তারেকের দাবি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়া
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ‘প্রথম’ রাষ্ট্রপতি ছিলেন বলে দাবি করেছেন তার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন মঙ্গলবার লন্ডনে একটি হোটেলে বিএনপি আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এই দাবি করেন তিনি।
লন্ডনে অবস্থানরত তারেক আলোচনার শুরুতেই সভার ব্যাক ড্রপ দেখিয়ে বলেন, “এইখানে লাল অক্ষরে লেখা আছে- ‘বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া’। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।”
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক না বলতে আদালতের নির্দেশ রয়েছে।
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের উষালগ্নে জিয়ার পাঠ করা স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্থপতি বেলাল মোহাম্মদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন তৎকালীন মেজর জিয়া।
জিয়াকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বলার পেছনে যুক্তিও দলের নেতা-কর্মীদের কাছে তুলে ধরেন তারেক।
“শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এটাই সত্যি, এটাই ইতিহাস। উনি ১৯৭১ সালে মার্চ মাসে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই যে বাংলাদেশ স্বাধীন আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।”
“এই ঘোষণা দেয়া উচিত ছিল তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের। কিন্তু তারা তা দিতে ব্যর্থ হন, এর পাশাপাশি দেশের সাত কোটি মানুষের মনের ভাষা বুঝতেও তারা ব্যর্থ হয়েছিলো।”
জিয়া নিজেই স্বাধীনতার ঘোষণা তৈরি করে তা পড়েন বলে দাবি করেন তার ছেলে।
“কারো পাঠানো ঘোষণা নয়, বরং নিজের হাতে ঘোষণা ড্রাফট করলেন এবং সেটা জাতির সামনে পড়লেন, বিশ্বের সামনে পড়লেন, যে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। শহীদ জিয়া তার ভরাট কণ্ঠের মাধ্যমে, ইথারের মাধ্যমে সবাইকে জানালেন।”
তিনি বলেন, “আজকে আমরা অনেককে বলতে শুনি শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন ৭ মার্চ। এটা কোনো বিতর্কের বিষয় না। এটা হচ্ছে ইতিহাসের ব্যাপার, এভিডেন্সের ব্যাপার, এখানে যারা তরুণ প্রজন্ম আছেন, আমার এই কথা ও তথ্যগুলো বাংলাদেশের মানুষের কাছে, আওয়ামী লীগের কর্মীদের কাছে তুলে ধরবেন।”
হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রে’ বলা হয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে ২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ওয়ারলেসের মাধ্যমে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরীর কাছে স্বাধীনতার ঘোষণার বার্তাটি পাঠান।
২৬ মার্চ বেলাল মোহাম্মদের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হলে প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এরপর পাঠ করেন আবুল কাশেন সন্দ্বীপ।
তৃতীয় ব্যক্তি হিসেব পরদিন সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে একই ঘোষণা জিয়াউর রহমান পাঠ করেন বলে মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য ওই ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
তারেক বলেন, “শেখ মুজিব যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, এর পক্ষে অনেক প্রমাণ রয়েছে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, এরকম প্রমাণ কোনো দলিলে নেই।
“আওয়ামী লীগ ছয় দফার জন্য আন্দোলন করেছে, পাকিস্তানের ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্য আন্দোলন করেছে তার প্রমাণ আছে, কিন্তু স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেনি। ইতিহাসে তার কোনো প্রমাণ নেই।”
তারেক বলেন, “আমরা সবাই জানি শেখ মুজিবের বাড়ি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে। স্বাধীনতার সময়ে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে প্রচুর বিদেশি সাংবাদিক ছিল..।
“আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বলেন, শেখ মুজিব চিরকুটের মাধ্যমে ওয়ারলেসে করে নাকি চট্টগ্রামে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন। কাছের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে চিরকুট না পাঠিয়ে উনি কেন তা দুইশ’ মাইল দূরে চট্টগ্রামে তা পাঠালেন?”
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের ইত্তেফাকের একটি সংখ্যা হাতে নিয়ে তারেক জিয়া বলেন, “এখানে শেখ মুজিবের একটি বিবৃতি দেয়া আছে। এটি তিনি দিয়েছেন একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাঠিয়েছেন। সেটি হলো ২৪ মার্চে আন্দোলনরত জনতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। শেখ মুজিব এই বার্তা পাঠান ২৫ তারিখ।
“ইত্তেফাক বিবৃতিটির একটি হেডিং করল এবং একটি সাবহেডিং করল। যে ইমপর্টেন্ট পয়েন্টটি হেডিং করল, ‘এ গণহত্যা বন্ধ কর’; আর সাবহেডিংটি ছিল-‘২৭ শে মার্চ সমগ্র বাংলাদেশে সর্বাত্নক ধর্মঘট’।অথচ আওয়ামী লীগ বলে, শেখ মুজিব ৭ মার্চ নাকি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে।”
“৭ মার্চ দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে, আবার ২৭ মার্চ শেখ মুজিবের ধর্মঘট ডাকার বিষয়টি হাস্যকর।”
“আপনাদের কি মনে হয়? আপনারা এই পয়েন্টগুলো মনে রাখতে পারবেন? ইতিহাস সম্পর্কে তারা জাতিকে মিথ্যা তথ্য দিবে এটা আমরা মেনে নেব না,” বলেন তারেক।
তিনি আরো বলেন, “যে সময়ে আওয়ামী লীগ এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছে তখন ইন্টারনেট ছিল না, এখন যেহেতু তা আছে তাদের পক্ষে আর বিভ্রান্তি ছড়ানো সম্ভব হবে না।”