মেসির হ্যাটট্রিকে কুপোকাত রিয়াল
স্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সান্তিয়াগোর বার্নাবুউতে মেসির হ্যাটট্রিকে ৪-৩ গোলে কুপোকাত হলো রিয়াল মাদ্রিদ।
ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। লিওনেল মেসির পাস থেকে ফাঁকায় দাড়ানো আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার জোড়ালো শট ঠেকানোর সাধ্য ছিল না গোলরক্ষক দিয়েগো লোপেসের। ক্রসবারের একটু নিচ দিয়ে জালে জড়িয়ে যায় ২৪টি পাসের পর নেয়া এই শটটি।
ছয় মিনিট পরেই ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের স্ট্রাইকার করিম বেনজেমাও; কিন্তু তার শট থেকে বল চলে যায় ক্রসবার উঁচিয়ে।
১৫তম মিনিটেই পাল্টা আক্রমণ থেকে অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে বল নিয়ে এগিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু গোলের বাইরে বল মেরে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ হারান তিনি।
৪ মিনিট পর গোল পেতে পারতেন ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড নেইমারও। কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় বল আয়ত্বে রেখে শেষে তিনি নিলেন দুর্বল একটি শট।
ম্যাচের ২০ মিনিটেই সমতা আনে রিয়াল। ডি মারিয়ার দারুণ ক্রস থেকে হেডে গোল করেন বেনজেমা। বার্সা গোলরক্ষক ভিক্তর ভালদেস বলে হাত লাগাতে পারলেও তা ফেরাতে পারেননি।
চার মিনিট পরে আবার ডি মারিয়ার ক্রস থেকে বেনজেমার গোল। উরু দিয়ে ক্রস নামিয়ে গোল করে স্টেডিয়ামভর্তি সমর্থকদের উচ্ছ্বাসে মাতান ফরাসি এই স্ট্রাইকার।
দুই মিনিট পরই হ্যাটট্রিক পেতে পারতেন বেনজেমা। বল নিয়ে ক্ষিপ্ত গতিতে ছুটে গিয়ে আবারো গোলমুখে ক্রস করেছিলেন মারিয়া। তা থেকে বেনজেমার শট গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও গোললাইন থেকে তা কোনোমতে ফিরিয়ে দেন বার্সা ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে।
ছোট ছোট পাসে রিয়ালের গোলে আক্রমণ চালানো বার্সেলোনাকে বিরতির আগেই সমতায় ফেরান লিওনেল মেসি। ম্যাচের ৪২তম মিনিটে তিনি পেনাল্টি সীমানায় পাস দিয়েছিলেন নেইমারকে। কিন্তু নেইমার ঠিকমতো শট নিতে না পারায় বল ফেরত এলে নিজেই গোল করেন আর্জেন্টিনার এই ফরোয়ার্ড।
গোলের পর পরই নিজেদের মধ্যে ঠোকাঠুকি করে মাটিতে ছিটকে পড়ে হলুদ কার্ড দেখেন সেস ফ্যাব্রেগাস ও পেপে।
বিরতির ঠিক আগে করিম বেনজেমার আরেকটি হেড অল্পের জন্য জালে ঢোকেনি। ২-২ গোলের সমতা নিয়েই মাঠ ছাড়ে দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধের সাত মিনিটের মাথায় রিয়ালকে আবার এগিয়ে দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন বেনজেমা। বেলের বাড়িয়ে দেয়া বল থেকে তার শট ঠেকিয়ে দেন ভাল্দেস।
তবে দুই মিনিট পরই ‘বিতর্কিত’ পেনাল্টি থেকে থেকে রিয়ালকে এগিয়ে দেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ২৬টি গোল করে এই পর্তুগিজ তারকা আছেন লা লিগার গোলদাতাদের তালিকার শীর্ষে। টিভি রিপ্লেতে অবশ্য দেখা গেছে, রোনালদোকে দানি আলভেসের ফাউলটি করেছিলেন বক্সের ঠিক বাইরে।
৬৩ মিনিটে মেসির বাড়ানো পাস ধরে গোলমুখে ছুটে যাওয়া নেইমারকে ফেলে দিয়ে লালকার্ড দেখেন স্যার্হিও রামোস। এর সুবাদে পাওয়া পেনাল্টি থেকে গোল করে বার্সেলোনাকে আবার সমতায় ফেরান মেসি।
ম্যাচের ৭৪ মিনিটে দানি আলভেসের শট গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও পোস্টে লেগে ফিরে আসে। তবে ৮৪তম মিনিটে পেনাল্টি হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে বার্সেলোনাকে এগিয়ে দেন মেসি। পেনাল্টি এলাকায় আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে দানি কারকাহাল আর চাভি অলোনসো অবৈধভাবে বাধা দেয়ায় পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি।
২০টি গোল করে ক্লাসিকোর ইতিহাসে এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা মেসি। আর এখন লা লিগার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতাও চার বারের এই বর্ষসেরা ফুটবলার। ২৩৫টি গোল নিয়ে তিনি ছাড়িয়েছেন রিয়াল ও আতলেতিকো মাদ্রিদের হয়ে খেলা হুগো সানচেসেকে (২৩৪টি)। ২৫২টি গোল নিয়ে মেসির সামনে আছেন কেবল আথলেতিক বিলবাওয়ের কিংবদন্তি তেলমো সাররা।
গত অক্টোবরে ক্যাম্প ন্যু থেকে ২-১ গোলে হেরে যাওয়া রিয়াল প্রতিশোধের নেশায় ছিল। ওই ম্যাচের পর লা লিগায় অপরাজিত থাকা রিয়াল আবার বার্সেলোনার কাছেই হারের স্বাদ পেলো।
এই ম্যাচ হারলে শিরোপা-লড়াইয়ে অনেকখানি পিছিয়ে পড়তো বার্সেলোনা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মাঠ থেকে পাওয়া মূল্যবান এই জয়ে বার্সার পয়েন্ট দাঁড়ালো ৬৯। রিয়াল মাদ্রিদ ও আতলেতিকো মাদ্রিদ – দুই দলেরই পয়েন্ট ৭০। তবে লা লিগার নিয়ম অনুযায়ী মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে আছে আতলেতিকোই। রোববারই তারা ২-০ গোলে হারিয়েছে রিয়াল বেতিসকে।