জামায়াতের বাইরেও ১৩ জনের তদন্ত চলছে
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও ১৩ ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। যারা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন ১৩ জনের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধেই তদন্ত প্রায় শেষের পথে। তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন এবছরের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে জমা দেবেন বলে জানা গেছে। তবে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রস্তুত রয়েছে, যে কোনো সময় তা প্রসিকিউশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে।
এছাড়া ইতিমধ্যেই চিফ প্রসিকিউটর আট ব্যক্তির মামলা পরিচালনার জন্য প্রসিকিউটর নির্দিষ্ট করে সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তদন্ত সংস্থার সূত্রমতে, ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির সাকে এমপি সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। কিশোরগঞ্জের সৈয়দ মো. হোসেন ওরফে হাছেন আলীর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ জুন থেকে তদন্ত করছেন হরি দেবনাথ এবং আদালতে মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর আবুল কালাম আযাদ।
এছাড়া তালিকায় রয়েছেন রাজশাহীর লাহার আলী শাহ। তার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১ অক্টোবর থেকে তদন্ত করছেন মো. আতাউর রহমান। এ মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম। পিরোজপুরের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১৯ মে থেকে তদন্ত করছেন মো. হেলাল উদ্দিন। মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম।
যশোরের জাতীয় পার্টির নেতা মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনও রয়েছেন এ তালিকায়। তার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১এপ্রিল থেকে তদন্ত করছেন মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। নেত্রকোনার আতাউর ননীর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ জুন থেকে তদন্ত করছেন মো. শাহজাহান কবির এবং মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি।
জামালপুরের আশরাফ হোসেনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ জুন থেকে তদন্ত করছেন মতিউর রহমান এবং মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল।
বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল ইসলাম ওরফে সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২১ মে থেকে তদন্ত করছেন মো. হেলাল উদ্দিন এবং মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর সৈয়দ সায়েদুল হক।
রাজাকারের তালিকায় আট নম্বরে রয়েছেন কিশোরগঞ্জের মো. নাসির। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ জুন থেকে তদন্ত করছেন মো. আতাউর রহমান এবং মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর শেখ মোশফেক কবির।
তদন্ত সংস্থার তথ্যমতে, তদন্তাধীন অপরাধীদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত করতে গিয়ে মামলার সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জব্দ এবং সাক্ষীদের কাছ থেকে জবানবন্দি গ্রহণ করা হচ্ছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা সানাউল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত সংশ্লিষ্ট ছাড়া আরও ১৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে নাসির ও সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রায় শেষ হওয়ার পথে। এপ্রিল মাসেই এ দুজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি আরও ছয়জনের তদন্ত প্রতিবেদন মে মাসের মধ্যে দাখিল করা সম্ভব হবে।’
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব এলাকায় বেশি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল সেসব স্থানও পরিদর্শন করেছেন তারা।
রাজাকার কমান্ডার ও বর্তমান জাতীয় পার্টির নেতা মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন যশোরের কেশবপুরের চিংড়া, বগা, ভাণ্ডারখোলা ও গৌরীঘোনা এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ২৯ জনকে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে মো. নাসিরের বিরুদ্ধে।
তদন্ত সংস্থা সূত্রে আরও জানা যায়, পিরোজপুরের জনগণের কাছে একাত্তরে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ছিল আবদুল জব্বার। তার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ায় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। তদন্তাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে নাসির ও জব্বার মানবতাবিরোধী অভিযোগের তদন্তের কথা জানতে পেরে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। পলাতক অবস্থায়ই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
এছাড়া আরও যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে তারা হলেন, নেত্রকোনার খালেক তালুকদার, হবিগঞ্জের মাহবুবুর রহমান, খুলনার মো. আমাজাদ মিনা, রাজাকার সৈয়দ মো. হোসেন ওরফে হাছেন আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আফসার হোসেন ও সাহিদুর রহমান।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা সানাউল হক বলেন, ‘তারা ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে প্রাথমিক তথ্য মিলছে। তদন্তের আরও অগ্রগতি হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।