সৌদিতে ৫ শ্রমিককে জীবন্ত পুঁতে ফেলার ঘটনায় আটক ২৫
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, সৌদি আরবঃ সৌদি আরবে পাঁচ শ্রমিককে জীবন্ত পুঁতে ফেলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ২৫ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এর মধ্যে তিনজন ওই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কাতিফের সাফওয়া নামক এলাকায় দুই বছর আগে এক বয়স্ক নারীর কাছ থেকে আলী হাবিব নামে এক ব্যক্তি বিশ হাজার স্কয়ার মিটার কৃষি খামার (মাজরা) ভাড়া নেন।
ভাড়া নেওয়ার পর হাবিব খামারের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করতে গেলে মাটির নিচ থেকে উরুর একটি হাঁড় বেরিয়ে আসে। এটিকে তিনি কোনো মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ ভেবে এড়িয়ে যান। কিন্তু এর পরে যে অংশ বেরিয়ে আসে তার সঙ্গে অন্তর্বাস দেখে তিনি নিশ্চিত হন এটি মানুষের দেহাবশেষ।
হাবিব ঘটনাটি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা তদন্ত করে একটি স্বর্ণের আংটি এবং আইডি কার্ড দেখে মৃত ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হন। স্থানটি খনন করে তদন্তকারী দল একে একে পাঁটি কঙ্কাল উদ্ধার করে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৫ ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে তিন ব্যক্তি ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। আদালতে দেওয়া জবানবন্দীতে একজন পুরো ঘটনার বিবরণ দেন।
তার দেওয়া বিবরণে স্তম্ভিত হয়ে উঠে পরিবেশ।
তিনি বলেন, প্রায় চার বছর আগে তিনি তার বন্ধুকে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এসময় তারা নেশাগ্রস্ত ছিলেন। এসময় একটি পরিচিত নাম্বার থেকে তার মোবাইল ফোনে একটি কল আসে এবং তাকে ওই কৃষি খামারে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে তারা বৈঠকখানায় হাত বাঁধা অবস্থায় পাঁচ শ্রমিককে দেখতে পান। তিনি তখন ওই ব্যক্তির কাছে (যে ব্যক্তি তাদের ডেকে এনেছে) জানতে চান এদের বেঁধে রাখা হয়েছে কেন? জবাবে ওই ব্যক্তি বলেন, এদের মধ্যে একজন তার কফিলের মেয়ে এবং অন্য এক নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে।
এরপর তারা সবাই মিলে অন্য একটি কক্ষে গিয়ে ধূমপান এবং মাদক সেবন করতে থাকেন। এসময় বেঁধে রাখা এক শ্রমিকের হাসির শব্দ শুনে তিনি উঠে এসে তার গালে থাপ্পড় মারেন এবং তার বন্ধু লাঠি দিয়ে ওই পাঁচ শ্রমিককে বেদম মারধর করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে তারা রক্তাক্ত হয়ে যায়। তখন তাদের অন্য একটি কক্ষে সরিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তারা নতুনভাবে অত্যাচার শুরু করেন। সেই সঙ্গে চলে মাদক সেবন। তারা তিনজনই পালাক্রমে মাদক সেবন আর শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালান। এসময় শ্রমিকরা অচেতন হয়ে পড়ে।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, তখন যে ব্যক্তি আমাদের ডেকে এনেছিল তিনি এই পাঁচ শ্রমিককে খামারের প্রধান ফটকের পেছনে একটি গর্তে জীবন্ত দাফন করার কথা বলেন। আমরা তখন তাদের আবার দড়ি এবং আঠাযুক্ত টেপ দিয়ে বেঁধে ফেলি।
এসময় ওই ব্যক্তি তার পিকআপ ভ্যান নিয়ে এলে আমরা তিনজনে মিলে ওই শ্রমিকদের ভ্যানে উঠাই এবং আড়াই মিটার গভীর খাদের মধ্যে তাদের পরিচয় পত্রসহ পুঁতে ফেলি।
তিনি আরো বলেন, আমরা মাগরিবের নামাজের সময় সেখান থেকে চলে আসি আর ওই ব্যক্তি সেখানে রয়ে যান।
তদন্তকারী দল ঘটনাটি ২০১০ সালে ঘটেছে বলে নিশ্চিত হয়েছে। উদ্ধার করা লাশগুলোর হাত ও পা দড়ি দিয়ে এবং মুখের ভেতর কাপড় ঢুকিয়ে টেপ দিয়ে বাঁধা ছিল। লাশের সঙ্গে পাওয়া পরিচয়পত্র দেখে তদন্তকারী দল নিশ্চিত হয়েছে উদ্ধার করা কঙ্কালগুলো ভারতীয় নাগরিকের।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় একটি প্রভাবশালী পত্রিকায় এ ঘটনা প্রকাশ হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।