এসআই সুনীলের হাত অনেক লম্বা
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, কক্সবাজারঃ কক্সবাজার শহরে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পুলিশ। তাদের কাছে দেশী-বিদেশী পর্যটক, সাংবাদিক ও স্থানীয়রা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অভিযোগের তীর কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই সুনীল কুমারের বিরুদ্ধে। একের পর এক অপরাধ কর্মকান্ড ঘটিয়ে বার বার পার পেয়ে যাওয়ায় দিনদিন আরো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে এই পুলিশ সদস্য। বহাল তবিয়তেই থাকছেন তিনি। আর ভুক্তভোগীরা বলছেন তার ‘হাত’ অনেক লম্বা। নয়তো বার বার কিভাবে পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এই উপ-পরিদর্শকের (এসআই) অপরাধীদের মদদ, ছিনতাই ও নানামুখী হয়রানির কারণে কক্সবাজার বিমুখ হচ্ছেন পর্যটকরা।
অভিযোগ রয়েছে গত ১১ জানুয়ারি অপহরণ করা হয় সবির মুহাম্মদ (৩৬) নামের মিয়ানমারের বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিককে। সমুদ্র সৈকতের কাছে অবস্থিত আবাসিক হোটেল মিশুক থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর জিম্মি করে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ১০ হাজার ডলার, একটি ক্যামেরা, একটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয় কক্সবাজার সদর থানার ওই এসআই সুনীল।
এরপর ১২ জানুয়ারি বিকালে পুলিশ ৪ হাজার টাকা ও ১০০ ডলার ফেরত দিয়ে তাকে ঢাকার বাসে তুলে দেয়।নগদ টাকা, ডলারসহ ৯ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ছিনিয়ে নেয় তার কাছ থেকে।
এ ঘটনার শিকার ওই বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশস্থ অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসে বিষয়টি অবহিত করার পর স্বয়ং পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে তোলপাড় চলে।পরে এ ঘটনায় কক্সবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। অভিযুক্ত এসআই সুনীল কুমারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং পরবর্তীতে কুতুবদিয়া থানায় বদলীর আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের বশে এনে পার পেয়ে যান এই সুনীল। বহাল থাকে কক্সবাজার সদর মডেল থানায়। শুরু করেন চাঁদাবাজি, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা, ইয়াবা আত্মসাৎ, ছিনতাইকারী চক্রকে পৃষ্টপোষকতাসহ নানান অপকর্ম।
সম্প্রতি শহরের এক ব্যক্তিকে বিনা কারণে থানায় ধরে এনে পরবর্তীতে প্রতিপক্ষের লোকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে একটি অস্ত্র দিয়ে চালান দেওয়া হয়।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এইআই সুনীল কুমার অজ্ঞাত শক্তির ইশারায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ইতিপূর্বে পর্যটন শহরের ঝাউবীথি ও নির্জন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে মাঝেমধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতো। কিন্তু সম্প্রতি তা গুরুতর আকার ধারণ করেছে। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে পর্যটকদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নিতো। এমনকি সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ব্যস্ততম ঝিনুক মার্কেটের মধ্যেই প্রকাশ্যে পর্যটকের স্বর্ণের চেইন, মোবাইল, ব্যাগসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে।
এসআই সুনীল কুমারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে আকস্মিকভাবে তল্লাশী অভিযান চালিয়ে পর্যটকদের হয়রানী ও নগদ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে আরো জানা গেছে, সেই সুনীল প্রতিনিয়ত থানার দালাল চক্র ও তার অধিনস্থ কয়েকজন সোর্সকে দিয়ে বিভিন্ন নিরীহ মানুষকে রাতে থানায় ধরে নিয়ে আসেন এবং দিনের বেলায় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন। একই সাথে পুরো শহরের ব্যবসায়ীসহ সাধারণ জনগণ তার হাতে হয়রানি শিকার হওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন তদন্তের নামে বাদী ও বিবাদীর কাছ থেকে টাকা আদায়, অভিযোগ তদন্তের নামে নিরীহ লোকজনকে থানায় ধরে এনে টাকা আদায় করারও অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে সুনীলের বিরুদ্ধে। এ ধরনের অহরহ ঘটনার মাঝে সবশেষ সাংবাদিক এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীনও নিস্তার পাননি তার হাত থেকে। কক্সবাজারের দৈনিক বাঁকখালী পত্রিকার চীফ রিপোর্টার ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য সাংবাদিক এম. শাহজাহান চৌধুরী শাহীনের ইসলামপুর মধ্যম নাপিতখালীস্থ বাড়িতে রহস্যজনক তল্লাশী চালিয়েছে পুলিশ।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই সুনিল ও ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রের এসআই আনোয়ারের নেতৃত্বে পৃথক দুটি পুলিশ দল ও অন্তত ৩০ জন অজ্ঞাতনামা মুখোশ পরিহিতি ব্যক্তি গত ১৭ মার্চ দিবাগত রাত ৩টায় এই তল্লাশী অভিযান চালায়। এসময় দরজা খুলে দিতে বিলম্ব হওয়ায় জানালা ও দরজা ভাঙচুর করেছে পুলিশ দল।