টি২০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বাংলাদেশের শোচনীয় হার
স্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ক্রিকেটের অন্য সংস্করণে আলোঝলমলে পারফর্ম্যান্স হলেও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ একেবারেই ম্লান। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ব্যাপারটা আলাদা। গোলকধাঁধা হয়ে থাকা টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে চার ম্যাচের দুটিই জিতেছে বাংলাদেশ। আজ সংখ্যাটা মুশফিকুর রহিমের দল নিয়ে যেতে চায় তিনে। সেই অভিযানে পাহাড়ই টপকাতে হবে বাংলাদেশকে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছিল ৭ উইকেটে ১৭১ রান। জবাবে তৃতীয় ওভারেই ফিরেছেন তামিম। বাদ্রিকে তুলে মারতে গিয়ে ৫ রান করেই তামিম ফিরেন ব্রোভাকো ক্যাচ দিয়ে। পরের ওভারে সান্তোকির বলে স্টাম্পিং হয়ে যান এনামুল হকও। ৭ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১০ করেছিলেন এনামুল। ধাক্কাটা না কাটতেই সেই ওভারের দ্বিতীয় বলে সান্তোকি বোল্ড করেন সাকিবকেও (০)। পরপর দুই বলে দুই উইকেটে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগান সান্তোকি। সেটা হতে দেননি মুশফিক। এরপর একের পর আউট হয়ে ফির ফিরতে মোট ৯ জন ফিরে গেলেন সাজঘরে। ৯৮ রানে অল আউট হয়ে হেরে যায় বাংলাদেশ।
১৫ ওভার শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছিল ১১৬ রান। ভয়ংকর গেইল আর স্যামুয়েলসের দৃঢ়তায় স্কোরটা পৌঁছে ১৭১-এ। শুরুতে ধীরলয়ে খেলা গেইল ৪৮ বলে ৩ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় ফিরেন ৪৮ করে। জিয়াউর রহমানের করা বল তুলে মারতে গিয়ে তামিমের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ভারসাম্য ধরে রাখতে না পারায় বল আকাশে তুলে বাউন্ডারি লাইনে এক পা দিয়েই আবারও মাঠে ফিরে ক্যাচটা তালুবন্দী করেন তামিম। ১৯তম ওভার পর্যন্ত গেইলকে ফিফটি করতে না দেয়াটা অবশ্য কৃতিত্বের বাংলাদেশের জন্য। শেষ ওভারের প্রথম বলে সোহাগ গাজীর ক্যাচ বানিয়ে আল আমিন ফেরান ভয়ংকর স্যামুয়েলসকে (১৮)। পরের বলটা তুলে মারতে গিয়ে সাকিবকে ক্যাচ দেন রাসেল (০)। হ্যাটট্রিক মিস করলেও চতুর্থ বলে তামিমের অসাধারণ ডাইভিং ক্যাচ বানিয়ে ব্রাভোকে ( ০) ফেরান আল আমিন। ম্যাচে তিনি নেন ২১ রানে ৩ উইকেট। শেষ ওভারে তিনি দেন মাত্র ৪ রান।
স্পিন ফাঁসে হাঁসফাঁস করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাজটা সহজ হয়ে যায় বাংলাদেশ ফিল্ডারদের ব্যর্থতায়। মুশফিক তো সাকিবের টানা দুটো বল গ্রিপবন্দী করতে না পেরে দেন বাউন্ডারি (বাই)। এনামুলও ঠিক আগের ওভারে গেইলের শট হাত ফস্কে দেন বাউন্ডারি। তাতে চাপটা কেটে যায় ক্যারিবিয়ানদের। রানের চাকাটাও গতি পায় তাই। এর সাথে যোগ করুন আবার কয়েকটা ক্যাচ মিস! এক জিয়ার ওভারেই দুটি ক্যাচ মিস হওয়ার পাশাপাশি হয়েছে দুটি বাউন্ডারি! আর ২০ ওভারের খেলায় অতিরিক্ত ১৮টা রান দেয় বাংলাদেশ।
১০ ওভারে কোন উইকেট নিতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। শুরুটা দেখেশুনে করা দুই ওপেনার ক্রিস গেইল ও ডোয়াইন স্মিথ এরপর চড়াও হয়েছিলেন বোলারদের উপর। ৬ ওভারে ৩৬ করা দলটি প্রথম ১০ ওভারে স্কোরটা নিয়ে যায় ৭৪-এ। তবে ঝড়ো ফিফটির কিছুক্ষণ পর ফিরেন স্মিথ। ১২তম ওভারে মাহমুদুল্লাহকে তুলে মারতে গিয়ে তিনি ক্যাচ দেন আল আমিনকে। ৪৩ বলে ১০ বাউন্ডারি ৩ ছক্কায় ৭২ করে ফিরেন স্মিথ। পরের ওভারেই সাকিবের বলে স্টাম্পিং হন কোন রান না করা সিমন্স। সাকিবের মত বোলারকে ১৩তম ওভারে এনে সত্যিই বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছেন মুশফিক। প্রথম বলেই উইকেট নিয়ে নিজের যথার্থতাও প্রমাণ করেন সাকিব। ৩ ওভারে ২১ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন তিনি।
টস জিতে বল করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মত। প্রথম বলটাই ওয়াইড – বাউন্ডারি দেন মাশরাফি। অর্থাৎ বিনা বলেই ৫ রান। দ্বিতীয় বলে স্মিথ মারেন বাউন্ডারি। আরেকটি ওয়াইডসহ প্রথম ওভারে মাশরাফি দেন ১১ রান। সেই ধাক্কাটা সামলে পাওয়ার প্লে’র প্রথম ছয় ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চড়াও হতে দেয়নি বাংলাদেশ। এ সময় তারা করেছিল বিনা উইকেটে ৩৬ রান। এরপর ধীরে ধীরে চড়াও হতে থাকে তারা। ১০ ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ৭৪ রান। প্রথম ১০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট নিতে না পারাটা ব্যর্থতাই বাংলাদেশের জন্য। সোহাগের করা ১০ম ওভারে আবার টানা চার বলে চার বাউন্ডারি মারেন স্মিথ। ৩৩ বলেই তাতে পূরণ হয়ে যায় ফিফটি। ৪ ওভারের বোলিং কোটা শেষ করে মাশরাফি দেন ২৫ আর সোহাগ দিয়েছেন ৩৮ রান।
রুবেলের ইনজুরির সুবাদে দলে আসা জিয়াউর রহমান একাদশে ফিরেছেন আজ। গেইলবধ করতে ফিরেছেন সোহাগ গাজীও। কিন্তু কাজ হয়নি তাতে। ইনজুরি শংকা কাটিয়ে ফিরেছেন মাশরাফিও। সবমিলিয়ে হংকংয়ের বিপক্ষে খেলা দল থেকে বাদ পড়েছেন চারজন। বাদ পড়া চারজন হলেন নাসির,ফরহাদ রেজা,রাজ্জাক ও রুবেল। তবে ভারতের বিপক্ষে খেলা একাদশই অপরিবর্তিত রেখেছে উইন্ডিজ।
বাংলাদেশ : তামিম,এনামুল,মমিনুল,সাকিব,মুশফিক,সাব্বির,মাহমুদুল্লাহ,জিয়াউর,সোহাগ,মাশরাফি ও আল আমিন