স্থায়ী কমিটির অনেক নেতাই এখন বিএনপির বোঝা

bnp logo বিএনপি প্রতীকসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম- জাতীয় স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্যই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ও আন্দোলনসহ দলীয় কমর্কাণ্ডে ভূমিকা রাখতে না পারার কারণে নেতৃত্ব সঙ্কটের মুখে পড়ছে দলটি। এক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এ কমিটির অনেক নেতাই এখন বিএনপির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বলে মনে করেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।

এর ফলে দলের হাইকমান্ডের সাথে তৃণমুল নেতাদের ব্যবধান দিনকে দিন বেড়ে চলেছে। দলের মধ্যে নেই কোনো নির্দেশনা। সর্বত্রই চলছে  সমন্বয়হীনতা ও সিদ্ধান্তহীনতা।

১৯ সদস্যের জাতীয় স্থায়ী কমিটির মধ্যে চার পাঁচজন ছাড়া বাকিরা নামসর্বস্ব পদধারী নেতায় পরিণত হয়েছেন। দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে এসব নেতাকে দেখা যায় না। কেউ গা বাঁচিয়ে চলেছেন। কোনো নেতা অসুস্থ। কেউ সভা ডাকলে আসেন অন্য সময় বাড়িতে বসে সময় কাটান। কেবল বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠকের সময় এসব নেতা গরজ করে হাজির হন।

জানা গেছে, দলের স্থায়ী কমিটির বর্তমান সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নেতার নামে রয়েছে দুর্নীতির মামলা। আবার বেশ কয়েকজন সদস্য আছেন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যতটা না সময় দেন তার চেয়ে বেশি মানববন্ধন, সভা-সেমিনারে গরম গরম বক্তৃতা, বিবৃতি দিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করেন।  এসব নেতা প্রেসক্লাবকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ‘দোকান ভিত্তিক’ রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ভূঁইফোড় এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে অতিথি হয়ে আসেন স্রেফ মিডিয়া কাভারেজ পাওয়ার জন্য। এভাবেই চলছে বিএনপির মত একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সবোর্চ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের শীর্ষনেতাদের দলীয় কমর্কাণ্ড। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ।

দলীর সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে দলের কাউন্সিল করার পর বর্তমান ১৯ সদস্যের জাতীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু বিএনপির মত বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরামের বেশিরভাগ নেতাই এখন বিএনপির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বলে মনে করেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।

তারা মনে করেন, নিজেরা দলে সময় দিতে পারেন না, আবার এসব পদ থেকে সরেও দাঁড়ান না। তাহলে দলের নতুন নেতৃত্ব কিভাবে সৃষ্টি হবে?

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নামে  জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল মামলাসহ বেশ কয়েকটি  মামলা রয়েছে। এ মামলায় তিনি যদি কোনো কারণে সাজাপ্রাপ্ত হন, তাহলে তার পক্ষে আর নির্বাচনে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।

একই অবস্থা দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ক্ষেত্রে। তার বিরুদ্ধে একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলাসহ বেশ কয়েকটি র্স্পশকাতর মামলা রয়েছে। তিনিও যদি কোনো মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে যান তাহলে তার পক্ষে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্ভব হবে না।

ওয়ান ইলেভেনে নির্যাতনের শিকার হয়ে বর্তমানে নিজের শারীরিক অসুস্থতার কারণে যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ কারণে তার পক্ষেও এ মুর্হুতে সরাসরি দলের পাশে থেকে কাজ করা বা দল পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব  দিয়ে দলের মহাসচিবের কাজ চালানো হচ্ছে। তিনিও বিগত আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে গাড়ি পোড়ানোর মামলাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। একটি মামলায় তার জামিন আবেদন বাতিল করে দেয়ায় তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

এ অবস্থায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা কে কেমন ভূমিকা রাখছেন-

ড. আর এ গনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। দলে তার কোনো ভূমিকা নেই। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হাজির হওয়া ছাড়া আর কোনো কর্মকাণ্ডে তাকে দেখা যায় না। দলের সঙ্কটকালেও এ নেতা থাকেন নীরব, কখনো তাকে সরব দেখা যায় না।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুর্নীতির কারণে আগেই নিজেকে বিতর্কিত করে ফেলেছেন। অর্থ পাচার মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দলে সময় না দেয়ার মত অভিযোগ রয়েছে।

দলের অন্যতম এবং প্রভাবশালী সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ। তিনি দলের ভেতরে ও বাইরে নানা ভাবে আলোচিত-সমালেচিত। তার বিরুদ্ধে  বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে দুদকের মামলা রয়েছে। যে কোনো সময় তিনিও গ্রেফতার হতে পারেন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে  তিনি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন। বেশ কিছুদিন হয়েছে কারাগার থেকে বের হয়ে এক রকম ঘরের মধ্যে নিজেকে বন্দী করে রেখেছেন। তাকেও তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।

এর আগে প্রেসক্লাবে নামসর্বস্ব সংগঠনগুলোর অনুষ্ঠানে তার সরব উপস্থিতি থাকলেও বর্তমানে তিনি সেখানেও অনুপস্থিত। অনেকে বলছেন, ফের জেলে যাওয়ার ভয়েই তিনি এখন নিরব রয়েছেন।

এম কে আনোয়ার, আমলা কাম রাজনীতিক। বর্তমানে বয়সের ভারে ন্যুজ। কয়েকদিন আগেই জেল থেকে বেরিয়েয়েছেন। দলের কর্মকাণ্ডে তাকে এখন তেমন একটা দেখা যায় না। তিনিও শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাই দলে আগের মত আর সময় দিতে পারছেন না।

এম শামসুল ইসলাম এক সময় দলে ছিলেন  সক্রিয়। কিন্তু বর্তমানে অসুস্থতার কারণে তিনি আর দলের পিছনে সময় দিতে পারেন না।  দলের কোনো বৈঠকেও হাজির হতে পারেন না।

সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার আইন পেশা নিয়ে ব্যস্ত। তিনি মাঝে মধ্যে দলের অনুষ্ঠানে হাজির হন। বয়সের কারণে তিনিও দলের মধ্যে ঠিক মত সময় দিতে পারেন না।

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এখন কারাগারে আছেন। তার পক্ষে দলের কোনো কর্মকাণ্ড কিংবা দিক নির্দেশনা দেয়া একবারেই অসম্ভব।

মির্জা আব্বাস বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে যাওয়ার আগে বেগম খালেদা জিয়া তাকে মহানগর বিএনপির দায়িত্ব নেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি এ দায়িত্ব নিতে রাজী হননি বলে জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা।

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মাহবুবুর রহমান। দিনাজপুরে বাড়ি, এ কারণে সুযোগ পেয়েছিলেন দলের স্থায়ী কমিটিতে। তিনি ছিলেন সংস্কারবাদী নেতাদের  মধ্যে অন্যতম। দলের দায়িত্ব পালন করেন প্রেসক্লাবে অখ্যাত কিছু সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গিয়ে। ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ অবস্থা এ নেতার। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিএনপির অধিকাংশ নেতা যখন জেলে কিংবা গ্রেফতার আতঙ্কে গা ঢাকা দেন, তখন তিনি ছিলেন প্রকাশ্যে। কিন্তু দলের কোনো দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি তাকে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের অত্যন্ত আস্থাভাজন তরিকুল ইসলাম। একসময়ের বামপন্থি এ রাজনীতিকের ভূমিকা দলের মধ্যে প্রশংসিত হওয়া সত্বেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি দলে সময় দিতে পারেন না। তিনি এখন যশোরেই বেশিরভাগ সময় কাটান।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান  শাহ, সাহসী ও দৃঢ়চেতা এ নেতাও দলের মধ্যে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি।  তবে শোনা যাচ্ছে- সেনা বাহিনী থেকে আসা এ নেতাকে বেগম খালেদা জিয়া এবার ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি পুর্ণগঠনের দায়িত্ব দিতে যাচ্ছেন।

ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া স্থায়ী কমিটির সক্রিয় সদস্যদের একজন। নেতাকর্মীদের কাছেও তার ভূমিকা প্রশংসিত। আদালত পাড়ায় তার সরব উপস্থিতি রয়েছে।

নজরুল ইসলাম খান, শ্রমিক নেতা থেকে জাতীয় নেতা। দলের মধ্যে চেষ্টা করেন সময় দিতে।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সোজাসাপ্টা কথাবার্তা বলতে পছন্দ করেন। দলের ভেতরে ও বাইরে তিনি কড়া কথা বললেও সাংগঠনিক বিষয়ে তিনি কোনো ভূমিকা রাখেন না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বিশ্বব্যাংকের চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন। ইদানীং কূটনৈতিক দূতিয়ালিতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

বেগম সারোয়ারী রহমান মাঝে-মধ্যে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আসেন। এছাড়া কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার দেখা নেই।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ