বিদেশ গিয়ে আখের গোছাচ্ছেন সরকারপন্থীরা
গত প্রায় এক মাস ধরে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে সরকাপন্থীদের বিদেশ যাত্রা। বিদেশ যেতে তারা ব্যবহার করছেন ভ্রমণ ও বিজনেস ভিসা। যাওয়ার সময় তারা সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। ইমিগ্রেশন নিরাপত্তা বিভাগ ও গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত তিন সপ্তাহে প্রায় ৭ হাজার বাংলাদেশি মালয়েশিয়া গেছেন। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার হারও এমন অস্বাভাবিক। সব মিলিয়ে প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ৫০০ ব্যক্তি বিদেশ যাচ্ছেন।
বিদেশগামীদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের পরিবারে সদস্য, সরকারপন্থী সচিব, মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত সচিব, সহকারি ব্যক্তিগত সচিব, সরকারদলীয় রাজনীতিক, পুলিশের আলোচিত কর্মকর্তা ও সরকাপন্থি ব্যবসায়ী।
ইমিগ্রেশন নিরাপত্তা বিভাগ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দেশ ছাড়ার প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে প্রতিদিনই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর ফোন আসছে ইমিগ্রেশন শাখায়। তাদের এক কথা-যিনি যাচ্ছেন তিনি মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। কোনভাবেই লাগেজ ও ব্যাগ চেক করার নামে তাকে যেন হয়রানি না করা হয়।
ফলে বিদেশ যাত্রার সময় সরকারদলীরা ব্যাগে ভরে কী নিয়ে যাচ্ছে তা জানতে পারছেন না ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা বিভাগ ও ইমিগ্রেশন পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক জনের বিদেশ যাত্রার সময় কড়াকড়ি আরোপ করায় উল্টো তাদের বিরুদ্ধে উল্টো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কয়েকজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে বদলি করা হয়েছে।
ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সমপ্রতি কয়েক দফায় কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করায় তাকে কারণ দর্শাতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শিখরের খালাতো ভাই শওকত মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে দেশের বাইরে গেছেন। কিছুদিন পরেই তিনি ফিরে আসেন।’
এর কয়েক দিন পর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের আমেরিকা প্রবাসী কন্যা দেশে আসেন। কয়েক দিন অবস্থান করে যখন ফিরে যান তখন তার কাছে থাকা দুটি ব্যাগে অর্থ ছিল সন্দেহ করে তল্লাশির চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু উল্টো কেন তল্লাশির চেষ্টা করা হয়েছিল তা জানতে চেয়ে একজন কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়, জানান ইমিগ্রেশন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এদিকে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর হামলাকারী এক পুলিশ কর্মকর্তা একাধিক বার দেশের বাইরে গেছেন। প্রতিবারই তিনি প্রবাসী স্ত্রীর কাছে অর্থ রেখে আসেন বলে জানা গেছে।
স্ংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশ ছেড়ে বাইরে পাড়ি জমানোদের মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার সরকার দলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও রয়েছেন। তারা প্রতিদিনই ভ্রমণ ভিসার সুযোগ নিয়ে প্রবাসে আশ্রয় নিচ্ছেন। তাদের অনেকেই নাগরিকত্ব নিয়েছেন বিজনেস ভিসার সুযোগ নিয়ে।
দেশ ছাড়ার সময় তারা কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। কিছুদিন পর অনেকেই আবার খালি হাতে ফিরে এসেছেন। দেশের টাকা বাইরে লগ্নি করে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে চাইছেন। যাতে ক্ষমতা বদল হলেও সহজেই নিরাপদে থাকতে পারেন।
গোয়েন্দারা জানান, অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে বসবাস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ভরসা পাচ্ছেন না তারা। সরকার বদল হলে দুর্নীতির অভিযোগে ফেঁসে যেতে পারেন। বিষয়টি মাথায় রেখেই তারা প্রবাসী হওয়ার সুযোগ খুঁজছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের বাইরে অবস্থানের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
অনেকেই ভিজিট ভিসার সুযোগ নিয়ে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর , আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রে স্থায়ী বসতি গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। সূত্র: দৈনিক মানবজমিন