আজ জামায়াতকে নিষিদ্ধের প্রতিবেদন জমা
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধের সুপারিশসহ প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে প্রসিকিউশন বরাবর বৃহস্পতিবার দাখিল করার কথা রয়েছে।
সংস্থাটির তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, আজ (বৃহস্পতিবার) সকালের সেশনেই জমা দেয়ার কথা রয়েছে, তবে সুনির্দিষ্ট সময় বলতে পারছি না।
তিনি বলেন, আজ তদন্ত প্রতিবেদনটি চিফ প্রসিকিউটরের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর প্রসিকিউশন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদনটি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করার জন্য।
৭১’এ জামায়াত সাত ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলো বলে জানায় সংস্থাটি। তার সঙ্গে জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা নিষিদ্ধেরও সুপারিশ রয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে।
৩৭৩ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমানপত্রসহ সাত খণ্ডে মোট ২ হাজার ৩০৩ পৃষ্ঠা ও অনান্য ডকুমেন্টসহ ১০ খন্ডে ৩ হাজার ৭৬১ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন । জামায়াত নেতাদের লেখা বই, বিভিন্ন লেখকের বই, গবেষণাপত্র ও ম্যাগাজিনসহ দুই শতাধিক বইও এতে সংযুক্ত করা হয়। তদন্তকালীন সাক্ষী ছিলেন ৭০ জন।
প্রতিবেদনে দলটির অপরাধের সময় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর। এছাড়া অপরাধে স্থান সমগ্র বাংলাদেশ, তদন্ত সময় ২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট থেকে ২০১৪ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে ছিলেন মতিউর রহমান।
তদন্ত প্রতিবেদনে জামায়াত, দৈনিক সংগ্রাম ও ৭১ সালে জামায়াতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আজীবন যে কোনও ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার আবেদন রয়েছে। তবে জামায়াত ছাড়া মুসলিম লীগ কাউন্সিল, মুসলিম লীগ কনভেনশন, নুরুল ইসলামের পিডিপি, নেজামে ইসলামী তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করা হবে।
জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে একাত্তরে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত চূড়ান্ত করে সংস্থাটির ধানমন্ডির সেফ হোমের কার্যালয়ে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলন করেন তদন্ত সংস্থার প্রধান আবদুল হান্নান খান। ওই সম্মেলনে তিনি ছাড়াও সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক তদন্তের বিষয়ে কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৭১’এ জামায়াত সবচেয়ে বেশি অপরাধ করেছিলো- যেমন রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি গঠন করাসহ ব্যক্তিগতভাবে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল। তাই জামায়াতের অপরাধের গুরুত্ব বেশি।
সম্মেলনে জোড় দিয়ে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পর যদি একই আদর্শে অন্য কোন নামে রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায়- তাও নিষিদ্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান, হেলাল উদ্দিন, নুরুল ইসলামসহ তদন্ত সংস্থার অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ১৮ আগস্ট জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। প্রায় আট মাস পর বিভিন্ন নথিপত্র, স্থান পরিদর্শন করে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক জানান, সংগঠন হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হলে তার শাস্তি কি হবে সে বিষয়ে আইনের অস্পষ্টতা রয়েছে।
বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের বিচারের বিধান তৈরি করা হলেও অপরাধী সংগঠনের শাস্তি কী, তা আইনে উল্লেখ নেই। এ কারণে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষকে শুধু জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করলেই হবে না, বিদ্যমান আইনেই যে সংগঠনটিকে শাস্তি দেওয়া সম্ভব, তা-ও প্রমাণ করতে হবে।
বিচারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ৪৪তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হলে দেশের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ হবে। কারণ এটিই হবে বাংলাদেশে সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বিচারের প্রক্রিয়া শুরুর প্রথম পদক্ষেপ।