেলা নির্বাচনে সুস্পষ্টভাবে রাজনৈতিক দলগুলো আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করে সংগঠনটির বক্তারা।
তারা বলেন, উপজেলা নির্বাচন বিধির ৩ ধারা অনুসারে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন কিংবা প্রার্থীকে কোনোভাবে প্রভাবিত করতে পারবে না উল্লেখ থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো তা মানছে না।
বক্তারা অভিয্গে করেন, বিধি মোতাবেক স্থানীয় নির্বাচন পদ্ধতি নির্দলীয় হওয়ার কথা থাকলেও দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন বা প্রার্থীদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছে রাজনৈতিক দলগুলো। পাশাপাশি নির্বাচনে একক প্রার্থী নির্ধারণের জন্য মনোনীত বা নির্ধারিত প্রার্থী ছাড়া অন্যদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চাপ প্রয়োগ এবং বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। সরকারি কর্মকর্তা ও প্রশাসন তাদের কথা শুনছে না।’
নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার আব্দুল মোবারকের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যদি তারা সাফাই গায় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, এ ধরনের সহিংসতা হতেই পারে- তাহলে আর বলার কিছু থাকে না।’
সুজন ও তাকে নিয়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও নেতার বিরূপ মন্তব্যের জবাবে বদিউল আলম বলেন, ‘যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, তখন অভিযোগ করা হতো আমরা আওয়ামী লীগের, এখন বলা হচ্ছে বিএনপির। কেউ কেউ আবার আমাদের জামায়াত বানানোরও চেষ্টা করছে।’
আসলে আমরা কোনো দলের নই। আমরা নাগরিকদের পক্ষে কথা বলি বলে দাবি করেন সুজন সম্পাদক।
সুজনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সিইসির অনুপস্থিতি ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না।’
ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কতজন আহত হলে, কতজন নিহত হলে, কত ভোট-ব্যালট পেপার ছিনতাই হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না- কমিশনকে বলতে হবে। এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে হালকা করার চেষ্টা দুঃখজনক।’
সংবাদ সম্মেলনে চতুর্থ দফা উপজেলা নির্বাচনে হলফনামায় দেওয়া ৩৭৯ চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এ নির্বাচনে ৫২.৭৭ শতাংশ বা ২০০ জন উচ্চশিক্ষিত প্রার্থী থাকলেও মাধ্যমিক সনদ নেই ১৬.৩৬ শতাংশ বা ৬২ জন প্রার্থীর। অর্থাৎ, বিদ্যালয়ের সীমানা পার হতে পারেননি তারা।
অন্যদিকে, ৩৭৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ২২৬ জনের পেশা ব্যবসা হওয়ায় জনপ্রতিনিধিত্বে আবারও বণিকায়নের মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা করেছে সুজন।
এছাড়া মোট প্রার্থীর মধ্যে ১১৩ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা আছে আর ১৫৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা ছিল অতীতে। অতীত ও বর্তমানে মোট ৪৭ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় মামলা আছে। এর মধ্যে ২ জনের অতীত ও বর্তমান উভয় সময়ই ৩০২ ধারার মামলা রয়েছে।
চতুর্থ দফা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি, নির্বাচনী সহিংসতা-মৃত্যু, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ও বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুজন।
সুজনের তথ্যমতে, এ যাবত তিন ধাপের নির্বাচনে মোট ৭১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া সহিংসতার ঘটনায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা ও নির্বাচনের দিন নোয়াখালী সদর উপজেলার নির্বাচন স্থগিতের কথা জানিয়েছে সুজন।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের যুগ্ম সমন্বয়কারী সানজিদা হক বিপাসা। তিনি উপজেলা নির্বাচনের সার্বিক দিক তুলে ধরে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান এবং ভোট জালিয়াতি রোধে সংবিধান এবং আইনে যথেষ্ট ক্ষমতা থাকলেও নির্বাচন কমিশন তা প্রয়োগ করছে না। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের তুলনায় তৃতীয় দফার নির্বাচনে সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল ও ব্যালেট পেপার ছিনতাইসহ বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনা পূর্বের সব ঘটনাকে ছাপিয়ে গেছে।’