সরকারের মুখোমুখি টিআইবি-সুজন

gov tib sujan sujon সরকার টআইবি সুজনসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ অনিয়ম, দুর্নীতি আর দুঃশাসন প্রশ্নে সরকারের মুখোমুখি টিআইবি-সুজন। সরকারের সমালোচনায় সরব সংস্থা দুটি। কোনোভাবেই সরকার তাদের বাগে আনতে পারছে না। আবার তারাও সরকারের বাক্যবাণে বিদ্ধ। এ অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেছেন সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রী।

সরকারের অনিয়ম দুর্নীতি ও দুঃশাসনে অনেক স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানও নীরব। সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলছে না তারা। আবার  অনেক প্রতিষ্ঠান ততটুকু বলে যতটুকু বললে সরকার মন খারাপ করবে না। কিন্তু বাধ সেধেছে টিআইবি ও সুজন। সরকারের বিরুদ্ধে তারা সোচ্ছার। সরকারও তাদের  নিরপেক্ষতা, ক্ষমতা ও আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এমনকি ১৯ দলীয় জোটের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্তাতার অভিযোগও এনেছে।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংস্থাগুলোও সরকারের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার প্রতি ইঙ্গিত করেছে। পাশাপাশি নিজেদের আয়ের উৎসের স্বচ্ছতা ও নিজেদের অরাজনৈতিক দাবি করে বলেছে, তারা সব সরকারের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলে।

মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘দশম সংসদের পার্লামেন্ট ওয়াচ প্রতিবেদন’ তুলে ধরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ সংসদে বিরোধী দল নেই। সংসদে সরকারি দল রয়েছে। বিরোধী দল বলতে যা বোঝায় সে বিরোধী দল নেই।

সংসদে জাতীয় পার্টির ভূমিকাকে বিরোধী দলের ভূমিকা হিসেবে বিবেচনা করা যায় না উল্লেখ করে খুব দ্রুত আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যকর সংসদ গঠনের আহ্বান জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।

তবে প্রতিবেদন প্রকাশের একদিন পরই টিআইবির কঠোর সমালোচনা করেন সরকারের মন্ত্রীরা।

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে আগামী মন্ত্রীপরিষদ বৈঠকে টিআইবি ও সুজনসহ অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থের অনুসন্ধান করার প্রস্তাব আনার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে দুই মন্ত্রীই সংস্থাগুলোর কঠোর সমালোচনা করে বলেন, তারা গোষ্ঠীবিশেষের লবিস্ট হিসেবে কাজ করছে।

অন্যদিকে, উপজেলা নির্বাচনে সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক।

বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সহিংসতার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন বলেন, হতে পারে নির্বাচন কমিশন গা ছেড়ে দিয়েছে, না হয় কমিশনকে ব্যবস্থা না নিতে বাধ্য করা হয়েছে। এজন্য এসব ঘটনা ঘটছে।

তাহলে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই কমিশন ব্যর্থ। কারণ এসব নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব তাদের কাঁধেই।

তিনি বলেন, দেশে যে মুহূর্তে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে তখন সন্তোষজনক কারণ ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এভাবে ছুটিতে যাওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।

অনুষ্ঠানে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, উপজেলা নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনে যে কেন্দ্র দখল এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার দায় কমিশনকেই নিতে হবে।

অন্যদিকে, দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন টিআইবির কঠোর সমালোচনা করে জাতীয় সংসদে স্পিকারের কাছে রুলিং দাবি করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

বুধবার বিকেলে সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বলেন, জাতীয় সংসদের মতো একটি সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে টিআইবি যে বক্তব্য দিয়েছে, এখতিয়ারবহির্ভূত।

শেখ সেলিম বলেন, বর্তমান সংসদে কার্যকর বিরোধী দল নেই- এমন বক্তব্য দিয়ে টিআইবি তাদের সীমা লঙ্ঘন করেছে।

টিআইবি প্রতিবেদনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন বর্জন করার পরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যে ভাষায় কথা বলেছেন, টিআইবিও এখন সেই ভাষায়ই কথা বলছে।

তিনি টিআইবিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ওখানে ১৯ দল আছে, আপনারা গিয়া ২০তম দল হন।

একটি এনজিও কীভাবে জাতীয় সংসদ সম্পর্কে এরকম বক্তব্য দিতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলে সেলিম এ বিষয়ে স্পিকারের রুলিংও দাবি করেন।

তিনি বলেন, টিআইবির ভাষায় এই সংসদ ক্ষণস্থায়ী, কারণ এখানে কার্যকর বিরোধী নাই। টিআইবি এ কথা কাকে খুশি করার জন্য বলেছে? তারা কি বাংলাদেশকে  একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়?

সেলিম বলেন, টিআইবি দুর্নীতি নিয়ে কাজ করে ভালো কথা। তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করুক। কিন্তু রাজনীতি সম্পর্কে বা সংসদ সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়া টিআইবির কাজ নয়। যদি রাজনীতি করতেই হয় তাহলে ১৯ দল তো আছে, ওখানে ২০তম দল হিসেবে যোগ দিন।

শেখ সেলিমের সমালোচনার পর পাল্টা জবাবও দেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। রাজধানীর হোটেল অবকাশে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টিআইবিকে চ্যালেঞ্জ করা এখতিয়ারবহির্ভূত।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিআইবি সরকারের একটি নিবন্ধিত সংস্থা। আমরা যে পার্লামেন্ট ওয়াচ করেছি, সেখানেও সরকারের অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয়েছে। তাই টিআইবিকে এভাবে চ্যালেঞ্জ করা এখতিয়ারবহির্ভূত।

তিনি বলেন, আমরা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আমরা কখনই রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট নই। যেহেতু টিআইবি সরকারের অনুমোদিত সংস্থা, তাই সরকারের অনুমতি ছাড়া একটি পয়সাও আমাদের অ্যাকাউন্টে আসে না। সরকারের নির্ধারিত খাতের বাইরে একটি পয়সাও খরচ করতে পারি না। তাই সংসদে দাঁড়িয়ে দায়িত্বশীল লোকজনের টিআইবিকে নিয়ে কথা বলা যৌক্তিক বলেও মনে করি না।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম এমপির রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পরামর্শের সমালোচনা করে ড. ইফতেখার বলেন, রাজনীতিতে যোগ দেব কি না, তা আমার ব্যক্তিগত এখতিয়ার। তবে টিআইবি ও আমরা মনে করি, আমাদের এ ধরনের ইচ্ছা কখনই হবে না। রাজনৈতিক দলগুলো সরকারে গেলে আমাদের সমালোচনা করে, বিরোধী দলে গেলে আমাদের অকড়ে ধরে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ