দুর্নীতিবাজ সরকারকে হটাতে হবে: খালেদা জিয়া
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নতুন প্রজম্মের কাছে দেশ রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জালেম, মিথ্যাচারী, দুর্নীতিবাজ সরকারকে সরিয়ে দিতে হবে। দেশের শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। আর এই কাজে সহযোগিতা করবেন আপনারা যাদের বয়স হয়েছে। নতুন প্রজন্মের পাশে এসে দাঁড়াবেন। তাদের বুদ্ধি, পরার্মশ দিয়ে সহযোগিতা করবেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় খালেদা জিয়া রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এই সমাবেশ ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়।
তিনি বলেন, আমি সারাজীবন কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি, যতক্ষণ বেঁচে আছি ততক্ষণ করব না। দেশ রক্ষা, দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র রক্ষায় আপনাদের পাশে আছি থাকব।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগ মেনে নেয়নি। কিন্ত তারা না মানলেও সারা পৃথিবী এবং দেশের মানুষ জিয়ার স্বাধীনতা মেনে নিয়েছে। প্রকৃত ইতিহাস যখন লেখা হবে সেখানে জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক ও দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার নাম লিপিবিদ্ধ থাকবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
বেগম জিয়া বলেন, এই দেশ চিরদিনের জন্য শৃঙ্খলিত হলে তা আমরা দেখতে পারব না। তাই আমি সকলকে বলব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে এই সরকারকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে। আর এ জন্য দরকার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
দেশব্যাপী এই সরকারের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিটি জেলায় আমাদের নেতাকর্মীদের খুন, গুম করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত সারাদেশে নিহত হয়েছেন ৩০৪ জন এবং গুম হয়েছেন ৫৬ জন নেতাকর্মী।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বার্বভৌমত্ব স্বীকার করে না। তারা বিএনপিকে শেষ করে দিয়ে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু সেটা হতে দেওয়া হবে না। চোখ বন্ধ করে আমরা দেখব না। সময় আসবে, তখন বাধ্য হবে জনগণের কাছে মাথানত করতে।
তিনি পার্শ্ববর্তী দেশের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আমরা জানি না এই সরকার তাদের সঙ্গে কী এগ্রিমেন্ট করেছে। সংসদেও তারা এ বিষয়ে তোলেনি। সংসদে কোনো আলোচনা হয়নি। তাই এসব এগ্রিমেন্ট বাদ দেওয়া হবে। কিছুই থাকবে না।
বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, অন্যের সহযোগিতা বা আদালতের কথায় আজীবন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।
তিনি বলেন, রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে, এক দেশের শৃঙ্খল ভেঙ্গে অন্য দেশের শৃঙ্খলবদ্ধ হতে আমরা চাই না। আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে। ভাবছেন অন্যের সহযোগিতায় আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন আর অন্য দেশের আশ্রিত থাকবেন, এটা হবে না।
মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হোক তা আমরা সবসময় বলে এসেছি। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ যেভাবে মানুষ খুন, গুম করছে এগুলোতো মানবতাবিরোধী অপরাধ। এর জন্য তাদের একদিন জবাবদিহী করতে হবে। আদালতের কাঠগড়ায় তাদের দাঁড়াতে হবে।
তাই আমি বলব, এখনও খুন, গুম বন্ধ করেন। কারণ দেশের মানুষ শান্তি চায়, উন্নয়ন চায়, দেশে গণতন্ত্র চায়, কাজ চায়, শান্তিতে ঘুমাতে চায়।
দেশে বিরোধী দল বলে কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, রওশন এরশাদ আজ বলেছেন তিনি চাপে পড়ে নির্বাচন করেছেন। এখন কেবল বলা শুরু করেছেন। আরও চাপ যখন আসবে তখন তিনি বলা শুরু করবেন ভেতরে আরও কী হয়েছে।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করাকে আবারও সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল দাবি করে বেগম জিয়া বলেন, দেশের মানুষ এখন জেনেছে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না। ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন ও বর্তমানে উপজেলা নির্বাচন তার প্রমাণ বহন করছে।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দিকে যেরকম হয়েছে সেখানে বিএনপি এগিয়ে ছিল। কিন্তু পরের নির্বাচনগুলোতে তারা ভোট কেন্দ্র দখল করেছে, রাতের মধ্যেই ভোট শেষ। আর এসবে সহযোগিতা করেছে পুলিশ, বিজিবি আর আনসার সদস্যরা।
এই সংসদ, সরকার ও তাদের নেওয়া সকল সিদ্ধান্ত এবং কাজ অবৈধ বলে দাবি করেন বেগম জিয়া।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে দেশের অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর ফলে দেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। আর কত বাধা দেবেন, কত গুলি করবেন।
এই সরকারের অধীনে ন্যায় বিচার, সুষ্ঠু নির্বাচন ও দেশের কল্যাণ হবে না। মানুষের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে। বিদেশে লোক নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে এই সরকারের অপকর্মের কারণে।
যাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে তারা হলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম), মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বিবিসিতে (ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন) কর্মরত সাংবাদিক সিরাজুর রহমান, ল্যান্স নায়েক আবুল হাসেম (বীর বিক্রম), ক্যাপ্টেন আবদুল হাই (বীর বিক্রম), মুক্তিযুদ্ধে ৯ নং সেক্টরের যুদ্ধে অংশ নেওয়া নারী মুক্তিযোদ্ধা আলম তাজ বেগম ছবি এবং মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম (বর্তমানে রিকশাচালক)।
যাদের ক্রেস্ট ও ১ লাখ টাকার অনুদানের চেক দেওয়া হয়েছে তারা হলেন নারী মুক্তিযোদ্ধা আলম তাজ বেগম ছবি এবং মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে বিকেলে সাড়ে ৩টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও সংবর্ধনা সভাটি শুরু হয়।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন এলডিপির চেয়ারাম্যান কর্নেল অব. অলি আহমেদ, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন, সাদেক হোসেন খোকা বীর উত্তম, শমসের মবিন চৌধুরী বীর উত্তম, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাজাহান ওমর বীর উত্তম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান লে. কর্নেল অব. সৈয়দ মো. ইব্রাহিম (বীর প্রতিক), মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল প্রমুখ।